বিস্ফোরণে বৈরুতের অর্ধেক ধূলিসাৎ, ঘরহারা ৩ লাখ মানুষ!
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে শহরটির অর্ধেকই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। এ দুর্ঘটনায় অন্তত তিন লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় গভর্নর মারওয়ান আবৌদ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই বিস্ফোরণে বুধবার পর্যন্ত শতাধিক প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন চার হাজারেরও বেশি। এখনও অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে রয়েছেন বলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গভর্নর আবৌদ।
এদিকে লেবানন বা অন্য কোনো দেশ বৈরুতে বিস্ফোরণের ঘটনায় হামলার যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা স্বীকার না করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিকে ভয়াবহ হামলা বলে দাবি করেছেন। বিস্ফোরণস্থলের দুই কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত সেন্ট জর্জ হাসপাতাল। সেখানকার এক চিকিৎসক গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসছে মানুষ, তবে আমরা তাদের ভর্তি করাতে পারছি না। তাদের রাস্তার উপরে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতাল ভবন ভেঙে গেছে। ধ্বংস হয়ে গেছে জরুরি বিভাগ।’
এক নিরাপত্তা সূত্রকে উদ্ধৃত করে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বিস্ফোরণে আহতদের চিকিৎসা দিতে শহরের বাইরে নেয়া হচ্ছে। কারণ, আহতদের সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বৈরুতের হাসপাতালগুলো। দেশের উত্তর ও দক্ষিণের এলাকা এবং পূর্বে অবস্থিত বেক্কা উপত্যকা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সহায়তা চেয়ে অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়েছে। লেবাননের রেডক্রসের প্রধান জর্জেস কেট্টানেহ সম্প্রচারমাধ্যম মায়াদিনকে বলেন, ‘আমরা যা দেখছি তা বড় ধরনের এক বিপর্যয়। চারদিকে হতাহতদের দেখা যাচ্ছে।’
আহতদের বাঁচাতে মানুষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছে রেডক্রস। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণের পরপরই বন্দর এলাকায় নিখোঁজদের সন্ধানে স্বজনদের ভিড় জমাতে দেখা যায়। এ সময় ভাইয়ের খোঁজে আসা এক তরুণী নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে বারবার খোঁজ জানতে চাইছিলেন। ভাইকে চেনাতে তার শারীরিক গঠনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন।
বলছিলেন, ‘তার নাম জাদ। তার চোখগুলো সবুজ।’ তবে নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলেন না। আর ওই নারী বারবার তাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছিলেন ভেতরে যেতে দেয়ার জন্য। পাশেই আরেক নারীকে দেখা যাচ্ছিল স্বজনের খোঁজে এসে তার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অবস্থা। তিনিও এসেছিলেন ভাইয়ের খোঁজে। তার ভাইও বন্দরেই কাজ করতেন।
ওই এলাকায় নিয়োজিত এক সেনা সদস্য বলেন, ‘ভেতরে খুব খারাপ অবস্থা। মাটিতে মানুষের মৃতদেহ পড়ে আছে। এখনও মৃতদেহ উদ্ধার করে সেগুলোকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানোর কাজ চলছে।’ বন্দর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর ধ্বংসস্ত‚প সরানো শুরু হলে মৃতের সংখ্যা উলেখজনক হারে বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান রয়টার্সকে বলেন, ‘অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। জরুরি বিভাগের কর্মীদের কাছে এসে লোকজন তাদের প্রিয়জনের সন্ধান চাইছে। রাতে অনুসন্ধান অভিযান চালানোটা কঠিন। কারণ সেখানে বিদ্যুৎ নেই।’
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.