টার্কি পালন বেকার যুবকদের আশার আলো
গরু, খাসি, মুরগী, যাই বলি না কেন। এ সবের কোনটায় প্রচুর ফ্যাট কিংবা কোলেষ্টেরল এর স্বর্গরাজ্য। স্বাস্থ্য সচেতন যারা, তারা হয় এসব পরিমিত খান, নয় এড়িয়ে চলেন। ইদানিং মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বেড়েছে। স্বাস্থ্য টিপস এর কদর বেড়েছে ইদানিং। তবে সবার জন্য সুখবর নিয়ে এসেছে বাংলাদেশে টার্কি পালন। বাংলাদেশে টার্কি পালন যুবকদের আয়ের নতুন দিগন্তের উন্মোচন করলো।
Turkey হল উত্তর আমেরিকার বংশোদ্ভুত এক বিশেষ প্রজাতির মুরগী।
ইউরোপ সহ পৃথিবীর বহু দেশে টার্কির মাংশ অসম্ভব রকম জনপ্রিয়। মধ্যপ্রাচ্চের দেশগুলোতে প্রচুর বিক্রি হয়।
আমেরিকানদের কাছে টার্কির রোষ্ট খুবই প্রিয়। পৃথিবীর মধ্যে আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি টার্কি পালন করা হয়। বছরে দেশটির টার্কি মাংস উৎপাদন ২৫ লক্ষ টন। এক সময় এরা ছিল বন্য পাখি। তবে এখন এরা গৃহেও পালিত হচ্ছে।
- টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমান বেশি। কোলেষ্টেরল নেই বললেই চলে।
- টার্কির মাংসে আছে আয়রন, জিংক, লৌহ,সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, এমাইনো এসিড, ট্রিপ্টোফ্যান, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি৬ ও বি১২।
- এমাইনো এসিড, ট্রিপ্টোফ্যান উপস্থিতি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- টার্কিতে বিদ্যমান অধিক পরিমানে ভিটামিন ই এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে।
- টার্কির প্রতি ১০০ কেজি মাংসে ১৬২ ক্যালরি শক্তি থাকে বলে জানা যায়। টার্কির মাংসে ২৬ % এর মতো আমিষ থাকে।
বাংলাদেশে টার্কি পালন
আমাদের দেশে টার্কি মুরগী নামে এরা পরিচিত। সাধারন মুরগীর মতোই এদের পালন করা যায়। উৎপাদন ক্ষমতা যেমন বেশি। তেমনি টার্কির মাংশ খেতে সুস্বাদু। বাংলাদেশে টার্কি পালন এ প্রচুর বানিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে এমনটাই জানালেন রাহাত টার্কি এন্ড এগ্রো ফার্মের মালিক এন জে রাহাত। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানিখোলাতে তার ফার্মে ছোট বড় প্রায় দুই শতাধিক Turkey রয়েছে। তিনি জানান , এবার ঈদে টার্কি অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে। শুধু বিক্রিই নয়, যারা তার কাছ থেকে কিনেন তাদের তিনি প্রাথমিক প্রশিক্ষন দিয়ে থাকেন। এ জন্য তিনি কোন টাকা পয়সা নেন না।

নরসিংন্দীর পলাশ উপজেলার খানেপুর ও পাইকশা উপজেলায় শতাধিক টার্কি খামার গড়ে উঠেছে। ৩০০ টির মত টার্কি পালন করে নরসিংন্দীর আরেক খামারি সফিকুলের খামারে। তিনি জানান, ৬/৭ মাসে এরা ডিম পাড়ে। ততদিনে টার্কির দাম ৬/৭ হাজার টাকার মতো হয়। একদিনের টার্কি মুরগির বাচ্চার দাম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। টার্কির খাওয়া দাওয়া সাধারন মুরগীর মতোই তবে এরা ঘাস, লতা পাতা, পোকা মাকড়, শাঁক সবজি খেতে পছন্দ করে। এগুলো এমনিতেই বসত বাড়ির আশপাশে হয়। সে জন্য বাড়তি অর্থ ব্যায় করতে হয় না। ফলে উৎপাদন খরচ কম পড়ে বলে জানান সফিকুল।
নরসিংদীর অনেকগুলো গ্রামে অসংখ্য টার্কি মুরগীর খামার গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে টার্কি পালন হচ্ছে এখন ঘরে ঘরে।
চাকরি কিংবা ব্যবসার পাশাপাশি অনেকেরই বাড়তি আয়ের উৎস টার্কি পালন। সে রকমই একজন আব্দুল হক। ৫০টির মতো টার্কি তার খামারে রয়েছে। তিনি জানান, যে কেউ ছোট আকারের টার্কি পালন খামার করে ও চাকরির পাশাপশি বাড়তি উর্পাজন করতে পারে। কারণ টার্কি পালন এ খুব বেশি সময় দিতে হয় না। তাছাড়া পরিবারের গৃহিনী, ছেলে মেয়ে, কাজের লোকরা টার্কির দেখভাল করতে পারেন।
টার্কি পালন এ উল্লেখযোগ্য টিপস
- টার্কি মূলত মাংস উৎপাদনশীল জাত।
- ফার্মের মুরগীর খাবারে বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্য, দ্রুত বৃদ্বির জন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় এমন অভিযোগ বেশ পুরানো।
- টার্কি পালনে এসবের ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। প্রাকৃতিক খাবার খাইয়েই এদের বড় করা যায়।
- লাভবান হওয়া সম্ভব বলে জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভুইয়া টার্কি ফার্মের মালিক শরীফুল ইসলাম শরীফ।
রাজধানীর দক্ষিন মান্ডায় গড়ে উঠেছে কাঁশবন এগ্রো লিমিটেড।এই ফার্মে প্রায় তিন হাজারের ও বেশি টার্কি রয়েছে। এটি দেশের অন্যতম বৃহত্তম টার্কি পালন খামার।খামারের একজন অংশীদার সেলিম মিয়া বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, অল্প কিছু টাকা বিনিয়োগ করে টার্কি ব্যবসা গড়ে তুলতে পারেন।
যে কেউ শুরু করতে পারে বাংলাদেশে টার্কি পালন।
- টার্কির রোগ, খাদ্য, বাসস্থানের জন্য বেশি অর্থ খাটানোর প্রয়োজন পড়ে না।
- অল্প কিছু জায়গায় টার্কি খামার করে বিনিয়োগকৃত অর্থের দিগুনেরও বেশি লাভ করা সম্ভব ।
- টার্কি মুরগি বিক্রিতে খামারীদের দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় না।
- নতুন খামারীরা কিনে নিয়ে যান। ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায়।
এমনটাই জানালেন মিরাজ হোসেন। দুবাই থেকে দেশে এসে তিনি রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলে টার্কির ফার্ম গড়ে তুলেছেন।
বিদেশে টার্কি রোষ্ট, কাবাব হিসাবে বেশি খাওয়া হয়। আমাদের দেশে সাধারন মুরগীর মতো রান্না করে খাওয়া হয়। দেশের সুপার ষ্টোর গুলোতে টার্কি মুরগী বিক্রি হয়।

বাংলাদেশে টার্কি পালন কেন সুবিধাজনক
- বাংলাদেশের আবহাওয়া অনান্য পাখির মতো টার্কি পালনের জন্য সবচেয়ে উত্তম।
- ৮/১০ মাসে একটি টার্কি ১১ থেকে ১২ কেজি ওজন হতে পারে।
এমনটাই জানান নওগার জিল্লুর রহমান, ত্রিশ কাঠা জমির উপর তিন তলা বিশিষ্ট তার টার্কির খামার। বাংলাদেশের অন্যতম বড় খামারের মালিক তিনি।
শুধু টার্কি নয়, লাভ বার্ড, তিতির,কবুতর সহ প্রায় অর্ধশতাধিক প্রজাতির পাখি তার খামারে রয়েছে। লাভ বার্ড উৎপাদনেও তিনি এলাকায় তাক লাগিয়েছেন।
২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর গাজীপুরের সালনাতে প্রথমবারের মত টার্কি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। টার্কি সর্ম্পকে সচেতনতা বাড়াতে বাংলাদেশ টার্কি বার্ডস ডেভেলপমেন্ট এ্যাসোসিয়েশন (বিটিবিডিএ) এই উৎসবের আয়োজন করে।
টার্কি খামার ঃ বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ বিপ্লব
বাংলাদেশে টার্কি পালনে সবচেয়ে বড় সুবিধা এরা তৃনভোজী। টার্কি মুরগির খাবারের প্রায় ৫০ শতাংস লতা, পাতা, ঘাস পোকা মাকড়। ফলে উৎপাদন খরচ কম পড়ে।
অন্যদিকে টার্কির মাংশ খেতে সুস্বাদু কোলেষ্টেরল নেই বললেই চলে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার কারণে এর ব্যাপক চাহিদা বিদ্যমান।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সরকারী সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশে টার্কি পালন এ এক সময় মাংস রপ্তানি করে দেশ বৈদিশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেবার মতো নয়।
সহজ শর্তে লোন, কারিগরি সহযোগিতা আর উন্নত প্রশিক্ষন পেলে পোল্ট্রির মতো টার্কি পালন এবং উৎপাদনে বাংলাদেশে বিল্পব হতে পারে বলে টার্কি মুরগী খামারিসহ এ সেক্টরের সাথে জড়িত অভিজ্ঞরা মনে করছেন।
Bangladeshi Taka Converter
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.