যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতকে মানবকল্যাণের চেয়ে ব্যবসা হিসেবে দেখা হয় বেশি
নিঃসন্দেহে এ শতাব্দীতে এখন পর্যন্ত এ পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হচ্ছে বিভিন্ন দেশে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। worldometer.info প্রকাশিত এখন পর্যন্ত সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী সারা পৃথিবীর ২০৫টি দেশে সব মিলিয়ে ১২,১০,৪৩৯ জন এ ভাইরাস প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের প্রভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৫,৪৪৯ জন। চীনের উহান থেকে আরম্ভ করে ইতালি, স্পেন, সুইডেন, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর এমন কোন দেশ নেই যেখানে এ ভাইরাস বিস্তার লাভ করেনি। সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের তুলনায় এ ভাইরাস অতি দ্রুত বিস্তার লাভ করে। আর এ কারণে দেখা যায় যে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে উপযুক্ত কয়েক হাজার এমনকি কয়েক লক্ষ মানুষও আক্রান্ত হতে পারে। নোভেল করোনা ভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাস যার দরুন এ ভাইরাস দ্রুত তার টাইপ পরিবর্তন করতে পারে। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাস প্রতিরোধে কোনও কার্যকরী ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। নেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য সঠিক কোনও চিকিৎসা। তাই বাধ্য হয়ে যে কোন দেশের সরকারকে জনসাধারণের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হয়। সবাইকে বাধ্যতামূলক ঘরে অবস্থানের জন্য নির্দেশ দিতে হয় এবং জনসমাগম হ্রাস করার জন্য স্কুল, কলেজ কিংবা ইউনিভার্সিটিসহ সকল ধরণের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট, বার, গণপরিবহন সেবা এমনকি বিভিন্ন ফ্যাক্টর বন্ধ রাখতে হয়।
ফলে একদিকে যেমন মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হচ্ছে সারা পৃথিবীতে অন্যদিকে পৃথিবীর অর্থনীতিতে একটি বড় ধাক্কা নেমে আসছে এ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে। অনেক মানুষ ইতোমধ্যে তাদের চাকরি হারিয়েছেন, অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে এবং অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সাধারণভাবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো সব দিক থেকে স্বচ্ছল হওয়ায় এবং তাদের কাছে পর্যাপ্ত রিসোর্স থাকায় অনেকটা সহজে তারা এ সঙ্কট কাঁটিয়ে উঠবে। তবে বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরণের সঙ্কট কাঁটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আজকের দিনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ যে কোন কারণে একে-অপরের সঙ্গে সংযুক্ত আর এ কারণেই দেখা যায় যে জীবিকা কিংবা উচ্চশিক্ষা কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য যে কোন কারণে মানুষ পৃথিবীর এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করে। অনেকেই আবার সে দেশে স্থায়ী হয়। সাধারণত মানুষ সে দেশেই যাতায়াত করে যে দেশটি তার নিজের দেশের থেকে অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ যাবতীয় ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃতভাবে উন্নত। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র আর এ কারণে আমাদের বাংলাদেশ থেকেও অনেক মানুষের প্রবণতা থাকে উন্নত কোনো দেশে পাড়ি জমানো। প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে থাকার কারণে এবং আজকের পৃথিবীর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমাদের সবাইকে ক্লাস ওয়ানে থাকতেই ইংরেজি শিখতে হয় এবং ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনও বিদেশি ভাষা সাধারণত আমাদের দেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে শেখানো হয় না।
এজন্য আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ আমাদের নিজ মাতৃভাষার সঙ্গে সঙ্গে এ একটিমাত্র বিদেশি ভাষা শেখার সুযোগ পাই। আর এ কারণে আমাদের দেশ থেকে যখন কেউ বাইরের কোন দেশে পাড়ি জমাতে চান তখন সবাই প্রথমে বিবেচনায় নিয়ে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ডে সকল দেশকে। কেননা এ সকল দেশের মানুষের মাতৃভাষা ইংরেজি, যার দরুন এ দেশে তৃতীয় কোন ভাষা শিখার প্রয়োজন পড়ে না। ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইতালি, স্পেন এমনকি নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড এ সকল দেশের প্রায় সকলে যদিও ইংরেজিতে দক্ষতার মাপকাঠি বিবেচনায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যে দেশের মাতৃভাষা ইংরেজি নয় সে সকল দেশের মধ্যে শীর্ষে থাকলেও বাস্তবে যখন আপনি কোন কাজ খুঁজতে চাইবেন কিংবা দৈনন্দিন জীবনে অনেকক্ষেত্রে চলাচলের জন্য নিজস্ব ভাষা শিখতে হবে। অন্যদিকে আমাদের দেশের মানুষের কাছে কেন জানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এ দেশগুলো নিয়ে আলাদা ফ্যান্টাসি কাজ করে এবং মানুষ এ সকল দেশকে বিশেষ গুরুত্বের চোখে দেখে, যেটা অন্য দেশের ক্ষেত্রে হয় না। উন্নত জীবন কিংবা অপেক্ষাকৃত উচ্চ আয়ের পাশাপাশি মানুষের কিছু স্বাভাবিক কিন্তু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় চাহিদা রয়েছে যেটা আমরা বিবেচনায় নিয়ে আসি না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ অস্ট্রেলিয়া। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়াতে বর্তমানে ৫ লাখেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে পাড়ি জমিয়েছেন উচ্চশিক্ষার জন্য।
পাশাপাশি আরও প্রায় ১০ লাখের বেশি অস্থায়ী ভিসাধারী রয়েছেন যাদের অনেকে ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে অস্ট্রেলিয়াতে বসবাস করছেন এবং এদের অনেকে অস্ট্রেলিয়াতে নিজস্ব ব্যবসা কিংবা পেশাভিত্তিক জীবিকার সঙ্গে জড়িত। সন্দেহাতীতভাবে অস্ট্রেলিয়ার সরকারকে তারা ট্যাক্সও দিয়ে থাকেন, কিন্তু সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে অস্ট্রেলিয়া সরকারের ঘোষিত সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তারা কেউ নেই। অথচ এ ধরণের পরিস্থিতিতে সবাই সামাজিক সুবিধা পাওয়ার দাবি রাখে। আবার আমরা যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কথা চিন্তা করি, সন্দেহ নেই যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজকে দিনের পৃথিবীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে প্রতিপত্তিশালী রাষ্ট্র এবং অর্থনৈতিক, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, উন্নত জীবন ব্যবস্থা সকল দিক বিবেচনায় এ দেশটি এখন পর্যন্ত অদ্বিতীয়। কিন্তু আপনারা কী জানেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে? ২০১৮ সালের জুন মাসের দিকে বোস্টনের একটি রেলওয়ে স্টেশনে ৪৫ বছর বয়সী এক নারী দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন। ট্রেন থেকে নামার সময় তার পা ট্রেন আর প্ল্যাটফর্মের মাঝখানে আটকে যায়। এতে তার পায়ে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং অস্থি বের হয়ে আসে। এ সময় তিনি প্রচণ্ড ব্যথায় কান্না করছিলেন। কিন্তু তার যে শুধু পায়ের ব্যথাতেই কান্না পাচ্ছিলেন, এমনটিও নয়। আশেপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ডাকার চেষ্টা করে। কিন্তু তখন ওই নারী তাদের বাধা দেন। কারণ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যয়ভার বহন করার সামর্থ্য তার নেই। প্রচণ্ড ব্যথার মাঝে তার এ আকুতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। প্রশ্ন ওঠে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা ব্যবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত খরচ এবং সে দেশের জনসাধারণের দেশটির হেলথ কেয়ারে অ্যাকসেসের সামর্থ্য নিয়ে। অন্যান্য দেশের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেকটা ভিন্ন ধরণের এবং জটিল। সেখানে স্বাস্থ্যখাতকে মানব কল্যাণের চেয়ে একটি মাল্টি বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হিসেবে দেখা হয়। আর এই ব্যবসাটি হয় তাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য বীমা থেকে। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমীয় অঙ্গরাজ্য বিশেষ করে টেক্সাস, লুইজিয়ানা, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিসিসিপি এ সকল অঙ্গরাজ্যে গান ক্রাইমের কথা সচরাচর শোনা যায়। প্রায় আমরা বিভিন্ন নিউজে অতর্কিত বন্দুকধারীর হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে প্রাণহানির ঘটনা শুনতে পাই। সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় প্রত্যেক নারী প্রসূতিকালীন ছুটি লাভের অধিকার রাখে। কেননা এ সময় তার শরীরের অবস্থা এতোটা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছায় যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্রাম এবং নিয়মিত নির্দিষ্ট কিছু খাবার গ্রহণ ছাড়া তার জন্য অন্য কোন উপায় থাকে না। পাশাপাশি সন্তান জন্মের পর তাকে পরিচর্যা করার জন্য বেশ কয়েক সপ্তাহ ছুটির মাঝে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও আইন অনুযায়ী একজন নারী ২৬ সপ্তাহের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন করতে পারেন এবং এ দীর্ঘ সময়ে কাজ না করলেও তিনি বেতন ও অন্যান্য সুবিধা পেতে পারেন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। এখন পর্যন্ত যেটি বলা আছে সে দেশের আইনে কোন নারী যদি এমন কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করেন, যেখানে কমপক্ষে ৫০ জন স্টাফ কিংবা কর্মী রয়েছেন সেক্ষেত্রে তিনি ১২ সপ্তাহের ছুটির জন্য আবেদন করতে পারেন প্রসূতিকালীন ছুটি হিসেবে। তবে এ ১২ সপ্তাহ তাকে বেতন কিংবা অন্যান্য সুবিধা প্রদান করতে তার প্রতিষ্ঠান বাধ্য নয়। অন্যদিকে তিনি যদি এমন প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করেন যেখানে স্টাফ বা কর্মীর সংখ্যা ৫০ এর নিচে সেক্ষেত্রে এটা তার প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত- তিনি আদৌতে এ সময়ে কোন ধরণের ছুটি পাবেন কি না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি জয়ী হলে এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করবেন। বিখ্যাত অস্কারজয়ী পরিচালক মাইকেল মুর যিনি মূলত ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মাণের জন্য সমাদৃত। একবার তিনি এক টেলিভিশন ইন্টারভিউতে বলেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে এমন একটি দেশ যেখানে পাবলিক বলে কিছু নেই। মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণের যাবতীয় বিষয়গুলো পর্যন্ত সেখানে কোন একটি প্রাইভেট মাধ্যমে সীমাবদ্ধ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খুব কাছের দেশ কোস্টারিকা। কোস্টারিকাকে মধ্য আমেরিকার সুইজারল্যান্ড বলা হয়। কেননা নাগরিক সুবিধা ও মৌলিক অধিকার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা, মানুষের ব্যক্তিগত সুখোলব্ধি সব যে কোন ক্ষেত্রেই দেশটি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূচকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেক এগিয়ে। যদিও কোস্টারিকার অর্থনৈতিক পরিকাঠামো খুবই ছোট। আবার অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড দুইটি পাশাপাশি রাষ্ট্র হলেও নাগরিক সুবিধা ও মৌলিক অধিকার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা, মানুষের ব্যক্তিগত সুখোলব্ধি সব দিক বিবেচনায় নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া থেকে অনেক ওপরে। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্থানে রেসিজম বা বর্ণবাদ একটি প্রকাশ্য সমস্যা। আবার আমাদের দেশের অনেক মানুষের কাছে কানাডা খুবই পছন্দের একটি জায়গা কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো কানাডার হেলথ কেয়ার সিস্টেম নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে কানাডার সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল যে স্কি খেলতে গিয়ে এক যুবক গুরুতরভাবে জখম হয় এবং ওই মহিলার মতো তার পায়ের নখ ভেঙে সেটি বাইরের দিকে বের হয়ে আসে। নিকটস্থ হাসপাতালে গেলে তাকে বেশ লম্বা সময় হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে হয় এবং এ সময় তিনি ভীষণ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। কানাডার জীবনযাত্রাও অনেক যান্ত্রিক এবং কানাডাতে ইন্টারনেট পরিষেবার এখনও অনেকটা উচ্চমূল্যের। সর্বশেষ প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী রাষ্ট্রগুলোর তালিকায় একেবারে শীর্ষে থাকা আটটি দেশ হচ্ছে ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া আর নেদারল্যান্ডস। অথচ নিউজিল্যান্ড ছাড়া বাকি দেশগুলো সেরকমভাবে আমাদের দেশের মানুষের আলোচনায় স্থান পায় না। আবার সেই একই কথা। এ সকল রাষ্ট্রে অপরাধপ্রবণতা ও দুর্নীতির হার পৃথিবী অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় অনেক কম এবং সামাজিক নিরাপত্তা, মানুষের মৌলিক অধিকার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এসব বিবেচনায় এ দেশগুলো সব দিক থেকে ওপরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ পৃথিবীর অনেক দেশে এখনও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেখানে টিউশন ফী দিয়ে পড়াশুনা করতে হয় সেখানে অস্ট্রিয়াতে এখনও যে কেউ কোন ধরণের টিউশন ফী ছাড়া পড়াশুনা করতে পারে। প্রায় সাড়ে তিন কোটি জনসংখ্যাবিশিষ্ট কানাডাতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় জাস্টিন ট্রুডো সরকারের ঘোষিত বাজেট ছিল সাতাশ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার।
অথচ সেখানে ৮৮ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ অস্ট্রিয়াতে সরকার ঘোষিত বাজেট ছিল ৩৮ বিলিয়ন ইউরো। পর্তুগাল সমগ্র ইউরো জোনের অধীনে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে কিছুটা দুর্বল অথচ এমন অবস্থায় পর্তুগালের সরকার মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। দেশটিতে বসবাস করা অভিবাসী সে বৈধ কিংবা অবৈধ যে স্ট্যাটাসের হোক না কেন সবাইকে দেশটির নাগরিকদের মতো চিকিৎসা সেবা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে এবং একই সঙ্গে এসইএফ-এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত যারা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করেছেন সকলকে পরিস্থিতি বিবেচনায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির আওতায় নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। একজন মানুষের কাছে তার পছন্দ তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের যেটি সমস্যা সেটি হচ্ছে সবাইকে সমান চোখে দেখার অভ্যাস এখনো আমাদের মাঝে তৈরি হয়নি। আমাদের অগোচরে অনেক কিছুই ঘটে যায় কিন্তু সেগুলো নিয়ে আমরা সেরকম গুরুত্ব দিই না। কেন জানি আমাদের সমাজে একটি দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়েছে যে কেউ যদি দাবি করেন যে তিনি যুক্তরাজ্যে কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত একজন প্রবাসী, তাহলে তিনি যেরকম গুরুত্ব পান, গ্রীস কিংবা পোল্যান্ড কিংবা অন্য কোন একটি দেশ যেটার তেমন পরিচিতি নেই সে দেশে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে বসবাস করা সত্ত্বেও তিনি তেমন গুরুত্ব লাভ করেন না, যা সত্যি দুর্ভাগ্যজনক। মানুষকে বিবেচনা করতে হবে সব সময় তাদের গুণ দিয়ে, তাদের কাজ দিয়ে। আজকে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের মন্তব্য একটি বড় ধরণের মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে, এ কথা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে। আমাদের সকলের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে এবং আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে যাতে মানবিকতার বলে বলীয়ান হয়ে এ বিপর্যয় কাঁটিয়ে উঠতে পারি। সে জন্য এক হয়ে কাজ করতে হবে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.