বিদেশী পাখি পালন করুন, বেকারত্ব দূর করুন
শখে যারা পাখি পালন করেন তারা সাধারণত কেসবার্ড বা খাঁচার পাখি পালন করেন। খাঁচার পাখিগুলো আমাদের দেশি পাখি নয় এগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা। আমাদের আবহাওয়ায় খাঁচার পাখি স্বাচ্ছন্দবোধ করে, তাই পাখিপ্রেমিকদের কাছে খাঁচার পাখি আজ জনপ্রিয়।
‘আমাদের দেশের অনেকের বদ্ধমূল ধারণা যে খাঁচার পাখি কেসবার্ডগুলোকে ছেড়ে দেয়া যায়। আর ওই পাখিদের খাঁচায় বদ্ধ রাখা অন্যায়। আসলে তা ঠিক নয়। কারণ কেসবার্ডগুলোকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দিলে অন্যান্য পাখি এদের মেরে ফেলবে। আর কেসবার্ড পালন করলে এতে আইনের কোন বাধা নেই। এমনকি এই কেসবার্ড প্রকল্প নিয়ে পাখি রফতানিও করা যায়।
‘আমাদের দেশের অনেকের বদ্ধমূল ধারণা যে খাঁচার পাখি কেসবার্ডগুলোকে ছেড়ে দেয়া যায়। আর ওই পাখিদের খাঁচায় বদ্ধ রাখা অন্যায়। আসলে তা ঠিক নয়। কারণ কেসবার্ডগুলোকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দিলে অন্যান্য পাখি এদের মেরে ফেলবে। আর কেসবার্ড পালন করলে এতে আইনের কোন বাধা নেই। এমনকি এই কেসবার্ড প্রকল্প নিয়ে পাখি রফতানিও করা যায়।
বিদেশী পাখি পালন বাংলাদেশে। ঘরের মধ্যে পাখ পাখালির ডাকাডকি। চোখ মেলতেই মন জুড়িয়ে গেল। খাঁচারছোট পাখিটি আপনাকে মুগ্ধ করল।
পাখিটি দেশী নয়। বাজরিগার,লাভ বার্ড, ফিঞ্চ,সান কৌনর এরকম কিছু। এমন দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে।বসতবাড়িতে বিদেশী পাখি পালন করা হচ্ছে। নেহায়েতই অনেকে শখের বসে পালন করছেন।যেটা কয়েক বছর আগে ওভাবা যেত না। এখন বিদেশী পাখি সহজলোভ্য। শখ নয়। পেশা হয়ে উঠেছে বিদেশী পাখি পালন।
পাখি পালন
বিদেশী পাখি পালন অনেক যুবকেরই আয়ের উৎস। বানিজ্যিকভাবে পাখির খামার হচ্ছে।
বিদেশী পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল
- বাজরিগার (baazigar)
- লাভ বার্ড
- ফিঞ্চ
- ককাটেইল
- ডোভ
- গ্রে গ্রিন সিনামন টারকুইজিন
- রেড হেড অপলাইন টারকুইজিন
- ইলেক্টাস
- ম্যাকাউ
- মুলাক্কান কাকাতুয়া
- কাইফ প্যারট
- প্রিন্স অব ওয়েলস
- চ্যাটারি লরি
- লুটিনো রিন নেক প্যারট
- আলবিনো রিন
- রেড কালার লরি
- সান কৌনর
- রেড লরি
- ভায়োলেট লেক লরি
এদের অনেকের আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া,আফ্রিকা,নর্থ আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশে এই সব পাখি ডিমবাচ্চা করেছে। বাংলাদেশী কিছু সংখ্যক ব্রিডার।
দীর্ঘদিন ধরে পাখি পালন করছেন যারা। তারা ব্রিডিং করতে সক্ষম হয়েছে। এমন কিছু মিউটেশন তারা করেছেন।যা আগে কেউ করতে পারে নি।বাংলাদেশে উৎপাদিত পাখি বিশ্বমানের। উন্নত বিশ্বে যে পরিবেশে পাখি পালন করে।তার সবটাই মেনে চলছেনআমাদের দেশের ব্রিডাররা।পাশ্ববর্তী দেশের পাখি প্রেমিকদের পছন্দ বাংলাদেশের পাখি।কারণটা হল, ভারত, পাকিস্তানের চেয়ে মানগত দিক দিয়ে বাংলাদেশের পাখি ভাল।বর্তমানে প্রায় পাঁচ লক্ষাধীক মানুষ বিদেশী পাখি পালন এর সাথে জড়িত। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।বিশেষ করে তরুনরা আকৃষ্ট হচ্ছে।
বিদেশী পাখি পালন এ প্রধান প্রতিবন্ধকতা
- পাখি খাদ্যের দাম বেশি
- ওষুধের দাম বেশি
- ডিএনএ টেষ্টিং ল্যাব না থাকা
- পাখি পালন এর এক্সেসরিজের দাম বেশি
- স্পেশালিষ্ট ডক্টর নেই
যার কারণে সম্ভাবনাময় বিদেশি পাখির প্রসার কম ঘটছে। মান ভাল নয়।তারপরও প্রতিবেশী দেশগুলো পাখি রফতানি করে| রফতানি বন্ধা থাকা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সরকারী পৃষ্টপোষকতার অভাবে আমরা পাখি রফতানি করতে পারছিনা। চোরাই পথে অসুস্থ পাখি আসে। যা পাখি প্রেমিকদের চিন্তার কারণ এবং এটা একটা বড় বিদেশী পাখি পালন এ প্রতিবন্ধকতা।
বাংলাদেশে বিদেশী পাখি পালন ও পাখির খামার
পার ব্লু লাভ বার্ড (Par Blue)| একটি দুর্লভ প্রজাতির লাভ বার্ড।মিজা ইসকান্দার। তিনি পার ব্লু (Par Blue) বাংলাদেশে ব্রিডিং করতে সক্ষম হয়েছেন। এ এক বিরল কৃতিত্ব।তিনি বলেন–বাংলাদেশের আবহাওয়া লাভ বার্ডের জন্য খুব ভালো লাভ বার্ডের অসুখ বিসুখ নেই, সারা বিশ্বে এই পাখির চাহিদা ব্যাপক।সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লাভ বার্ড রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।তার মতে বাংলাদেশেউৎপাদিত লাভ বার্ড বিশ্বমানের।
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পাখি রেড কালার লরি, সান কৌনর, রেড লরি, ভায়োলেট লেক লরি।এ সবগুলোপাখির ডিম বাচ্চা সফলভাবে যিনি করেছেন তার নাম রনি রাজ আহমেদ।তিনি কলোনী পদ্বতিতে বাংলাদেশে প্রথম ম্যাকাও পাখির ব্রিডিং করতে সফল হয়েছেন।বাংলাদেশের জন্য যা বিরলগৌরবের বিষয়। বিদেশীরাই তার খামারের প্রধান দর্শনার্থী।তিনি জানান, ভারত থেকে প্রচুর লোকজন তার খামার দেখতে আসেন। তার পাখি কিনে নিয়ে যান।
সফল পাখির খামারি
রনি রাজ আহমেদ এর মতে – বিদেশী পাখি পালন হতে পারে বেকারদের আয়ের উৎস।তার কাছ থেকে পাখি নিয়েছেন, পরবর্তীতে বানিজ্যিক ভাবে সফল হয়েছেন এমন তরুনদের সংখ্যা অগনিত বলে তিনি জানান।পাখি পালন ক্ষাতে সরকারী পৃষ্টপোষকতার দরকার বলে তিনি মনে করেন।
চট্রগ্রামের রিজওয়ানুর রহমান ইনকিউবেটরে ফিঞ্চের বাচ্চা উৎপাদন করেছেন।বাংলাদেশে ইনকিউবিটরে Blue গোল্ডিয়ানের বাচ্চা উৎপাদন এই প্রথম বলে তিনি জানান।ফিরোজ আহমেদ নতুন অনেক প্রজাতির পাখি উৎপাদনে করেছেন।যা তার আগে বাংলাদেশে কেউ করতে পেরেছে বলে জানা যায় না।বাংলাদেশে প্রথম নিওফেমা প্রজাতির Opaline splendid, cinnamon splendid, black splendid, black turquoisine, Double dark violet splendid ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেছে তার পাখির খামারে।
লাভ বার্ড fischer’s lovebird
ঢাকার মিরপুরে বসবাসকারী মাহামুদুল হাসান মঞ্জু, নিজের বাড়ির গ্যারেজ এ গড়ে তুলেছেন বিশাল পাখির খামার।
নিতান্ত সখের বশেই তার এই পাখি পালন। শীতে পাখিদের খুব বেশি কষ্ট হয় বললেন তিনি।
এই জানুয়ারির প্রচন্ড শীতে তার ১০ টি বিদেশী পাখি মারা যায়। পাখি পালন একটি শখ যা তার এখন নেশায় পরিনত হয়েছে। অফিস করে বাসায় এসে পাখিদের সাথে সময় দিতে ভালো লাগে।মনজু সাহেবের খামারে আছে বাজরিগার, লাভ বার্ড, কোকোটেইল, ফিঞ্চ সহ আরো অনেক প্রজাতির পাখি।
পাখি পালন খাতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন
সরকার পশু সম্পদ ক্ষাতে প্রচুর অর্থ ব্যায় করে। এর থেকে সামান্য পরিমান অর্থ যদি এই ক্ষাতে ব্যয় করতো। একটুসঠিক গাইড লাইন দিতো।পাশাপাশি রপ্তানি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। তাহলে পাখি পালন করে, খাঁচার বিদেশী নানা রকম পাখি রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।পাশাপাশি প্রচুর বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হতো। বর্তমানে বর্ডার দিয়ে ব্যাপক পাখি পাচার হচ্ছে।প্রায়ই বিজিপিরহাতে আটক হয় বিভিন্ন রকম পাখি। পাচারের কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।সামাজিকভাবে পাখি পালনের সুফল অনেক। পাখি পালনে একদিনে অর্থ উপার্জন অন্য দিকে সময়টা ভালো থাকে।সব কিছু মিলিয়ে এই সেক্টরে দ্রুত সরকারী সাহায্য সহায়তা প্রদান করা দরকার।সরকার ইচ্ছে করলে দেশীয় বিখ্যাত পাখি ব্রিডারদের বিদেশের পাখির খামার দেখার ব্যবস্থা করে দিতে পারে।খাঁচার পাখি বিশ্বের অনেক দেশেরই প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যম বলে জানা যায়।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.