ড্রোন উড্ডয়ন নীতি মালা 2020 জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার।
৫ কেজি ওজনের বেশি ড্রোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে জননিরাপত্তা বিভাগের অনাপত্তি নিতে হবে। তবে খেলনা জাতীয় ড্রোনের জন্য অনুমতি লাগবে না। আর ড্রোন আমদানির ক্ষেত্রে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত পদ্ধতি ও আমদানি নীতি পালন করতে হবে। পাশাপাশি বিমানবন্দরের ৩ কিলোমিটারের ভেতরসহ নিষিদ্ধ ও বিপজ্জনক এলাকায় ডোন উড্ডয়ন করা যাবে না।
উল্লিখিত বিধান রেখে ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা-২০২০ চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির নির্দেশ ক্রমে গেজেট জারি করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, শর্ত ভঙ্গ করে কেউ উৎপাদন ও উড্ডয়ন করলে দণ্ডবিধি-১৮৬০ ও বেসামরিক বিমান চলাচল আইন-২০১৭ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিশ্বব্যাপী কৃষিকাজ, কৃষি উন্নয়ন ও আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ, পরিবেশ ও ফসলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া মশার ওষুধ ও কীটনাশক স্প্রে, বিভিন্ন প্রকার সার্ভে, চলচ্চিত্র নির্মাণ, গবেষণা, জরুরি সাহায্য প্রেরণ, নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মানুষবিহীন আকাশযান ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলায়ও এর ব্যবহার বাড়ছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ভঙ্গ, জনসাধারণ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতির মতো অনৈতিক, বেআইনি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে এ প্রযুক্তি ব্যবহার রোধে আমদানি ও ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে মানবকল্যাণ, রাষ্ট্রীয় বহুবিদ উন্নয়ন ও নিরাপত্তা কাজে ব্যবহারের প্রয়োজনে ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়নের সুনিয়ন্ত্রণ অনুমোদনের জন্য এ নীতিমালা করা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয়, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, গোপনীয়তা, বিমান চলাচলের সুরক্ষা ভঙ্গকারী ড্রোনচালক বা নিয়োগকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি জনসাধারণ, প্রাণীর জীবন এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ও সম্পত্তির ক্ষতি হলে দেশের প্রচলিত আইনে দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দণ্ড ও আর্থিক দণ্ড দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
নীতিমালায় ড্রোন উড্ডয়নের জন্য গ্রিন, ইয়েলো ও রেড- এ ৩ জোনে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রিন জোনে সর্বোচ্চ ৫০ ফুট পর্যন্ত উড়ানো যাবে এবং সেটি বিমানবন্দরের ৩ থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে করা যাবে। তবে ১০০ ফুট উচ্চতায় উড্ডয়নের ক্ষেত্রে বিমানবন্দর থেকে ৫ কিলোমিটারের বাইরে যেতে হবে। তবে গ্রিন জোনে উড্ডয়নের জন্য কোনো ধরনের অনুমতির প্রয়োজন হবে না।
ইয়েলো জোনে রয়েছে সংরক্ষিত এলাকা (রাষ্ট্রের ভূমি বা আঞ্চলিক জলসীমার উপরিভাগে কোনো সুনির্দিষ্ট আকাশসীমা যার অভ্যন্তরে বিমান চলাচল নির্দিষ্ট কিছু শর্তসাপেক্ষে সংরক্ষিত)। এছাড়া রয়েছে সামরিক ও ঘনবসতি জনসমাগম পূর্ণ এলাকা। অনুমোদন সাপেক্ষে এ জোনে উড্ডয়ন করা যাবে। আর রেড জোনের আওতাভুক্ত হচ্ছে নিষিদ্ধ এলাকা (রাষ্ট্রের ভূমি বা আঞ্চলিক জলসীমার উপরিভাগে কোনো সুনির্দিষ্ট আকাশসীমা যার অভ্যন্তরে যে কোনো বিমান চলাচল নিষিদ্ধ)। রয়েছে বিপজ্জনক এলাকা (কোনো আকাশসীমা যার অভ্যন্তরে কোনো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিমানের উড্ডয়ন বিপজ্জনক) ও বিমানবন্দর, কেপিআই ও বিশেষ কেপিআই এলাকা। সেখানে কোনো ড্রোন উড্ডয়ন করা যাবে না। তবে বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে পরিচালনা করা যাবে।
সূত্রমতে গ্রিন জোনে ৫ কেজি ওজনের ড্রোন ১০০ ফুট উচ্চতায় বিনোদন হিসেবে অনুমতি ছাড়াই পরিচালনা করা যাবে। তবে এর বেশি হলে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নির্ধারিত নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হবে।
এছাড়া রাষ্ট্রীয় ব্যতীত কোনো ড্রোনই রাতে উড্ডয়ন করা যাবে না। ড্রোন উড্ডয়ন সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি, ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার জন্য হুমকির কারণ হতে পারবে না। পাশাপাশি অবকাঠামো, গাছপালা, ফসল, যানবাহন চলাচল, বিমান চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য হুমকি হলেও তা উড়ানো যাবে না। আর সব সময় অফিস-আদালত, বাণিজ্যিক স্থান, বাজার, আবাসিক ভবনের ৩০ মিটার বাইরে এর উড্ডয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
তবে বেবিচকের অনুমোদন পাওয়ার পর কোনো ধরনের শর্ত লঙ্ঘন করলে অনুমোদন বাতিল করা হবে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিশেষ অনুমতি ছাড়া ভিভিআইপির সভা-সমাবেশের স্থানের দুই কিলোমিটারের মধ্যে ৩ দিন আগে সব শ্রেণির ড্রোন উড্ডয়ন নিষিদ্ধ থাকবে। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ড্রোন পরিচালনা করা যাবে।
আর যে কোনো খেলার স্থানে, সভা-সমাবেশে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলা, ইভেন্ট চলাকালীন ওই স্থানের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে ড্রোন উড্ডয়নের ক্ষেত্রে বেবিচকের বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানরত কোনো বিদেশি মিশনে কর্মরত ব্যক্তি, কূটনীতিক কর্তৃক ড্রোন উড্ডয়নের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেবিচকের অনুমোদন নিতে হবে।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে- বিনোদন, শিক্ষা, গবেষণা ও জরিপ কাজে ব্যবহারের জন্য ৫ কেজি ওজনের বেশি ড্রোন ও ড্রোনের যন্ত্রাংশ আমদানির আগেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি নিতে হবে। সেখানে বিস্তারিত সুনির্দিষ্ট বর্ণনা, স্পেসিফিকেশন ও সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে।
আর অনাপত্তি ইস্যুর ১ বছরের মধ্যে তা আমদানি করা যাবে। পাশাপাশি ড্রোন তৈরি ও সংযোজনের কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে বিস্তারিত স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি নিতে হবে।
ড্রোনের বিশ্ব পরিস্থিতি : অ্যারোস্পেস বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান টিল গ্রুপের গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সালে অসামরিক ড্রোনের বাজার মূল্য ছিল ৪৯০ কোটি মার্কিন ডলার। সংস্থাটি মনে করছে আগামী ১ দশকের মধ্যে এর বাজার মূল্য তিনগুণ বেড়ে ১৪৩০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে।
সুইডেনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের জরিপ মতে, ব্রিটেন সবচেয়ে বেশি ড্রোন আমদানি করে থাকে এবং ড্রোন রফতানির শীর্ষে রয়েছে ইসরাইল। ড্রোন আমদানিতে বিশ্বে ব্রিটেন মোট আমদানির ৩৩.৯ শতাংশ এবং ভারত ১৩.২ শতাংশ দখল করে আছে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.