জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়!
করোনা মহামারী ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থতার কথা তুলে ধরার পর যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া এ বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়, মহামারী মোকাবেলায় বিশ্ব নেতৃত্বের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে গুতেরেস বলেন, বৈশ্বিক প্রস্তুতি, সহযোগিতা, ঐক্য ও সংহতির অভাবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং প্রায় ১০ লাখের কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ৩ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
বৈঠকে গুতেরেস আরও বলেন, মহামারী আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় বিশ্ব নেতারা ব্যর্থ হয়েছেন। জলবায়ু সংকটও যদি একইভাবে এগিয়ে আসে তাহলে আমার আশঙ্কা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বে করোনা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য চীনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় ২ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে মহামারীর অবনতির জন্য বেইজিংকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে চীন এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
নিরাপত্তা পরিষদের ভার্চুয়াল বৈঠকে মার্কিন দূত কেলি ক্রাফট একই অভিযোগ পুনরায় তুলে ধরলে তা খারিজ করে চীনা দূত ঝ্যাং জুন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। তিনি বলেন, যথেষ্ট হয়েছে। আপনারা ইতোমধ্যে বিশ্বের জন্য অনেক সংকট তৈরি করেছেন। ইংরেজিতে দেয়া ভাষণে চীনা দূত বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত মেডিকেল টেকনোলজি ও ব্যবস্থা থাকার পরও কেন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু ঘটছে। যদি কাউকে দায়ী করতে হয় তাহলে তা কয়েকজন মার্কিন রাজনীতিককে নিজেদের দায়ী করতে হবে।
রাশিয়ার দূত তার এ অবস্থানকে সমর্থন জানালে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চীন-মার্কিন উত্তেজনা মহামারীতে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মহামারী পরিস্থিতিতে চীনের প্রভাব বৃদ্ধিকে ওয়াশিংটনের প্রথাগত নেতৃত্বের জন্য হুমকি হিসেবে মনে করা হচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বিভিন্ন দেশের দূতদের সমালোচনা করেন মার্কিন দূত ক্রাফট। তিনি বলেন, আপনাদের সবার লজ্জা হওয়া উচিত। আজকের বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে আমি হতবাক ও মেনে নিতে পারছি না।
এ পরিষদ নিয়ে সত্যিই আমি লজ্জিত। এ পরিষদের সদস্যরা চলমান সংকট নিয়ে কথা বলার চাইতে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন। কূটনীতিকরা জানান, মার্কিন দূতের কথা বলার ভঙ্গিতে তারা ধাঁধায় পড়ে যান। চীনা দূত কথা বলার আগেই ক্রাফট বৈঠক ছেড়ে চলে যান। এক কূটনীতিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, মোটামুটি একটি ঐকমত্যের অধিবেশন শেষে ক্রাফট ছিলেন খুবই আক্রমণাত্মক।
জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন দূত ন্যান্সি সোডারবার্গ বলেন, বিশ্ব রাষ্ট্রের মূল কেন্দ্র এ সংস্থা। নিরাপত্তা পরিষদের এ পরিস্থিতি প্রমাণ করে করোনা মোকাবেলায় বৈশ্বিক ব্যবস্থা কতটা ভেঙে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, এটি এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছে যেখান থেকে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। সব দেশের নিজেদের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করা উচিত এবং নিজেদের জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.