সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    কে হচ্ছেন কিম জং উনের উত্তরসূরি?

    0742867ef9b40c5ca340b5dbe0ea8945-5cb1927277137

    উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একজন আলোচিত ব্যক্তিত্ব।যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচক উন বিভিন্ন সময় আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন।কিছুদিন ধরে তিনি জনসম্মখে আসছেন না। তিনি জটিল অসুস্থতায় ভোগছেন।হার্টে জটিল অস্ত্রোপচারের পর সম্প্রতি গুঞ্জন রটে যায় যে, উত্তর কোরিয়ার এই একনায়ক আর নেই। যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্য বেশি কয়েকটি গণমাধ্যমও কিমের বেঁচে থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে।কিম জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এমন সংবাদ ছেপেছে তারা।   

    এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে কে হচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার নেতার উত্তরসূরী? এক্ষেত্রে তার বোনের নাম উঠে আসছে গণমাধ্যমে।  কিমকে নিয়ে প্রথম আলোচনা শুরু হয় গত ১৫ এপ্রিল। তার দাদা ও দেশটির প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুংয়ের জন্মদিনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যায়নি। তার এ অনুপস্থিতি নিয়ে শুরু হয় জোর গুঞ্জন। 

     এরপর উত্তর কোরিয়ার পক্ষ ত্যাগকারীদের মিডিয়া অনলাইন ডেইলি এনকে’র খবরে বলা হয়, হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচারের পর নর্থ পিয়ংগাও প্রদেশে কিমের চিকিৎসা চলছে।  দুদিন আগে হংকংয়ের একটি টেলিভিশনে আবার কিমের মৃত্যুর খবর আসে। একই সঙ্গে রয়টার্স জানায়, কিমের চিকিৎসার জন্য চীন থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠানো হয়েছে।যদিও চীন সেটি স্বীকার করেনি।  যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াগুলোতেও কিমের মৃত্যুর শঙ্কা নিয়ে সংবাদ ছাপা হয়।তবে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে জোরালোভাবে বলা হচ্ছে কিম বেঁচে আছেন।  কিমের অবর্তমানে উত্তর কোরিয়ার নেতা হিসেবে ভাবা হচ্ছে তার ছোট বোন কিম ইও জংকে।২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নজরে আসেন কিমের বোন ইও জং। 

    পরিবারের আরও অনেক সদস্যের মতোই কিম ইও জংও অনেকটাই রহস্যময় চরিত্র। আর উত্তর কোরিয়াও কিম পরিবারের সদস্যদের কোনো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে না। তাই তাঁর সম্পর্কে অনেক তথ্য রয়ে গেছে অজানা। ধারণা করা হয়, কিমের বোনের বয়স ত্রিশের কোঠায়। ফোর্বস ম্যাগাজিন বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে কিম ইও জংয়ের বিষয়ে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে। উত্তর কোরিয়ার সাবেক শাসক প্রয়াত কিম জং ইলের পছন্দের সন্তান কিম ইও জং। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, সুইজারল্যান্ডে পড়াশোনা করেছেন ইও জং।

     সেখানে ব্যালে নৃত্যকলায়ও তালিম নিয়েছেন। তিনি ২০০০ সালের শুরুর দিকে উত্তর কোরিয়া ফিরে আসেন। বেশ কয়েকটি মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে উনের মন্ত্রিসভায় কিম ইও জংয়ের যথেষ্ট প্রভাব আছে।তাই তাকেই কিমের যোগ্য উত্তরসূরী ভাবা হচ্ছে।  ‘উত্তর কোরিয়ার ইভানকা ট্রাম্প’ ডাকনামের কিম ইও জং গত মাসে বলেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার ভাইয়ের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে চলমান বিরোধ সত্ত্বেও ‘বিশেষ ও এবং দৃঢ় ব্যক্তিগত সম্পর্ক’ রয়েছে।  

    সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া এবং নিজের ভাইয়ের সম্মান রক্ষার্থে ইও জং সম্প্রতি তাঁর দেশের সামরিক মহড়ার বিরোধিতা করায় দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘ভীত কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে’ বলে তাচ্ছিল্য করেন।  ইও জংকে চলতি মাসের শুরুর দিকে উত্তর কোরিয়ার পলিটব্যুরোর বিকল্প সদস্য হিসাবে মনোনীত করা হয়, যা তাঁর ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার ইঙ্গিত বহন করে।  উত্তর কোরিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্রুস বেনেট ডেইলি বিস্টকে বলেন, ‘তিনি (ইও জং) একজন চৌকস নারী। তিনি তাঁর আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ হিসাব কষছেন। আড়ালে থেকে কাজ করে তিনি কতটা ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছেন, তা কে বলতে পারে?’  একজন বিশ্লেষকের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, ‘উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাধর অভিজাতদের মধ্যে কিম ইও জংয়ের ক্ষমতার উত্তরাধিকারী হওয়ার সুযোগ সবচেয়ে বেশি। আমি মনে করি, সে সম্ভাবনা ৯০ শতাংশেরও বেশি।’  

    তবে ক্ষমতা হাসিলের দৌড়ে ইও জং একা নন। এ ছাড়া উত্তর কোরিয়ার পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো ইও জংয়ের ক্ষমতাসীন হওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দেখা দিতে পারে। কেউ কেউ ধারণা করছেন, কিম পরিবারের বংশানুক্রমিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশটির আলংকারিক বা নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান চোই  রাঅং হাইয়ের নেতৃত্বে একটি সম্মিলিত শাসনব্যবস্থা বা রাষ্ট্র পরিচালনা পর্ষদ কার্যকর হলেও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কিম ইও জং হয়তো কেবল অন্তর্বর্তীকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রনেতা হিসেবে দায়িত্ব করবেন। তবে বলা বাহুল্য, কিম জং উনের মৃত্যু বা দেশ পরিচালনায় অক্ষমতার ওপরই সবকিছু নির্ভরশীল।  কিম জং উনের আসলে যে কী হয়েছে, তা এখনো অজানা। কিমকে সর্বশেষ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল গত ১১ এপ্রিল। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওদিন তিনি ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির নীতিনির্ধারণী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে একটানা কয়েক সপ্তাহের জন্য কিমের লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যাওয়া মোটেই অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।  এর আগেও শারীরিক সমস্যার কারণে জনসমক্ষে না আসার ইতিহাস কিমের রয়েছে। তবে এবার জল্পনার ডালপালা এতটাই ছড়িয়েছে যে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি মারা গেছেন কিংবা মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন।  

    তার আবার এমন উধাও হয়ে যাওয়ারও ইতিহাস আছে। এর আগে ২০১৪ সালে প্রায় এক মাস কোনো খবর ছিল না। হঠাৎ একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি সৈকতে হাঁটছেন।  এবার তার খবর না থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া শুরু থেকে দাবি করে, কোনো গোপন কাজ সামলাতে কিম কৌশলগত কারণে প্রকাশ্যে আসছেন না।  দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের বিদেশ নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা চুং-ইন মুন রোববার ফক্স নিউজকে বলেন, আমরা নিশ্চিত কিম জং-উন বেঁচে আছেন এবং ভালো আছেন। তিনি ১৩ এপ্রিল থেকে ওনসান এলাকায় অবস্থান করছেন। সন্দেহজনক কোনো আচরণ এখনো বোঝা যায়নি।  

    ৩৬ বছর বয়সী কিম প্রচুর ধূমপান করেন। তার পরিবারের হার্টের সমস্যার ইতিহাস আছে। ডেইলি বিস্টের প্রতিবেদনে উন মারা গেলে তার ছোট বোন কিম ইও জংয়ের নেতা হওয়ার কথা বলা হয়েছে।এতে বলা হয়েছে উত্তর কোরিয়ার সরকারের ওপর তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।  তবে উত্তর কোরিয়ার নেতার মৃত্যুর খবর প্রচার হচ্ছে অসমর্থিত সূত্রের বরাতে। আন্তর্জাতিক নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত কোনো সংবাদমাধ্যম এখনও তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি।  স্নপস ডট কমের খবরে বলা হয়েছে, উনের অস্ত্রোপচার সফল হয়নি।এমনকি তাকে অচেতন করেই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এ কারণে তার শারীরিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি হয়েছে।

     তিনি মৃত্যুর কাছাকাছি।  বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ অনেক সংবাদমাধ্যমও কিমের আশঙ্কাজনক অবস্থার খবর প্রচার করেছে। এদিকে নিউইয়র্ক পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কিমের মৃত্যুর বিষয়টি গুজব।  প্রকৃত ঘটনা হলো, চলতি মাসের শুরুতে এক দুর্গম গ্রামীন এলাকা সফরে গিয়ে মাটিতে পড়ে যান কিম। এরপর তার তার হার্টে সার্জারির প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া গত আগস্ট থেকে কিম হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। পায়েকতু নামের ওই পাহাড়ি এলাকা থেকে ঘুরে আসার পর থেকেই তার সেই সমস্যা আরও প্রকট হয়।  

    এদিকে বেইজিং সমর্থিত হংকং স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সহকারী পরিচালক দাবি করেছেন, কিম জং উন মারা গেছেন। তিনি এই খবরের পেছনে ‘খুব নিশ্চিত সূত্রের’ বরাত দেন। তার এমন পোস্ট চীনের জনপ্রিয় বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ উইবোতে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। তবে হংকং ব্রডকাস্ট নেটওয়ার্ক এই খবর ‘ভুয়া’ বলে জানিয়েছে।  দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি এনকে গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন গত ১২ এপ্রিল কার্ডিওভাসকুলারের অস্ত্রোপচার করেছেন বলে খবর দেয়। উত্তর কোরিয়ার অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে কিমের অসুস্থতার এই খবর দেয় ডেইলি এনকে। 

    তবে পরে অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিমের আশঙ্কাজনক অবস্থার খবর প্রকাশ পায়।  বার্তা সংস্থা রয়টার্স শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জন উনকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে দেশটিতে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল পাঠিয়েছে চীন। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ এক সদস্যের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞটি দলটি বৃহস্পতিবার দেশ ছেড়েছে।  

    তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় ওই উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করা ওই প্রতিনিধি দল তাদের পরিচয় প্রকাশে অস্বীকৃতি জানান। তবে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।  জাপানি সংবাদমাধ্যম সুখান গেন্দাই, কিমের হার্ট অপারেশনের বিস্তারিত জানিয়ে বলছে, অপারেশনের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা কিম জং উনকে অজ্ঞান করেননি। আর অপারেশনের সময় তিনি প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই কারণে অস্ত্রোপচার বিলম্বিত হওয়ার এক পর্যায়ে অচেতন অবস্থায় চলে যান কিম। 

     কিমের স্বাস্থ্যের অবনতি গুঞ্জন চাউর হলেও উত্তর কোরিয়ার কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম এ নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা কেসিএনএ ও রাষ্ট্রায়ত্ত দৈনিক রোদং সিনমুন, কিম জং উন কোথায় আছেন কিংবা তার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেনি।  এদিকে উত্তর কোরিয়ার মিডিয়া আজ সংবাদ ছেপেছে যে কিম সুস্থ আছেন। তিনি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !