আমফানকে নিয়ে কেন এত ভয়!
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আমফান সর্বোচ্চ তীব্রতার একটি 'সুপার সাইক্লোনে' পরিণত হয়েছে। সোমবার দিনের প্রথম ভাগেই এটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয় বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ।
আলোচিত এ ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত দীঘা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মধ্যবর্তী সমুদ্রতীরের কোনও একটি জায়গা দিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, তীব্রতার মাপকাঠিতে এই ঘূর্ণিঝড় এর মধ্যেই অনেক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
সোমবার সকালে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া 'আমফান' নামের ঘূর্ণিঝড়টি যে আজ সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ একটি 'অতি প্রবল' বা 'এক্সট্রিমলি সিভিয়ার' ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে, ইন্ডিয়ান মেটিওরলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট তা টুইট করে জানায়।
এর মাত্র ঘন্টা কয়েক পরই তারা আবার টুইটবার্তায় জানায়, বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ সেটি একটি সুপার সাইক্লোনে বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।
কোথায়, কবে আঘাত হানবে? দিল্লিতে ভারতের আবহাওয়া বিভাগের মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, "আমফান নামে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া এই ঘূর্ণিঝড়টি থেকে ২০শে মে বুধবার আমরা সবচেয়ে বড় বিপদের আশঙ্কা করছি।
সেদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে কোনও একটা সময় এটা উপকূলে আছড়ে পড়বে। মঙ্গলবার ১৯ মে থেকেই উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে।
বুধবার ২০শে মে সকাল থেকে তার সঙ্গে যোগ হবে তীব্র ঝড়ো বাতাস। ঝড়টি এখন উত্তর-উত্তর পূর্ব অভিমুখে এগোচ্ছে, বুধবার এটি পশ্চিমবঙ্গের দীঘা আর বাংলাদেশের হাতিয়ার মাঝামাঝি কোনও একটা এলাকা দিয়ে সমুদ্রতট অতিক্রম করবে।"
তিনি বলেন, "ডাঙায় আছড়ে পড়ার সময় বাতাসের বেগ ঘন্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটারের মতো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।"
ভারতের ন্যাশনাল ডিজ্যাস্টার রেসপন্স ফোর্সের অন্তত ৩৭টি দলকে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশাতে এই ঝড়ের মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে ওই বাহিনীর প্রধান জানিয়েছেন।
ঠিক বছরখানেক আগে ওড়িশাতে আছড়ে পড়েছিল সাইক্লোন ফণী, তবে এবার আমফানের আঘাত থেকে ওই রাজ্যটি বেঁচে গেলেও যেতে পারে আশা করা যাচ্ছে।
কিন্তু ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের একটা বিস্তীর্ণ অংশ নিয়ে তেমন একটা আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না – যার একটা বড় কারণ আমফানের তীব্রতা।
আমফানকে কতটা ভয়াবহ? ভারতের বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থা স্কাইমেটের প্রধান মহেশ পালাওয়াট জানাচ্ছেন, আমফান এর মধ্যেই ঘন্টায় দেড়শো কিলোমিটারেরও বেশি গতিবেগসম্পন্ন ঝড়ো বাতাস সঙ্গে 'প্যাক' করে নিয়েছে।
মাত্র চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে এটা একটা ঘূর্ণিঝড় থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে, সেটাও একটা রেকর্ড।" উপকূলের কাছাকাছি এলে এই ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা সামান্য কমবে, তবে তার পরেও এর বিধ্বংসী ক্ষমতাকে খাটো করে দেখার কোনও সুযোগ নেই – জানাচ্ছেন পালাওয়াট।
তিনি বলেন, "স্থলভূমি থেকে শুকনো বাতাস এসে সিস্টেমটাকে কিছুটা দুর্বল করে দেয় – এই আমফানের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটবে।
কিন্তু তার পরেও এটা একটা প্রচণ্ড সাংঘাতিক ঘূর্ণিঝড় – যার তান্ডব আর ক্ষয়ক্ষতি সাধনের ক্ষমতা মারাত্মক। ফলে পুরো উপকূলীয় এলাকা জুড়েই মানুষকে সাবধান থাকতে হবে।"
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.