আফগানিস্তান অপ্রস্তুত, গাজা অক্ষম!
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গভীর সংকটে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের নাগরিকরা। ২০০১ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নাগরিকরা শরণার্থী হন প্রতিবেশী দেশগুলোতে। করোনার তাণ্ডবে সেসব দেশে লকডাউন, কারফিউ জারি রয়েছে। দোকানপাট বন্ধ হওয়ায় নেই কোনো কাজ। ফলে অনেকেই ফিরেছেন নিজ দেশে। এখনও ফিরছেন। অনেকে বয়ে নিয়ে এসেছেন ভাইরাস। এতে ধীরে ধীরে সংক্রমণ সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে মহামারী করোনা মোকাবেলায় এখনও প্রস্তুত নয় আফগানিস্তান। অন্যদিকে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের অক্ষম ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা। ২০ লাখ নাগরিকের এ উপত্যকাটিতে মাত্র ৪০টি আইসিইউ বেড ও ৫৬টি ভেন্টিলেটর রয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান জানায়, সবচেয়ে বেশি আফগান নাগরিক পাড়ি জমিয়েছিলেন ইরানে। দেশটি করোনা-বিধ্বস্ত দেশগুলোর অন্যতম। মঙ্গলবার পর্যন্ত ইরানে মারা গেছেন দুই হাজার ৭৫৭ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ হাজার ৪৯৫ জন।
ইরানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর থেকে আফগানিস্তানের নাগরিকরা নিজ দেশে ফিরতে শুরু করেন। ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ এক লাখ ১৫ হাজার আফগান হেরাত প্রদেশের সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ফিরেছেন। হেরাতের গভর্নর আবদুল কাইউম বলেন, ‘দেশে ফেরত আসাদের মধ্যে অন্তত অর্ধেকই করোনাভাইরাস বহন করে নিয়ে আসতে পারেন। এতে আক্রান্ত বাড়লে আফগানিস্তানের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তা সামাল দেয়া খুবই কঠিন হবে।’ যদিও দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত মাত্র ১৭৪ জন, এর মধ্যে হেরাতেই ৮০ জন। মারা গেছেন চারজন। আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বাভাস, দেশটির তিন কোটি ৫৫ লাখ নাগরিকের মধ্যে আড়াই কোটি করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ২৩ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান সীমান্ত বন্ধ করে ইরান। এরপর থেকে আর কোনো আফগান নাগরিক দেশে ঢুকতে পারেননি। ফলে আফগানিস্তান-ইরান সীমান্ত খোলার অপেক্ষায় সেখানে এসে ভিড় করেছেন কয়েক হাজার মানুষ। তাদেরই একজন ১৭ বছর বয়সী ইউনুস। এক সপ্তাহ ধরে হিমশীতল মরুভূমিতে তাঁবু খাটিয়ে আছে সে। এক বছর আগে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ইরানে গিয়েছিল ইউনুস। তেহরানে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে চাকরি পায় সে। গত সপ্তাহে ইউনুস আফগানিস্তানে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। ইউনুস জানায়, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সব আফগান দেশে ফিরছেন। আমরা যারা সীমান্তে আটকে আছি খুবই আতঙ্কে আছি। আমরা এই অদ্ভুত মরুভূমিতে মরতে চাই না।’
করোনার প্রাদুর্ভাবে ইরানে প্রায় ২০ লাখ আফগান চাকরি হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। হেরাতের ডাক্তার আলী জানান, আমরা করোনা মোকাবেলায় ততটা প্রস্তুত নই। তবুও ১৫০ রোগী রাখা যাবে এমন একটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই আক্রান্ত হাজার ছাড়িয়ে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন আলী। সংক্রমক রোগ বিভাগে কর্মরত জাওয়াদ বলেন, আমরা একটি ১০০ বেডের নতুন হাসপাতাল তৈরি করেছি। সেখানে মাত্র তিনজন ডাক্তার, তিনজন নার্স এবং একজন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। সুরক্ষা পোশাক, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং ভেন্টিলেটর নেই বললেই চলে। শুধু ডাক্তারদের জন্য দৈনিক এক বা দুটি করে মাস্ক রয়েছে বলে জানান জাওয়াদ।
এর চেয়েও খারাপ অবস্থা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। যুগ যুগ ধরে দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসা গাজার মানুষ এখন যুদ্ধ শুরু করেছেন অদৃশ্য শত্র“ করোনার বিরুদ্ধে। ভাইরাস প্রতিরোধের প্রচেষ্টা, ক্ষমতা কোনোটাই নেই গাজার। উপত্যকাটিতে মাত্র ৪০টি আইসিইউ বেড ও ৫৬টি ভেন্টিলেটর রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভঙ্গুর। ২০১৪ সালে দেইর আল বালার আল-আকসা এবং সুজাইয়েহের আল-ওয়াফা হাসপাতালে বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইল। অ্যাম্বুলেন্সগুলোও ইহুদিদের গোলার আঘাতে নষ্ট হয়েছে। নেই কোনো ভাইরাসপ্রতিরোধী সরঞ্জাম। এমন পরিস্থিতিতে সুরক্ষা পোশাক, মাস্ক ছাড়া করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করা গাজার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। পুরো ফিলিস্তিনে এ পর্যন্ত ১১৭ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন এবং মারা গেছেন একজন।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.