সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    গাজীপুর জেলা নামকরনের ইতিহাস ও পরিচিতি |

    .com/proxy/

    নামকরণ ও প্রতিষ্ঠাঃ
    এক সময়ের প্রাচীন জনপদ ‘ভাওয়াল’ পরগনা বর্তমানে গাজীপুর নামে পরিচিত। ভাওয়াল নামকরনের পিছনে রয়েছে সুদীর্ঘ ঐইতিহাসিক পটভূমি।

    বিভিন্ন সূত্র থেকে ধারনা করা হয় যে, প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে বঙ্গ জনপদের এ অঞ্চল মোঘল সম্রাট আশোকের শাসনাধীন ছিল।
    এ ধারণার কারন জয়দেবপুরে অবস্থিত সাকাশ্বর স্তম্ভ। প্রাচীনযুগ থেকেই এ অঞ্চলের ডবাক ডাকুরাই সাকেশ্বর প্রভূতি ক্ষুদ্র জনপদ পাল, দাস, চেদী ও চন্ডালদের দ্বারা শাসিত হয়। মুসলিম শাসনামলে এই জনপদগুলো ভাহওয়াল (ভাওয়াল) নামে সুবৃহৎ পরগনায় পরিণত হয়।
    ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা যায় যে, খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীর দিকে রাজা যশোপাল, শিশুপাল প্রতাপ ও মহেন্দ্ৰ ভাওয়ালের বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামন্ত রাজ স্থাপন করেন। প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে, এই ক্ষুদ্র সামন্ত রাজ্যগুলো চেদী রাজ্য নামে পরিচিত ছিল।
    বর্তমান গাজীপুর জেলার শ্রীপুর, কালিয়াকৈর (আংশিক), কাপাসিয়া, কালীগঞ্জ, টঙ্গীসহ ময়মনসিংহ জেলার গফরগাও ও ত্রিশাল উপজেলার অংশবিশেষ, ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার অংশবিশেষ, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার উত্তরাংশ এবং টঙ্গীর পশ্চিমে হরিরামপুর ইউনিয়ন নিয়ে এই ক্ষুদ্র চেদী রাজ্যগুলো বিদ্যমান ছিল।

    ভাওয়াল নাম নিয়ে নানা মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। ভাওয়াল গবেষক নুরুল ইসলাম ভাওয়ালরত্নের মতানুসারে, চন্ডাল রাজাদের পতনের পর ভাওয়াল গাজীদের অধিকারে আসে। কারও কারও মতে, ভদ্রপাল বা ভবপাল নাম থেকে ভাওয়াল নামকরণ হয়। মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় ‘ভবপাল’ নামক রাজ্যের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। মতান্তরে, ‘ভগালয়’ থেকে ভাওয়াল নামের উৎপত্তি, কারণ মহাভারতে ‘ভগালয়' নামেরও উল্লেখ রয়েছে। ব্রম্মা- পুরাণে ভদ্র’ নামের একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। গবেষক নুরুল ইসলামের মতে, আইন-ই-আকবরী গ্রন্থ থেকেই প্রথম জানা যায় যে, এ অঞ্চলের নাম ভাওয়াল।
    ইতিহাসবিদদের ধারণা, দ্বাদশ শতাব্দীতে ভাওয়াল জনপদের ওপর থেকে সেন বংশীয় রাজাদের শাসন ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। পরবর্তী পর্যায়ে মুসলমানদের বঙ্গ বিজয়ের পর থেকে এখানকার বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিম শক্তির উত্থান ঘটে।
    এই ধারাবাহিকতায় ভাহওয়াল (ভাওয়াল) গাজী শক্তিশালী হয়ে ওঠেন এবং একে একে তিনি এ অঞ্চলের চেদী রাজ্যগুলো দখল করে নেন। অতঃপর নিজের নামানুসারে এই জনপদের নামকরণ করেন ভাওয়াল। তাঁর প্রকৃত নাম ভাহওয়াল গাজী, তা থেকে স্থানীয় ভাষায় তাকে বলা হয় ভাওয়াল গাজী। নবাবী আমলে ভাওয়াল পরগনার রাজস্ব আদায়ের জন্য ধীরাশ্ৰেম একটি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ধীরাশ্ৰেমকে ঘিরে সে আমলে এখানে গড়ে ওঠে এক সমৃদ্ধ জনপদ যার নিদর্শ্ন এখানে ভগ্ন দালান, দিঘি ও রাস্তাঘাট
    রাহাপাড়া, তেলীনগর, হয়দ্রাবাদ, রথখোলা, ভারারুল, মেঘডুবি প্রভৃতি গ্রামে এসব নিদর্শনের কিছু কিছু এখনো অবশিষ্ট আছে।

    ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতা তাজউদ্দীন আহমদ ভাওয়ালগড় জেলা নামে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিন্যাসের একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেন। পরবর্তী পৰ্যায় অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাগণ ঢাকা সদর উত্তর মহকুমাকে ভাওয়ালগড় মহকুমা নামে জয়দেবপুরে স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের আমলে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে তখন থেকেই এ অঞ্চল ভাওয়ালগড় জেলা নামে পরিচিতি লাভ করে।
    বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভাওয়ালগড়কে জেলা হিসেবে উন্নীত করার দাবি উত্থাপন করে।

    ১৯৭৮ সালে জয়দেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আ.ক.ম মোজাম্মেল হক কে আহবায়ক করে প্রাথমিকভাবে ঢাকা সদর উত্তর মহকুমাকে জয়দেবপুরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়। সে সময় সরকার মহকুমার নামকরণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির পক্ষ থেকে 'ভাওয়াল’, ‘ভাওয়ালগড়’ ও ‘গাজীপুর’-এ তিনটি নাম প্রস্তাব করে সরকারের কেবিনেট বিভাগে পাঠানো হয়। ভাওয়ালের বীর গাজীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার ‘গাজীপুর’ নামটি অনুমোদন করে এভাবে গঠিত হয় গাজীপুর মহকুমা।
    ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকার দেশের মহকুমাগুলোকে জেলায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু গাজীপুর মহকুমা তা থেকে বাদ পড়ে। এতে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অবশেষে মরহুম হাবিবুল্লাহকে_ আহবায়ক ও আ ক ম মোজাম্মেল হককে সদস্য সচিব করে ১৯ সদস্যবিশিষ্ট গাজীপুর জেলা বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠিত হয়। কমিটির সদস্যগণ গাজীপুর জেলা গঠনের দাবিতে ব্যাপক প্রচার, যোগাযোগ ও আন্দোলন শুরু করলে সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়ে গাজীপুরকে জেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
    ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ তৎকালীন সরকারের মুখ্য অর্থসচিব এম সাইদুজ্জামান নতুন গাজীপুর জেলার উদ্বোধন করেন। আয়তনের দিক থেকে ঢাকা বিভাগের ১৭ জেলার মধ্যে গাজীপুরের অবস্থান সপ্তম এবং বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে গাজীপুর ৩৯তম।

    =>সিটি কর্পোরেশন ১টি (গাজীপুর)
    =>উপজেলা ৫টিঃ- গাজীপুর সদর, কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ ও শ্রীপুর।
    =>থানা ৬টিঃ- জয়দেবপুর, টঙ্গী (গাজীপুর সদর উপজেলাধীন), কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর, শ্রীপুর ও কালীগঞ্জ।
    =>পৌরসভা ৪টিঃ- টঙ্গী, গাজীপুর, কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর।
    =>ইউনিয়ন পরিষদঃ- ৪৭ টি, মৌজা ৮১৪ টি, গ্রাম ১৩৩০টি ও তহসিল ৩৫টি।
    (সংগৃহীত)

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !