পিকে হালদারের ‘সহযোগীদের’ ১০৬০ কোটি টাকা ফ্রিজ!

প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের মুখে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের ৬২ জন ‘সহযোগীদের’ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা ফ্রিজ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, পিকে হালদারের ৬২ জন ‘সহযোগীর’ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে। দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন এ পর্যন্ত ৬২ জনের সঙ্গে তার (পিকে হালদার) লিংক পাওয়া গেছে। বিভিন্ন জনের মাধ্যমে তার বিভিন্ন দিকে সূত্র আছে। এরই মধ্যে অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
দুদক সচিব বলেন, পিকে হালদারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তার এক ‘সহযোগী’ অবন্তিকাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত জানানো হবে। গত ২০ ডিসেম্বর দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, পিকে হালদারের পাচারের অর্থ ৭০ থেকে ৮০ জন নারীর (গার্লফ্রেন্ড) অ্যাকাউন্টে জমা পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুদকের অনুসন্ধানে জানতে পেরেছি, তিনি অবিবাহিত এবং অবিবাহিত থাকার সুবাদে পাচারের কোটি কোটি টাকা ৭০-৮০ জন গার্লফ্রেন্ডের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছেন। আমরা সেসব অ্যাকাউন্টের বিষয়েও অনুসন্ধান করছি।
খুরশীদ আলম আরও বলেছিলেন, হাইকোর্ট থেকে পিকে হালদারের বিষয়ে রুল হওয়ার পর আমার কাছে বেশকিছু ভুক্তভোগী এসেছেন- যাদের টাকা পিকে হালদার গার্লফ্রেন্ডের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছেন। এসব গার্লফ্রেন্ডের নাম-ঠিকানা পেয়েছি। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে আপাতত বলতে পারছি না।
প্রসঙ্গত, প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মামলা তদন্তে রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আর্থিক খাত থেকে আত্মীয়স্বজন চক্রের মাধ্যমে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেয়ার কারিগর পিকে হালদারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অফিসিয়াল তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। দুদক ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে।
এছাড়া দুদকের ক্যাসিনো দুর্নীতির মামলায় চার্জশিট তালিকায় লিজিং কোম্পানি ও আর্থিক খাত থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারে জড়িত পিকে হালদারের নামও রয়েছে। ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতায় তার বিরুদ্ধে গত ৮ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা লোপাট করে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান বলে গত বছরের শুরুতে খবর আসে। এরপর আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে তাকে অপসারণের পাশাপাশি তার সম্পত্তি জব্দ করা হয়।
বর্তমানে তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন। তবে পিকে হালদার পালিয়ে যাওয়ার পরই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে। দুদকের এই মামলার মুখে নিরাপত্তা চেয়ে গত ১৯ অক্টোবর হাইকোর্টে আবেদন করে আইএলএফএসএল জানায়, আত্মসাত করা অর্থ ফেরত দিতে জীবনের নিরাপত্তার জন্য আদালতের আশ্রয়ে পিকে হালদার দেশে ফিরতে চাইছেন। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদারের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে আবেদন করে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেড (আইএলএফএসএল)।
এ আবেদন গ্রহণ করে ২১ অক্টোবর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশে আদালত বলেন, পিকে হালদার বিমান থেকে দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তিনি যাতে ‘নিরাপদে’ দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করতে পারেন সেজন্য পুলিশ প্রধান, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেন আদালত।
কিন্তু ২৪ অক্টোবর জানা গেল পিকে হালদার দেশে ফিরছেন না। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) আইনজীবী ই-মেইল করে অ্যাটর্নি জেনারেলেরে কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে পিকে হালদারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান তার আইনজীবীরা।
পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলের সহায়তায় আবেদন করে দুদক। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলার নথি চায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। এরপর গত ২ ডিসেম্বর পিকে হালদারকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলের জন্য পরোয়ানা জারি করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালত।
পরে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টারের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, পিকে হালদারকে গ্রেফতারে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)।
Bangladeshi Taka Converter
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.