করোনায় কলকাতায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সাংবাদিকের মৃত্যু
কলকাতায় নভেল করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। করোনায় রোববার এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও এক ফটোসাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাসে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২০ জনে। করোনা পজিটিভ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও অন্য অসুখে আরও ৩৯ জন মারা গেছেন।
এতে পশ্চিমবঙ্গে করোনায় প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা ৫৯। কিন্তু রাজ্য সরকার বলছে, করোনায় মারা গেছেন ২০ জন। এ নিয়ে প্রবল রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। রোববার পর্যন্ত টানা চার দিন পশ্চিমবঙ্গে র্যাপিড টেস্টে যত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে তার অর্ধেকের বেশি শনাক্ত হয়েছে কলকাতায়। এ পর্যন্ত কলকাতায় ১৮৯ জনের বেশি করোনা সংক্রমিত হয়েছেন।
রোববার কলকাতার সল্টলেকের আমরি হাসপাতালে রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বিপ্লব দাসগুপ্ত মারা গেছেন। তার বাড়ি কলকাতার বেহালা অঞ্চলে। তার স্ত্রীও করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এছাড়া এক দন্ত চিকিৎসকও করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাওড়ার বাসিন্দা ওই চিকিৎসকের বাবা ও বোনও করোনা আক্রান্ত হয়ে সঞ্জীবন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ইতোমধ্যে কলকাতার ৭৩ জন এমবিবিএস চিকিৎসক এবং ১৩ জন দন্ত চিকিৎসককে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
একইদিন কলকাতার আজকাল পত্রিকার ফটোসাংবাদিক রনি রায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ২৬ বছর ধরে মাঠে-ময়দানে ছবি তোলায় তার সুখ্যাতি ছিল। তার মৃত্যুতে আতঙ্কিত কলকাতার সাংবাদিকরা। রনির মৃত্যুতে শচীন টেন্ডুলকার শোক প্রকাশ করেছেন। রোববার কলকাতায় স্বাস্থ্যভবনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বেলগাছিয়া বস্তিতে শুরু হওয়া র্যাপিড টেস্ট শহরের বিভিন্ন হটস্পটে চালিয়ে যাওয়া হলে এতদিন শুধু কলকাতাতে করোনা রোগীর সংখ্যা ২০০ পেরিয়ে যেত। উল্লেখ, প্রথমদিন বেলগাছিয়া বস্তিতে র্যাপিড টেস্টে ১৪ জনের পরীক্ষা করায় দু’জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়।
পরদিন রাজাবাজার, বড়বাজার, জোড়াসাঁকো, পঞ্চসায়র, ঢাকুরিয়া রেল কলোনি, মেটিয়াবুরুজের মতো ঘিঞ্জি পল্লীতে ১০টি টিমকে র্যাপিড টেস্টের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু কেন্দ্রের পাঠানো করোনা কিট ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় দিল্লির নির্দেশে র্যাপিড টেস্ট বন্ধ করা হয়। দেশের সর্বাধিক জনঘনত্বের শহর কলকাতার করোনা পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিছু মানুষ ‘অবুঝ’ থাকায় বিপদ কাটছে না বলে স্বীকার করেছেন পুরমন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম। রাজ্যে যে সংখ্যক নতুন রোগীর সন্ধান মিলেছে বৃহস্পতিবার তার ৮০ শতাংশ ছিল কলকাতার। শুক্রবার ৫১ শতাংশ এবং শনিবার ২৮ শতাংশ।
এদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৮। উত্তর ও মধ্য কলকাতার পাশাপাশি তিন দিনে দক্ষিণেও নতুন ওয়ার্ডে করোনা আক্রমণের শিকার হয়েছেন। বেলেঘাটা, কাঁকড়গাছি, শ্যামবাজার, মানিকতলা, শ্যামপুকুর থেকে শুরু করে দক্ষিণে যোধপুর পার্ক, যাদবপুর, টালিগঞ্জ, বালিগঞ্জের মতো একাধিক এলাকায় নতুন রোগী চিহ্নিত হয়েছে। যোধপুর পার্ক বাজারের কাছে রহিম ওস্তাগার বস্তিতে এক দোকানি পরিবারের মহিলা করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।
এখন র্যাপিড টেস্ট বন্ধ থাকলেও পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সর্দি-জ্বর-কাশির রোগীর তালিকা তৈরি করায় নতুন করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। বস্তিবাসীরা অসুস্থতার তথ্য গোপন করার চেষ্টা করলেও থার্মাল স্ক্যানারে ধরা পড়ছে বলে দাবি করেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। কলকাতায় আক্রান্ত প্রত্যেক করোনা রোগীকে নিয়ে পৃথক মাইক্রোপ্ল্যানিং করে নজরদারি চালাচ্ছে পৌরসভা। আক্রান্তদের তালিকায় ঘিঞ্জি বস্তিবাসীদের সংখ্যা বেশি।
তবে এ তালিকায় একাধিক মেডিকেল কলেজ ও আইডি হাসপাতালের চিকিৎসক ও ইন্টার্ন এবং বহুতল ভবনের বাসিন্দা শিল্পকর্তারাও রয়েছেন। করোনা সংক্রমিত এক প্রসূতির মৃত্যুর জেরে উত্তর কলকাতার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের হেলথ সেন্টার বন্ধ আছে। পিপিই, গ্লাভস, মাস্ক দিলেও করোনার সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে পুরসভার কিছু হেলথ সেন্টারে চিকিৎসকরা যাচ্ছেন না। কিছু মানুষ লকডাউন মানছেন না তা স্বীকার করে মেয়র ফিরহাদ বলেন, নিঃশ্বাসে যে বিষ থাকতে পারে তা এখনও কেউ বুঝতে চাইছেন না। এ বিষ আটকাতে ঘরে থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। নিয়ম না মানলে শহরে সংক্রমণ কমবে না।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.