বিশ্বজুড়ে তৈরি হচ্ছে করোনার ২০ টিকা!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, করোনাভাইরাস ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে অন্তত ২০টি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে ডব্লিউএইচও নিবিড় যোগাযোগ রাখছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আবিষ্কৃত হবে কোভিড-১৯ প্রতিরোধের ভ্যাকসিন।ডব্লিউএইচও’র কর্মকর্তাদের বরাতে সিএনবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে নতুন করোনাভাইরাসের ২০টি ভিন্ন ভিন্ন ভ্যাকসিন তৈরি করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে কিছু ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে। এটিও এক ধরনের রেকর্ড। এত কম সময়ে আগে কখনও কোনো রোগের ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করা যায়নি।কোভিড-১৯-এর জিন সিকোয়েন্স তৈরির মাত্র ৬০ দিনের মাথায় এসব ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, জনসাধারণের ব্যবহারের উপযোগী ওষুধ বানাতে আরও বহু পথ পাড়ি দিতে হবে।
পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য গবেষণা শেষে একটি নিরাপদ ওষুধ তৈরি করতে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক মাইক রায়ান বলছেন, ‘এত দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরির কাজ এগিয়ে নেয়া কখনই সম্ভব হতো না, যদি না চীন ও অন্যান্য দেশ কোভিড-১৯-এর জেনেটিক সিকোয়েন্স অন্যান্য দেশকে না জানাত।’
ডব্লিউএইচও’র প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান ড. মারিয়া ভ্যান কেরখোভ বলেন, ‘ভ্যাকসিন তৈরির এ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পারাটা সত্যিই নাটকীয়। আমাদের সামর্থ্যরে চেয়েও আমরা দ্রুতগতিতে এগোতে পারছি। আমরা সার্স নিয়ে কাজ করেছিলাম, মার্স নিয়ে কাজ করেছিলাম। এখন কোভিড-১৯ নিয়ে কাজ করছি।’
যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলক করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে। গত ১৬ মার্চ সিয়াটলের জেনিফার হলারের ওপর করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়। তিনি সেখানকার একটি স্টার্টআপের অপারেশনস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন।সিয়াটলের কায়সার পার্মানেন্তে ওয়াশিংটন রিসার্চ ইন্সটিটিউট থেকে মর্ডানাস এমআরএনএ-১২৭৩ নামের ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করেন হলার। তিনিই বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি, যার ওপর পরীক্ষামূলকভাবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পর চীন ও ব্রিটেনেও মানুষের ওপর করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার চীনা স্বেচ্ছাসেবীদের কোভিড-১৯-এর টিকা দেয়া হয়েছে। চীনের সামরিক বিজ্ঞানীরা এ টিকা তৈরি করেছেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়, চীনা স্বেচ্ছাসেবীদের প্রথম দলের সবাই উহানের অধিবাসী এবং তাদের বয়স ১৮ থেকে ৬০। এ দলকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং প্রতি ভাগে ৩৬ জন করে সদস্য রয়েছেন। রোববার পর্যন্ত তিন ধাপে ১০৮ জনের শরীরে এ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। টিকা দেয়ার পর ১৪ দিন তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।
এরপর টিকার জন্য তাদের শরীরে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় কিনা, তা নির্ণয়ের জন্য গবেষকরা ছয় মাস তাদের ওপর নজর রাখবেন। চীনা গণমুক্তি ফৌজ সামরিক চিকিৎসা একাডেমির একটি গবেষণা দল এ টিকা তৈরি করেছে।
গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেন জৈব হুমকি প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চেন উই। ইবোলার টিকা তৈরির সফলতার ভিত্তিতে কোভিড-১৯-এর টিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। এজন্য স্থানীয় কয়েকটি কোম্পানির সহায়তা নেয়া হয়েছে।
এদিকে ব্রিটেনে প্রথম ধাপে প্রাণীর ওপর করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ সফল হয়েছে। তবে এখনও ফলাফল পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় পর্যায়ে মানুষের ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ আগামী সপ্তাহে শুরু হবে বলে জানিয়েছে দেশটি।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এ ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। ইম্পেরিয়াল লন্ডন কলেজের অধ্যাপক রবিন শ্যাটক বলেন, প্রাণীর ওপর প্রয়োগের ফল বিবেচনায় নিয়ে মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হবে।
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে বহুদূর এগিয়েছেন রুশ বিজ্ঞানীরা। রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন জানিয়েছেন, দেশটির ডাক্তাররা ভ্যাকসিন আবিষ্কারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনার প্রতিষেধক হিসেবে ছয়টি ওষুধ আবিষ্কার করেছেন তারা।
এখন এসব ওষুধের ওপর পরীক্ষা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দেশের গবেষকরা এগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে আবিষ্কার করেছেন। এক্ষেত্রে আধুনিক বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতেই এ ভ্যাকসিন করোনাভাইরাস নিরাময়ে কাজ করবে
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.