সীমান্তে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সেনা, স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক !
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে হঠাৎ করে অতিরিক্ত সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) মোতায়েন করেছে মিয়ানমার। এতে স্থানীয়দের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বিশেষ করে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু-বাইশফাঁড়ি সীমান্ত এলাকাজুড়ে স্থাপন করেছে বাঙ্কার ও নিরাপত্তার নামে অসংখ্য চৌকি। এ নিয়ে স্থানীয়দের ভাবিয়ে তুলেছে।
তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বলছে, আতঙ্কের কিছু নেই। সার্বক্ষণিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে তারা। সরেজমিন সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু-ভাজাবনিয়া, মগপাড়া, বাইশফাঁড়ি সীমান্তের ওপারে বিশাল এলাকাজুড়ে অসংখ্য বাঙ্কার এবং নিরাপত্তার নামে চৌকি স্থাপন করেছে মিয়ানমার।
সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে উন্নত প্রযুক্তির ভারি অস্ত্র বাংলাদেশের দিকে তাক করে বসানো হয়েছে। রাতে মাঝে মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে থাকে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সীমান্তের ঘুমধুম ভাজাবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক ছৈয়দ হোসেন জানান, তিনি বিভিন্ন শাকসবজির চাষ করেন সীমান্তের একদম কাছাকাছি স্থানে। তার মাত্র কয়েকশ' গজ দূরে বাঙ্কার ও চৌকি স্থাপন করেছে মিয়ানমারের বিজিপির সদস্যরা।
তিনি বলেন, রাতে তারা অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন করে থাকে সীমান্তজুড়ে। এতে তারা খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। একই কথা আকতার উদ্দিন ও হোসেন আহমদসহ অসংখ্য স্থানীয়র। তারা জানান, গত কয়েক দিন ধরে হঠাৎ সীমান্তের ওপারে অনেক লোকজন দেখা যাচ্ছে, তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক। তারা আরও জানান, সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা, বিজিপি টহল জোরদার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারি যান নিয়ে প্রতিনিয়ত সীমান্তে যাতায়াত করছে মিয়ানমার বিজিপি ও সেনা সদস্যরা।
শূন্যরেখায় অবস্থান করা রোহিঙ্গারা জানান, সকাল থেকে সাতটি ট্রাকে করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা তুমব্রু সীমান্তের ওপারে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছে। সীমান্তের বেড়া বরাবর বাঙ্কারগুলোতেও অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমার সেনারা। সেনাদের সঙ্গে তাদের সীমান্ত রক্ষী পুলিশ (বিজিপি) সদস্যরাও রয়েছে বলে তারা জানান।
তুমব্রু শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ জানান, মিয়ানমার সেনারা সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় মর্টারসহ অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছে। তাদের সঙ্গে বিজিপির সদস্যদেরও দেখা যাচ্ছে। এতে শূন্যরেখার রোহিঙ্গারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
সীমান্তের এমন পরিস্থিতিতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। ঘুমধুম ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি মেম্বার খালেদা বেগম বলেন, গত কয়েক দিন ধরে সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা এবং লোকজনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা স্থানীয় চৌকিদার, দফাদারদের সীমান্তে পাহারারত অবস্থায় রেখেছি।
যাতে কেউ সীমান্ত অনুপ্রবেশ করে এপারে আসতে না পারে। কক্সবাজার-৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ জানান, সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার বিজিপির অতিরিক্ত সদস্যের অবস্থান সম্পর্কে অবগত রয়েছি। এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই, সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.