সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    সালমান শাহ’র মৃত্যুর প্রতিবেদন আদালতে, পরিবারের প্রত্যাখ্যান!

    সালমান শাহ’র মৃত্যুর প্রতিবেদন আদালতে

    বাংলা সিনেমার এক সময়কার জনপ্রিয় নায়ক সামলান শাহ’র মৃত্যু নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম প্রতিবেদনটি জমা দেন।
    আগামী ৩০ মার্চ এ মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। ওইদিন ৬০০ পাতার প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করা হবে। এদিকে পিবিআইয়ের এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে সালমান শাহ’র পরিবার। প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ।
    প্রতিবেদনে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে পারিবারিক কলহ আর স্ত্রী সামিরার কারণে মা নিলুফা চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরীকে ছেড়ে দূরে থাকার মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেই অভিমানী সালমান শাহ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
    আদালত সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটন রোডে নিজের বাসা থেকে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমনের ওরফে সালমান শাহ’র লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সালমানকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়।
    অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি।
    সেখানে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করা হলে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত।
    ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। সেখানেও সালমানের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং পরে নারাজি আবেদন করেন। আবেদনে আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন সালমান শাহ’র হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা বলা হয়।
    আদালত নারাজি আবেদনটি মঞ্জুর করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন। ওই বছরের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক ইমরুল কায়েশ রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে র‌্যাব মামলাটি আর তদন্ত করতে পারবে না বলে আদেশ দেন।
    সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট লস্কর সোহেল রানা মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। আগের প্রতিবেদনগুলোর মতো পিবিআইয়ের প্রতিবেদনেও সালমান শাহ আত্মহত্যাই করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
    তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদন করবে পরিবার : পিবিআইয়ের এ প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তি তুলেছেন সালমান শাহ’র পরিবার। তার মা নীলা চৌধুরী বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘এটা একটা মনগড়া প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদন আমি মানি না, কখনও মানবও না। প্রতিবেদনে যে সাক্ষীর কথা বলা হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ সাজানো। দেশে ফিরে এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। তবে এর আগে আমরা পারিবারিকভাবে বসব।’
    পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে সালমান শাহ’র মামা চিত্রপরিচালক আলমগীর কুমকুম বলেন, এটা মনগড়া প্রতিবেদন। আমার প্রশ্ন হল, সালমান শাহ হত্যা মামলার রাজসাক্ষী তার মামি শাশুড়ি রুবি সুলতানা।
    তাকে যখন সিআইডিতে তলব করে, তার কোনো প্রশ্নের উত্তর নেয়া হয়নি। তার উত্তরগুলো দিয়ে দিচ্ছিলেন সামিরার বাবা শফিকুল হক হীরা। রুবি সুলতানা এখন আমেরিকায়। পিবিআই কি তার সাক্ষ্য ছাড়াই তদন্ত প্রকাশ করতে পারে? এ রকম আরও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। যেগুলোর উত্তর এই তদন্ত প্রতিবেদনে নেই।’
    তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেদনটি নিয়ে আমি ওর মায়ের (নীলা চৌধুরী) সঙ্গে কথা বলেছি। উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা বলেছি। ও দেশে ফিরলে তারপর সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে।’
    এদিকে সালমান হত্যা মামলায় আসামি হিসেবে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অভিনেতা আশরাফুল হক ডনের নামও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে তাকে দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডন বলেন, ‘আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। অবশেষে কলিজার বন্ধুকে হত্যার মিথ্যা অভিযোগ থেকে মুক্ত হলাম। শুরু থেকেই আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। দীর্ঘ ২৪টি বছর বুকের ভেতর বন্ধু হত্যার মিথ্যা অপবাদ আমাকে নিয়ে ঘুরতে হয়েছে। আমার যে ক্ষতি হয়েছে তার পূরণ কিছুতেই হবে না। আমি ধৈর্য ধরে ছিলাম। সত্য কোনোদিন মিথ্যা হয় না। মিথ্যাকেও কোনোদিন জোর করে সত্যি বানানো যায় না।’
    এদিকে মৃত্যুর আগে চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে সালমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। এই সম্পর্কের জের ধরে সালমান আত্মহত্যা করেছে।
    প্রতিবেদনে উল্লেখিত এ বিষয়টির তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শাবনূর। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন।
    তার এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে শাবনূর যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাকে কেন এসবের সঙ্গে জড়ানো হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি না। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি- সালমান শুধু আমার ছবির নায়ক ছিল। একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে যতটা বন্ধুত্ব হয় একটা মানুষের মধ্যে সেটাই ছিল আমাদের। আমাকে ছোট বোন হিসেবে দেখত। এর বাইরে কিছু নয়। সে যদি আত্মহত্যাও করে, তাহলে আমার কারণে কেন করবে! একজন মৃত মানুষের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে যে কথা বলা হয়েছে সেটা একেবারেই অশোভনীয়। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
    সালমানের মৃত্যুর আগেও এফডিসিতে ডাবিং ফ্লোরে সন্ধ্যায় শাবনূরের সঙ্গে মনোমালিন্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই শাবনূর বলেন, ‘শুধু সেদিন কেন, কখনই আমার সঙ্গে তার কোনো মনোমালিন্য হয়নি। তার স্ত্রী সামিরার সঙ্গেও আমার একটা ভালো সম্পর্ক ছিল। আমাদের মধ্যে যদি কোনো প্রেমের সম্পর্ক থাকত তাহলে সে সময় কেউ তো বলতে পারত। কিন্তু তখন না বলে এখন কেন বলা হচ্ছে?’
    দেশে ফিরে পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে কোনো কিছু করবেন কিনা জানতে চাইলে শাবনূর বলেন, ‘এখনই দেশে ফেরার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে যখন ফিরব তখন পরিস্থিতি কী থাকবে সেটা এখনই বলতে পারছি না।’
    পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সালমানের স্ত্রী সামিরা বলেন, আমি অসুস্থ। বিষয়টি নিয়ে এখনই কোনো কথা বলতে চাই না। সুস্থ হলে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরব।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !