বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন: করোনাভাইরাস রুখতে ব্যর্থ ‘রেমডেসিভির’
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় সম্ভাব্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ব্যর্থ হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় কার্যকর হবে এই ওষুধটি। কিন্তু একটি চীনা পরীক্ষায় রেমডেসিভির রোগীদের সারিয়ে তুলতে সফল হয়নি। এ ছাড়া করোনা চিকিৎসায় হাইড্রোক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক জার্নাল ল্যানসেটের সম্পাদক রিচার্ড হরটন।
তিনি বলেন, এর কার্যকারিতার একটা প্রমাণও নেই। অন্যদিকে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ভেন্টিলেটর কতটুকু কার্যকর, তা নিয়েও নতুন করে ভাবছেন চিকিৎসকরা। কারণ, নিউইয়র্কের হাসপাতালে ভেন্টিলেটরে রাখা ৮০ ভাগ রোগীই মারা গেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি খসড়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রেমডেসিভির ওষুধটি রোগীর অবস্থার উন্নতি ঘটাতে বা রক্তপ্রবাহে প্যাথোজেনের উপস্থিতি কমাতে পারেনি। তবে ওষুধটি উৎপাদনকারী মার্কিন কোম্পানি গিলিড সায়েন্সেস বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নথিতে গবেষণাটিকে সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি।
কোম্পানিটি বলছে, ৫৫০০ রোগীর ওপর এই ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। সেই ট্রায়ালের রিপোর্ট সামনে আনেনি সংস্থা। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্টে এই ওষুধের ব্যর্থতার কথা সামনে চলে আসে। মানুষের শরীরে এই ওষুধের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করছিলেন চীনের বিজ্ঞানীরা। সেখান থেকেই খবর আসে রেমডেসিভির করোনা আক্রান্তদের শরীরে তেমনভাবে কার্যকরী হয়নি। এই ওষুধ খাওয়ানোর পরও রোগীদের সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
গবেষণার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২৩৭ জন রোগীর উপরে ট্রায়াল করে দেখা হয়েছে এই ওষুধ। ১৫৮ জনকে রেমডেসিভির খাইয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল, বাকি ৭৯ জনকে ওষুধ খাওয়ানো হয়নি। দেখা গেছে, রেমডেসিভির যারা খেয়েছিলেন তাদের শারীরিক অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি। আবার ১৮ জন রোগীর মধ্যে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, রেমডেসিভির ওষুধটির করোনায় কাজ করার সম্ভাবনা আছে। এরপর মানুষের শরীরে এই ওষুধটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়, কিন্তু পুরোপুরি ব্যর্থ হয় সেটি।
কেননা এক মাস পরে দেখা যায়, রেমডেসিভির গ্রহণকারীদের মধ্যে ১৩.৯ শতাংশ মারা গেছেন এবং গোষ্ঠী সংক্রমণের ক্ষেত্রে এই মৃত্যুর হার ছিল ১২.৮ শতাংশ। এদিকে বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক জার্নাল ল্যানসেটের সম্পাদক রিচার্ড হরটন বলেছেন, করোনা রোগীর ক্ষেত্রে যে হাইড্রোক্লোরোকুইন কাজ করে এর একটা প্রমাণও নেই। তবুও বিশ্বজুড়ে এই ওষুধটি নিয়ে হইচই পড়েছে। এটি মূলত ম্যালেরিয়ার ওষুধ। করোনার ক্ষেত্রে এর উপকার আজ পর্যন্ত কেউ পায়নি। তিনি বলেন, করোনার ভ্যাকসিনের সন্ধানে বিশ্বের প্রচেষ্টা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব গবেষণা চালাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে যে প্রচেষ্টা চলছে সেখানে কিছুটা সমন্বয় সাধন করতে হবে। উন্নত দেশগুলোর উচিত এ ক্ষেত্রে সংস্থাটির পাশে দাঁড়ানো। তাহলেই খুব দ্রুত আমরা ইতিবাচক ফল পেতে পারি। এদিকে করোনা রোগীর চিকিৎসায় ভেন্টিলেটর কতটুকু কার্যকর তা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন বিজ্ঞানীরা।
কারণ, নিউইয়র্কের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, হাসপাতালের আইসিইউতে ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীদের ৮০ শতাংশই মৃত্যুবরণ করেছে। এ কারণে এখন তারা ভেন্টিলেটর ছাড়াই চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছেন। ভেন্টিলেটর হল এমন একটি মেশিন যেটা মানুষের ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং সাধারণত শ্বাসকষ্টজনিত রোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এটা কার্যকর।
ডব্লিওএইচওর পাশে ফ্রান্স ও জার্মানি : বিশ্বজুড়ে করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকাসহ এশিয়ার অনেক দেশ। এরই মধ্যে করোনার ওষুধ, টেস্ট, ভ্যাকসিন তৈরিতে বৈশ্বিক পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং জার্মানির চ্যালেঞ্জর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র জানান, করোনা নিয়ে প্রতিষেধক তৈরির ঘোষণায় অংশ নেবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েনসহ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক র্যাব এবং জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনি গুতেরেস। পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচলক টেড্রোস আধানম।
ঘোষণার বিষয়বস্তু হল ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে। তবে এর জন্য ভালোমানের সরঞ্জাম থাকতে হবে। এখন পর্যন্ত করোনার ১০০টি ভ্যাকসিনের সন্ধান মিলেছে পুরো বিশ্বে। এরই মধ্যে ৬টির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে। দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সিইও ডা. সেথ বার্কলি বলছেন, প্রত্যেকের জন্য ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ জন্য বিশ্বনেতাদের সহায়তা দরকার।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.