সিরিয়ার পুনর্গঠন ঠেকাতে তেল ডাকাতি যুক্তরাষ্ট্রের!
সিরিয়ায় আট বছরের গৃহযুদ্ধ প্রায় শেষের পথে। জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের আপাতত পতন হয়েছে। এক সময়ের ঘোর শত্রু বিদ্রোহীগোষ্ঠী কুর্দিরা এখন সিরীয় সরকারের কৌশলগত মিত্র।বিরোধীদের নিয়ে দেশের বিধ্বস্ত অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ। কিন্তু কোনোভাবেই সিরিয়ার এই পুনর্গঠন চায় না যুক্তরাষ্ট্র।
আর এজন্যই দেশটির তেলক্ষেত্রগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে থেকে কোটি কোটি ডলারের তেল ‘ডাকাতি’ করে নিয়ে যাচ্ছে। যাতে দেশ গড়তে প্রয়োজনীয় অর্থ না পায় সিরীয়রা।সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েও সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘সিরিয়ার তেলক্ষেত্রগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিতে পাহারা দিচ্ছে তার সেনারা।
আরও সেনা ও যুদ্ধ সরঞ্জাম পাঠানোর কথা বলেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার। সম্প্রতি ব্রাসেলসে সামরিক জোট ন্যাটো সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।মার্কিন সেনাপ্রভাবশালী গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল রিসার্চ বলছে, ‘তেলক্ষেত্রে পাহারা ও সুরক্ষা’র নামে ট্রাম্প প্রশাসন আসলে পরিকল্পিতভাবে সিরিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদ লুটে নিচ্ছে। চলতি সপ্তাহে সিরিয়ার অন্যতম মিত্র রাশিয়াও ওয়াশিংটনের তেল চুরির তথ্য জানিয়েছে।
ওই তেলক্ষেত্রগুলো বর্তমানে কুর্দিদের দখলে রয়েছে। এখন সেগুলোর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।গ্লোবাল রিসার্চের প্রতিবেদন মতে, সিরিয়ার তেল নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে প্রধানত তিনটি লক্ষ্য অর্জন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমত, আট বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে পুরো দেশের ভূখণ্ড দামেস্কের অধীনের আনার চেষ্টা করছেন প্রেসিডেন্ট আসাদ।
তার এই পুনর্গঠন চেষ্টা নস্যাৎ করা। দ্বিতীয়ত, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ রোধ করা এবং তৃতীয়ত, তেল নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে ফের কুর্দিদের হাতের মুঠোয় আনা যাতে দামেস্কের সঙ্গে একীভূত হওয়ার লক্ষ্যে সিরিয়া ও রাশিয়ার সঙ্গে তারা কোনো চুক্তিতে না যেতে পারে।
সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছে রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরান। চলতি সপ্তাহেই এক্ষেত্রে তারা আরও একধাপ এগিয়েছে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিরোধীদেরকে নিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়নে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে।আগামী বছরই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের প্রত্যাশা করছে বিরোধী পক্ষগুলো। ঐকমত্যের সরকার এখন শুধু সময়ের অপেক্ষামাত্র।
তেলক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সিরিয়ার এই শান্তি প্রচেষ্টা নস্যাৎ করাও ওয়াশিংটনের অন্যতম উদ্দেশ্য।নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠায় চুক্তি স্বাক্ষর হলেও সিরিয়ার পুনর্নির্মাণে প্রয়োজনীয় অর্থের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।এতে আসাদ সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে পারে, যা নতুন সংকট তৈরি করবে। এমনকি সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ফের হুমকি মুখে পড়তে পারে।
এমন সংকট সৃষ্টির যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য। সিরিয়া নিয়ে ওয়াশিংটনের এই নীতির কড়া সমালোচনা করেছে মস্কো। এটাকে ট্রাম্প প্রশাসনের গোঁয়ারতুমি ও অবৈধ নীতি বলে অভিহিত করেছে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.