ন্যাটোকেও পালটা ধমক চীনের!
জি-৭ নেতাদের হুমকির পর এবার ন্যাটোকেও পালটা ধমক দিল বেইজিং। চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সোমবার ন্যাটো জোটের হুঁশিয়ারির জবাবে মঙ্গলবার এ তড়িৎ প্রতিক্রিয়া দিল চীনের ইইউ মিশন। ন্যাটোর হুমকিকে বাড়াবাড়ি বলে আখ্যা দিয়ে বলেছে, অতিরঞ্জিত বক্তব্য থেকে দূরে থাকুন। ইংরেজি ও চায়না দুই ভাষাতেই এ বিবৃতি প্রকাশ করেছে বেইজিং। এএফপি।
ন্যাটোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চীনের ক্রমবিকাশকে যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করুন। তথাকথিত হুমকি তত্ত্বের ভিত্তিতে অতিরঞ্জিত কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। গোষ্ঠীগত রাজনীতির মাধ্যমে কৌশলে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার অজুহাত হিসাবে চীনের বৈধ স্বার্থ ও আইনি অধিকারকে ব্যবহার করবেন না।’
বিবৃতিতে বেইজিং আরও বলেছে, ‘ন্যাটোর অভিযোগগুলোর অর্থ হচ্ছে-চীনের শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের নিন্দা, আন্তর্জাতিক নীতিমালার ভুল ব্যাখ্যা এবং একটি শীতল যুদ্ধের মানসিকতারই নামান্তর। বেইজিং বিষয়ে আলোচনা বাদ দিয়ে আরও কার্যকর আলাপ করার তাগিদ চীন বলেছে, ন্যাটোর উচিত বেইজিংয়ের সার্বিক উন্নয়নকে যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বন্ধ করা। একই সঙ্গে চীনের সার্বিক উন্নয়নে ন্যাটোকে ঈর্ষান্বিত না হওয়ারও আহ্বান জানায় বেইজিং। ব্রাসেলসে একদিনের ওই ন্যাটো সম্মেলনে জোটের শীর্ষ নেতারা বলেন, চীন নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি ক্রমবর্ধমান হারে বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির সামরিক ঘনিষ্টতা রয়েছে, যা সারাবিশ্বের জন্য হুমকি।
এদিন সিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টেলটেনবার্গ বলেন, চীনের সামরিক খাতের বাজেট বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দেশটির নৌবাহিনী বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী। চীন ধীরে ধীরে সামরিক খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, যা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্য হুমকি। চীনা মিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে অভিযোগগুলোর যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যাও দিয়েছে বেইজিং।
তারা বলেছে, চীন শুরু থেকেই একটি প্রতিরক্ষা নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল, এখনো আছে। সামরিক ক্ষেত্রকে আধুনিকায়ন ন্যায়সঙ্গত, যুক্তিসঙ্গত, উন্মুক্ত এবং স্বচ্ছ। নাটোর সদস্যদের তুলনায় অনেক কম পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে চীনের। আর চীন কখনো অপারমাণবিক রাষ্ট্রের জন্য হুমকি নয়।
নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই চীনের সঙ্গে শীতল যুদ্ধে জড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর সে কারণেই চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের দরজায় কড়া নাড়ছেন তিনি। লন্ডনের জি-৭ সম্মেলনের পর ন্যাটোর ব্রাসেলস বৈঠকেও চীনের বিরুদ্ধে ইইউ নেতাদের জোটবদ্ধের কলকাঠি নাড়েন বাইডেন। তবে সে বিষয়ে খুব একটা সফলতা আসবে কিনা, এ বিষয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্ট অনেক নেতাই। বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগেই বাইডেনের ‘চীন ঠেকাও’ মিশনে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছেন নেতারা।
জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল জোর দিয়ে বলেছেন, জোটের সদস্যরা বেইজিং বিষয়ে অলিখিত চাপের মধ্যে রয়েছে। চীনকে অতিমাত্রায় আলোচনায় আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। চীন অনেক ইস্যুতে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও, তারা অনেক ইস্যুতে আমাদের অংশীদারও।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ‘ন্যাটো যেন চীন ইস্যুতে নিজেকে ঠুনকো করে না ফেলে। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে দূরে ঠেলে না দেয়।’ উত্তর আটলান্টিকের ওপর দৃষ্টি নিবন্ধ করে তিনি বলেন, ‘ন্যাটো হচ্ছে সেনাদের সংগঠন। চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সেনাবিষয়ক নয়।’ এদিকে বুধবার জেনেভায় অনুষ্ঠেয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বাইডেনের বৈঠককে ইইউর এক কর্মকর্তা ‘সম্ভাব্য নিষ্পত্তিহীন’ মনে করে বলেন ‘তবু কূটনীতি ফিরে এসেছে’।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.