পশ্চিমবঙ্গে হোটেল থেকে তাড়িয়ে দেয়া হলো মাদ্রাসা শিক্ষকদের!
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা লাগোয়া একটি এলাকার দুটি গেস্ট হাউস থেকে ১০ মুসলমান শিক্ষককে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অগ্রিম অর্থ দিয়ে রুম বুকিং করার পরও 'পাড়ার লোকেরা মুসলমানদের থাকতে দিতে চায় না' এ অজুহাতে গেস্ট হাউসের কর্মীরা তাদের চলে যেতে বলেন। খবর বিবিসির।
পরে শিক্ষকদের অভিযোগে পুলিশ ওই গেস্ট হাউস দুটির তিনজন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। ওই ১০ মাদ্রাসাশিক্ষক মালদা থেকে সোমবার খুব ভোরে পৌঁছেছিলেন কলকাতা লাগোয়া বিধাননগর বা সল্টলেকে। তাদের কেউ প্রধান শিক্ষক, কেউ সহকারী শিক্ষক। রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরে সরকারি কাজেই এসেছিলেন তারা।
ক্লান্ত শিক্ষকরা অগ্রিম টাকা দিয়ে বুক করে রাখা গেস্ট হাউসে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে চাইছিলেন দ্রুত। একটু পরে রাস্তায় বেরিয়ে নাস্তা করতে গিয়েছিলেন। তখনই পাড়ার লোক তাদের দাড়ি-টুপি-পাজামা-পাঞ্জাবি দেখে সন্দেহ করেছেন, সেটি অনেক পরে বুঝতে পারেন ওই দলে থাকা প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, সবাই রাত জেগে এসেছি। তাই গোসল করে একটু নাস্তা করতে বেরিয়েছিলাম। ফিরে এসে হোটেল রুমে কাজ করছিলাম। এমন সময়ে গেস্ট হাউসের এক বেয়ারা এসে বলেন, আপনাদের আরও ভালো ঘরের ব্যবস্থা হয়েছে। আমার সঙ্গে চলুন।
আমরা সেই কথা শুনে তার সঙ্গে যাই। গেস্ট হাউসে আমাদের বসিয়েই রাখে বেশ কয়েক ঘণ্টা। যখন তাদের বলি, কী ব্যাপার। এখানে নিয়ে এসে বসিয়ে রেখেছেন, ঘর দিচ্ছেন না? ম্যানেজার তখন ফিসফিস করে বলে– আপনাদের এখানে থাকতে দেয়া যাবে না মাস্টারমশাই। আপনারা চলে যান।
এভাবে হেনস্তা হওয়ার পর শিক্ষকরা সবাই খুব অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু কারণটা তখনও বুঝতে পারেননি। যে শিক্ষক সংগঠনের নেতার মাধ্যমে হোটেল বুকিং করেছিলেন, তাকে খবর দেন তারা। তিনি বলেন, তখনও আমরা কারণটাই বুঝতে পারিনি কেন এমন ব্যবহার করল হোটেল কর্তৃপক্ষ। আমাদের সংগঠনের নেতা মইদুল ইসলামকে ফোন করি। তিনি ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে আমাদের জানান, থাকতে হবে না আপনাদের ওখানে। বেরিয়ে আসুন।
পরে মইদুল ইসলাম আমাদের আসল কারণটা বলেন। তিনি জানান, ম্যানেজার তাকে বলেছে– পাড়ার লোকজন আপত্তি করছে এদের কয়েকজনের দাড়ি আর টুপি দেখে। আমরা খুবই অপমানিত ওই ঘটনায়। এই শিক্ষকরা সবাই একটি অরাজনৈতিক শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্য মুক্তি মঞ্চ নামে ওই সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মইদুল ইসলামের মাধ্যমেই ওই শিক্ষকরা হোটেল বুকিং করেছিলেন।
মইদুল ইসলাম বলেন, আমরা স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াই 'মোরা একই বৃন্তের দুটি কুসুম- হিন্দু ও মুসলমান। মাদ্রাসা হলেও অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী হিন্দু, স্টাফরাও অনেকে হিন্দু। সে রকম জায়গায় দাড়ি-টুপি আর পাজামা-পাঞ্জাবি দেখে বয়স্ক শিক্ষকদের গেস্ট হাউস থেকে তাড়িয়ে দেয়া হলো- এটি কি আমাদের বাংলার সংস্কৃতি! এ ঘটনায় সত্যিই উদ্বেগজনক।
কলকাতায় সাধারণত গেস্ট হাউসে ধর্মীয় পরিচিতির কারণে থাকতে দেয়া হচ্ছে না- এমন ঘটনা সচরাচর শোনা যায় না। যদিও বেশ কয়েকজন বলছেন, বাংলাদেশ থেকে কলকাতার হোটেলে থাকতে গিয়ে তারা বাধা পেয়েছেন শুধু মুসলমান হওয়ার কারণে।
কিন্তু বিধাননগর বা সল্টলেকে মূলত শিক্ষিত মানুষ বসবাস করেন। সে রকম একটি এলাকার মানুষ দাড়ি-টুপি পরা মুসলমানরা এলাকায় ঘোরাঘুরি করছে দেখে আপত্তি তুললেন? তাদের থাকতে না দিতে গেস্ট হাউসের মালিককে চাপ দিলেন।
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা ও লেখিকা মীরাতুন নাহার অবশ্য মনে করেন, সম্পন্ন মানুষের মধ্যেই সাম্প্রদায়িক মনোভাব বেশি দেখা যায়। মইদুল ইসলাম এ ব্যাপারে একটি অভিযোগপত্র পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দফতরে।
ওই চিঠি পেয়েই দুটি গেস্ট হাউসের মোট পাঁচ কর্মীকে আটক করে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তার মধ্যে তিনজনকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দুদিনের পুলিশ হেফাজতের আদেশ দিয়েছেন কোর্ট।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.