মাত্র ২ টাকায় কলেজে ভর্তি হন প্রণব
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সিউড়ির পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে প্রণব মুখার্জির স্মৃতি। এই সিউড়িতেই বিদ্যাসাগর কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। তখন স্বাধীনতার মোটে পাঁচ বছর।
১৯৫২ সালে তিনি আইএসসি কোর্সে কলেজে ভর্তি হন। কলেজ রেজিস্ট্রেশন ফি ছিল মাত্রা ২ টাকা। মাত্র দুই টাকা দিয়েই কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। তারপর ১৯৫৩ থেকে ৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি বিএ কোর্স করেন। ২০১২ সালের ১৯ ডিসেম্বর এই কলেজেই একটি সভাতে বক্তব্য রেখেছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব।
সেই বক্তব্যেই উঠে এসেছিল তার কলেজ জীবনের কথা। এতদিন পরেও তিনি স্মরণ করেন, কলেজে তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল ৫০৫৭। ১৯৫৬ সালের ১৩ আগস্ট তিনি স্নাতক স্তরের মার্কশিট হাতে পেয়েছিলেন, নিজের বক্তব্যে জানান সে কথাও।
পড়াশোনা চলাকালীন প্রণব থাকতেন ছাত্রাবাসে। পাশাপাশিই ছিল মোট আটটি ছাত্রাবাস। তার একটিতে থাকতেন প্রণব। সঙ্গী ছিলেন অধ্যাপক অমল মুখার্জি, অধ্যাপক দীপেন্দু ব্যানার্জি, ষষ্ঠীকিংকর দাস, বলরাম দে, গঙ্গাচরম মিশ্রের মতো বিখ্যাত মানুষ। তারা ছিলেন প্রণবের কাছের বন্ধু। সেই বন্ধুত্বের কথা ২০১২ সালে কলেজে উপস্থিত হয়েও বারবার করে বলেছিলেন প্রণব।
সেই সময়ে সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন অধ্যাপক অরুণ সেন। সেকথাও স্মরণ করেন তিনি। স্মৃতিধর প্রণবের বক্তব্যের আগাগোড়া সিউড়ির সেই কলেজের নস্টালজিয়া ছিল ছড়িয়ে। ছেলের কাছে শেষ আবদার- ‘গ্রাম থেকে একটা কাঁঠাল নিয়ে আসিস’ : ‘আমার জন্য গ্রাম থেকে একটা কাঁঠাল নিয়ে আসিস।’ গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ড. প্রণব মুখার্জি। অসুস্থ হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে ছেলে অভিজিৎ মুখার্জির কাছে শেষ আবদার কাঁঠাল খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
ছেলে অভিজিতের কাছে বীরভূমের নিজে গ্রাম মিরাটির কাঁঠালই খেতে চেয়েছিলেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। কিন্তু ছেলে অভিজিৎ তখন কলকাতায়। বাবার কথায় তিনি ফের গ্রামে যান। কাঁঠাল নিয়েই ফেরেন বাবার কাছে। এক কাঁঠালেই তার মুখে হাসি ফুটেছিল।
এ ব্যাপারে অভিজিৎ বলেন, ‘কলকাতা থেকে আমি মিরাটি গিয়েছিলাম কাঁঠাল আনতে। প্রায় ২৫ কেজি ওজনের একটি পাকা কাঁঠাল নিয়ে ট্রেনে দিল্লি গিয়ে বাবার সঙ্গে দেখা করি। বাবা এবং আমি দু’জনেই ট্রেন সফর করতে খুবই ভালোবাসি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাবা সেদিন কিছুটা কাঁঠাল খেয়েছিলেন। বাবার তো ডায়াবেটিস ছিল। সৌভাগ্যবশত তার পরেও ওনার সুগার বাড়েনি। গ্রামের কাঁঠাল খেয়ে বাবা খুবই খুশি হয়েছিলেন।
তখনও তিনি সুস্থই ছিলেন।’ সংগ্রহ করতেন নিজের কার্টুন : জীবনের সুদীর্ঘ ও বর্ণময় রাজনৈতিক অধ্যায়কে সরিয়ে রেখে শপথ নিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি পদে। কিন্তু সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে বসেও ঘনিষ্ঠ মহলে আক্ষেপ করতে শোনা গিয়েছিল তাকে। প্রাত্যহিক রাজনৈতিক উদ্দীপনা যে কতটা ‘মিস’ করেন, অকপটে তা জানিয়েছিলেন। সেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে দেশীয় রাজনীতিতে এক অপূরণীয় শূন্যতা নেমে এলো।
সম্পূর্ণ নিজের দক্ষতায় একসময় জাতীয় রাজনীতিতে অপরিহার্য হয়ে উঠেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাই কংগ্রেস তাকে ‘প্রাপ্য সম্মান’ না দিলেও, দলের বিরুদ্ধে কখনও মন্তব্য করতে শোনা যায়নি তাকে। আবার বিরোধীদের সঙ্গেও সদ্ভাব বজায় রেখে চলতেন তিনি। যে কারণে সবাই সমীহ করতেন তাকে। তার মৃত্যুতে তাই শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনৈতিক মহলে। ১৯৩৫ সালের ১১ ডিসেম্বর বীরভূমের মিরাটি গ্রামে জন্ম প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। বাবা কামদাকিঙ্কর ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী।
১৯৫২ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের সদস্য ছিলেন তিনি। তিনি এআইসিসির সদস্যও ছিলেন। ১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসে দাদার বিয়ে উপলক্ষে প্রথম কলকাতায় আসা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে পরিবার ও আত্মীয়দের সঙ্গে বেশ কিছুদিন কলকাতায় আটকে থাকতে হয়েছিল তাকে। তবে রাজনৈতিক পরিবেশে বড় হলেও, রাজনীতিতে প্রণবের হাতেখড়ি হয় দেরিতেই।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.