আট লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ!
দমন-পীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা সব রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে দিয়েছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার ২ লাখ ৩৭ হাজার রোহিঙ্গার নাম দেওয়ার মাধ্যমে তালিকা হস্তান্তর পুরোপুরি সম্পন্ন হলো। এর আগে ৫ লাখ ৯৩ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হয়েছিল।
নিরাপদে রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফেরত পাঠানোই এই তালিকা হস্তান্তরের লক্ষ্য। চুক্তি মোতাবেক, তালিকা যাচাই করে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা মিয়ানমারের। কিন্তু যাচাইয়ের ক্ষেত্রে দেশটি ‘ধীরে চলো’ নীতি অনুসরণ করছে।
এখন পর্যন্ত মাত্র ৪২ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই করেছে মিয়ানমার। তার ওপর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুই করা যায়নি। কবে শুরু হবে তা কেউ জানে না। তবে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনার লক্ষ্যে আগামী ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। চীনের উদ্যোগে বৈঠকটি হচ্ছে।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিতে ৮ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা করেছি। এই তালিকার সব আমরা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর সম্পন্ন করেছি। মিয়ানমার এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই সম্পন্ন করেছে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেন, রোহিঙ্গাদের যাচাই ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের গতি খুবই ধীর।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের ধীরগতি দেখে মনে হয় তাদের এ বিষয়ে কোনো ইচ্ছা নেই। তারা খুব আস্তে আস্তে যায়। কোভিড আর মিয়ানমারে ইলেকশনের অজুহাত দিয়ে এতদিন প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনো কাজই করেনি দেশটি।’ গত সপ্তাহে তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে একটা বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তা করার জন্য চীন মধ্যস্থতা করছে। ফলে চীন উদ্যোগ নিয়ে এই বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মিয়ানমার রাজি হয়নি। এখন তার চেয়ে নিচের পর্যায়ে তিন দেশের মধ্যে বৈঠক ১৯ জানুয়ারি হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক ঢাকায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন নিচের পর্যায়ে বৈঠক কোথায় হবে সেটা নিশ্চিত হয়নি। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখন মিয়ানমার সফর করছেন। তার সফরের মাধ্যমে রাজনৈতিক পর্যায়ে একটা বোঝাপড়া হলে তার ভিত্তিতে ১৯ জানুয়ারির বৈঠকে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এ বিষয়ে বলেন, ‘চীন এ বৈঠকের আয়োজন করছে। ফলে কীভাবে কোথায় বৈঠক হবে তারা উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করবে।’ মিয়ানমারে ২০১৭ সালের আগস্টে সেনা অভিযানের সময়ে নিষ্ঠুর নিপীড়নের শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তাদের ফেরত পাঠাতে একই বছরের ২৩ নভেম্বর দুদেশের মধ্যে চুক্তি সই হয়। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি সই হয় ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট।
কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। নানা অজুহাত মিয়ানমার প্রক্রিয়াটির গতি ধীর করছে। রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্যে তাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার শর্ত দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা এ দেশে চাপের সৃষ্টি করেছে। এদিকে সেনা অভিযান ও উগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আট লাখ ৩০ হাজার বলে নিবন্ধন করা সম্ভব হলেও আগে থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বাস করছে।
তারা বিভিন্ন সময়ে অর্থনৈতিক কারণে বাংলাদেশে এসেছিল। তাদের নিবন্ধন করেনি বাংলাদেশ। তাদের সংখ্যা তিন থেকে চার লাখ হবে বলে অনুমান করা হয়। ফলে বাংলাদেশে বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১১ লাখের বেশি। তারা সবাই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে এ দেশে এসেছেন।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.