রোহিঙ্গা গণহত্যা: মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা
রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে গাম্বিয়া। মিয়ানমার জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়ায় এই বিচার প্রক্রিয়া তাদের ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, গাম্বিয়ার বিচারবিষয়ক মন্ত্রী আবুবকর তামবাদউ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাম্বিয়া ও মিয়ানমার দুই দেশই ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী। এই কনভেনশন শুধু দেশগুলোতে গণহত্যা থেকে বিরত থাকা নয় বরং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধের জন্য বিচার করতে বাধ্য করে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মূলত জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলাটি হয়েছে বলে ১০টি বেসরকারি সংস্থা জানিয়েছে। এর মধ্যে এইচআরডব্লিউও রয়েছে।এইচআরডব্লিউর অ্যাসোসিয়েট ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস ডিরেক্টর পরমপ্রীত সিংহ বলেন, গাম্বিয়ার আইনি পদক্ষেপ বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালতে একটি আইনি প্রক্রিয়ার সূচনা করল। যেটা প্রমাণ করতে পারে, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নিষ্ঠুরতা জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে।
এই উদ্যোগকে সমর্থন করছে নো পিস উইদাউট জাস্টিস, ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর কন্সটিটিউশনাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস, দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস ও গ্লোবাল জাস্টিস সেন্টারের মতো সংস্থাও।নো পিস উইদাউট জাস্টিসের পরিচালক অ্যালিসন স্মিথ বলেন, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া কিছুদিন আগে একনায়কতান্ত্রিক শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে। এমন একটি দেশ যে রোহিঙ্গা গণহত্যার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েছে, তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
অন্য দেশগুলোর উচিত এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফেডারেশনের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক আন্দ্রেয়া গিওরগেটা বলেন, গাম্বিয়ার করা মামলা মিয়ানমারের ওপর ‘সহিংসতার পথ ত্যাগ করা এবং দোষীদের শাস্তি দেয়ার জন্য’ চাপ সৃষ্টি করতে পারে।২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সমর্থিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক তথ্য অনুসন্ধানী (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং) মিশন সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা ও নানা ধরনের বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
গণহত্যা ঠেকানো, তদন্ত করা এবং এর শাস্তির আইন করার ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে মিয়ানমার সরকার। মিশন বলেছে, নারীদের ওপর ধর্ষণ চালানো হয়েছে, এর প্রকৃতি ও মাত্রা থেকেই বোঝা যায় মিয়ানমারের ইচ্ছা ছিল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করা।
বাংলাদেশ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, নাইজেরিয়া, তুরস্ক ও ফ্রান্স জোর দিয়ে বলেছে, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার গণহত্যা চালিয়েছে। মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সংস্থা ওআইসি তার ৫৭ সদস্য দেশকে উৎসাহিত করেছে, যেন তারা মিয়ানমারকে কাঠগড়ায় ওঠায়।ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) বা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে প্রথম জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘনের দায়ে ১৯৯৩ সালে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এতে প্রমাণ হয়েছিল, বসনিয়া হার্জেগোভিনিয়ায় গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছিল সার্বিয়া।
দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোশেভিচকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দেশটির ১৬০ জনের বেশি ব্যক্তি এই আদালতে অভিযুক্ত হয়েছিল।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.