বিরাম চিহ্ন বা যতি চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন!
বিরাম চিহ্ন : বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করার জন্য বাক্য উচ্চারণের সময় বাক্যের মাঝে ও শেষে বিরতি দিতে হয়। এই বিরতির পরিমাণ প্রয়োজন অনুযায়ী কম-বেশি হয়ে থাকে। আবার বাক্য উচ্চারণের সময় বিভিন্ন আবেগের জন্য উচ্চারণ বিভিন্ন হয়ে থাকে। বাক্যটি লেখার সময় এই বিরতি ও আবেগের ভিন্নতা প্রকাশ করার জন্য যেই চিহ্নগুলো ব্যবহার করা হয়, তাদেরকে বিরাম চিহ্ন বা যতি চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন বলে।
প্রাচীন বাংলায় মাত্র দুইটি বিরাম চিহ্ন ব্যবহার করা হতো, দাঁড়ি (।) ও দুই দাঁড়ি (॥)। পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ইংরেজি ভাষার অনুকরণে বাংলায় আরো অনেকগুলো বিরাম চিহ্ন প্রচলন করেন। বর্তমানে ব্যবহৃত বিরাম চিহ্নগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিরাম চিহ্ন নিচে দেয়া হলো-
যতি চিহ্নের নাম |
আকৃতি
|
বিরতির পরিমাণ
|
কমা
|
,
|
১ বলতে যে সময় লাগে
|
দাঁড়ি/ পূর্ণচ্ছেদ
|
।
|
এক সেকেন্ড
|
জিজ্ঞাসা বা প্রশ্নসূচক চিহ্ন
|
?
|
এক সেকেন্ড
|
বিস্ময়সূচক বা আশ্চর্যবোধক চিহ্ন
|
!
|
এক সেকেন্ড
|
ড্যাস
|
-
|
এক সেকেন্ড
|
কোলন ড্যাস
|
:-
|
এক সেকেন্ড
|
কোলন
|
:
|
এক সেকেন্ড
|
সেমি কোলন
|
;
|
১ বলার দ্বিগুণ সময়
|
উদ্ধরণ বা উদ্ধৃতি চিহ্ন
|
‘ ’/ ‘‘ ’’
|
এক সেকেন্ড
|
হাইফেন
|
-
|
থামার প্রয়োজন নেই
|
ইলেক বা লোপ চিহ্ন
|
’
|
থামার প্রয়োজন নেই
|
বন্ধনী চিহ্ন
|
( )
|
থামার প্রয়োজন নেই
|
{ }
| ||
[ ]
| ||
দুই দাঁড়ি
|
॥
| |
ত্রিবিন্দু বা ত্রিডট
|
...
|
বিরাম চিহ্নে ব্যবহার
কমা (,)
- বাক্য সুস্পষ্ট করতে বাক্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে প্রতিটি ভাগের মাঝে কমা বসে। যেমন- সুখ চাও, সুখ পাবে বই পড়ে।
- পরস্পর সম্পর্কিত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসঙ্গে ব্যবহৃত হলে শেষ পদটি ছাড়া প্রতিটির পরে কমা বসে। যেমন- ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মন সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, ভালবাসা, আনন্দে ভরে থাকে।
- সম্বোধনের পরে কমা বসে। যেমন- রশিদ, এদিকে এসো।
- জটিল বাক্যের প্রত্যেকটি খন্ডবাক্যের পরে কমা বসে। যেমন- যে পরিশ্রম করে, সেই সুখ লাভ করে।
- কোন বাক্যে উদ্ধৃতি থাকলে, তার আগের খন্ডবাক্যের শেষে কমা (,) বসে। যেমন- আহমদ ছফা বলেন, ‘মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ।’ তুমি বললে, ‘আমি কালকে আবার আসবো।’
- মাসের তারিখ লেখার সময় বার ও মাসের পর কমা বসে। যেমন- ২৫ বৈশাখ, ১৪১৮, বুধবার।
- ঠিকানা লেখার সময় বাড়ির নাম্বার বা রাস্তার নামের পর কমা বসে। যেমন- ৬৮, নবাবপুর রোড, ঢাকা- ১০০০।
- ডিগ্রী পদবি লেখার সময় কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন- ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক, এম,এ, পি-এইচ,ডি।
কমা-র চেয়ে বেশি কিন্তু দাঁড়ি-র চেয়ে কম বিরতি দেয়ার জন্য সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন-
আমরা সবাই সবাইকে ভালবাসি; আসলেই কি সবাই ভালবাসি?
আমরা সবাই সবাইকে ভালবাসি; আসলেই কি সবাই ভালবাসি?
- এক ধরনের বাক্যন্তর্গত চিহ্ন
- একাধিক স্বাধীন বাক্যকে একটি বাক্যে লিখলে সেগুলোর মাঝখানে সেমিকোলন বসে
- বক্তব্য স্পষ্ট করার জন্য সমজাতীয় বাক্য পাশাপাশি প্রতিস্থাপন করলে সেমিকোলন বসে
প্রতিটি বাক্যের[] শেষে দাঁড়ি ব্যবহৃত হয়। দাঁড়ি দিয়ে বাক্যটি শেষ হয়েছে বোঝায়। যেমন-
আমি কাল বাড়ি আসবো।
আমি কাল বাড়ি আসবো।
প্রশ্নবোধক বাক্যের[] শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন-
তুমি কেমন আছ?
তুমি কেমন আছ?
বিস্মিত হওয়ার অনুভূতি প্রকাশের জন্য কিংবা অন্য কোন হৃদয়ানুভূতি প্রকাশের জন্য এই চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন-
আহা! কী চমৎকার দৃশ্য।
ছি! তুমি এত খারাপ।
হুররে! আমরা খেলায় জিতেছি।
আহা! কী চমৎকার দৃশ্য।
ছি! তুমি এত খারাপ।
হুররে! আমরা খেলায় জিতেছি।
আগে সম্বোধনের পরেও বিস্ময়সূচক চিহ্ন ব্যবহার করা হতো। কিন্তু আধুনিক নিয়ম অনুযায়ী সম্বোধনের পরে কমা বসে। তাই পুরোনো লেখায় সম্বোধনের পরে বিস্ময়সূচক চিহ্ন থাকলেও এখন এটা আর লেখা হয় না। যেমন-
জননী! আজ্ঞা দেহ মোরে যাই রণস্থলে।
জননী! আজ্ঞা দেহ মোরে যাই রণস্থলে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.