যৌনমিলনে কে বেশি সুখ পায়! নারী না পুরুষ!
গ্রিক পুরাণে একটা কাহিনি রয়েছে। দেবরাজ জিউস এবং দেবরাণি হেরার মধ্যে একবার এই নিয়ে তর্ক হয়, সঙ্গমে কার বেশি সুখ— পুরুষ না নারী? তর্কের মীমাংসা করতে তাঁরা তাইরেসিয়াস নামক এক দার্শনিক এবং ভবিষ্যকথকের দ্বারস্থ হন। তাইরেসিয়াস পড়েন ফাঁপরে। কাকে খুশি করবেন, স্থির করতে না পেরে খুব গেলমেলে একটা উত্তর দেন তিনি। জিউস এবং হেরা বুঝতে পারেন, তাঁদের ধোঁকা দিয়েছেন তাইরেসিয়াস। হেরা তাঁকে অন্ধত্বের অভিশাপ দেন। টাইরেসিয়াসকে দীর্ঘ অন্ধত্বের পর্ব কাটাতে হয়।
এই প্রশ্ন এ দেশের পুরাণে যে ওঠেনি, তা নয়। খোদ ‘মহাভারতে’ এই প্রশ্ন নিয়ে বেশ তোলপাড় হয়েছিল বলেই জানা যায়। এই বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল ভীষ্ম এবং যুধিষ্ঠীরের মধ্যে। জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব প্রশ্নটি করেছিলেন শরশয্যায় শায়িত পিতামহকে। ভীষ্ম তাঁকে রাজা ভঙ্গাশ্যনের কাহিনি শোনান। এই কাহিনি অনুযায়ী, দেবরাজ ইন্দ্রের অভিশাপে ভঙ্গাশ্যন নারীতে পরিণত হন। তিনি একমাত্র ব্যক্তি, যিনি পুরুষ এবং নারী— উভয়ের সঙ্গম-সুখের অনুভূতি কেমন, তা জানতেন। পুরুষ ও নারী উভয় অবস্থাতেই তিনি সন্তানলাভ করেন। সেই সব সন্তানদের একাংশ তাঁকে বাবা ও একাংশ মা বলে সম্বোধন করত। ইন্দ্র তাঁকে যখন পুনরায় পুরুষ হতে অনুরোধ করেন, তখন তিনি নারী হিসেবেই থেকে যেতে চান। কারণ হিসেবে তিনি জানান, সঙ্গমে নারীর সুখই অধিক।
তাইরেসিয়াসের মিথের সঙ্গে ভঙ্গাশ্যনের মিথের যথেষ্ট মিল রয়েছে। অন্ধত্বের আগে তাইরেসিয়াসকেও একটা বড় সময় নারী হিসেবে কাটাতে হয়েছিল। দুই পুরাণ-কাহিনির মধ্যে এই আশ্চর্য মিল কি আপতিক? মিথ-বিশ্লেষকরা জানান, এই জিজ্ঞাসা যেহতু মানুষের চিরন্তন, সেহেতু মিল থাকা স্বাভাবিক। আবার এমনও হতে পারে, ‘মহাভারত’-এর কাহিনি সাগর পেরিয়ে পৌঁছেছিল গ্রিক ভুবনে। এই কাহিনিগুলির সঙ্গে মিল রয়েছে আইরিশ পুরাণেরও। কিন্তু প্রায় সবাই একই কথা বলে— সঙ্গমে নারীর সুখই অধিক।
তন্ত্র বা সহজিয়া দর্শনে নারীকে শক্তি হিসেবে দেখা হয়। দেহ-সাধনার ক্রিয়াগুলিতে নারীর যে সক্রিয় ভূমিকার কথা তারা বলে, তাতেও প্রতীতি হয় এই সত্য। শরীর-বিজ্ঞান এই নিয়ে স্পষ্ট কিছু না বললেও এটা বোঝাই যায়, স্ত্রী-অনুভূতির ভূবনে ‘ইতিহর্ষ’ এক প্রলম্বিত বিষয়। অথচ পুরুষের বীর্যধারণ তো মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার!

Bangladeshi Taka Converter
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.