বাংলাদেশের কবুতরের জাত ও দাম
পৃথিবীতে ৭০০ জাতের কবুতর আছে ।মাংস উৎপাদনের জন্য হোয়াইট কিং ,সিলভার কিং, লক্ষা উল্লেখযোগ্য কবুতরের জাত। কবুতর উড়ানোর জন্য গিরিবাজ ও রেসার অন্যতম। আমাদের দেশে প্রায় ৩০ প্রজাতির কবুতর আছে। মানুষ সাধারনত দুটি উদ্দেশ্যে কবুতর পালে ,একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে ,উড়ানোর জন্য আরেকটি চিত্তবিনোদনের জন্য। নিচে অামাদের দেশে যেসব কবুতর পালন করা হয়, সেগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটির বর্ণনা দেওয়া হলঃ
১.লাহোরী/সিরাজীঃ এরা বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে, কালো, সিল্ভার ও বাদামি বর্ণের হতে পারে ।এদেরকে ফেন্সি জাতের কবুতর বলা হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক সিরাজী কবুতরের মূল্য ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
২.ফ্যানটেল/লক্ষা : লক্ষা বা ফ্যানটেল কবুতরকে বাংলাদেশের অনেকেই এদেরকে ময়ুর পঙ্খি হিসেবে ডাকে। বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এদের লেজের দিকে ময়ূরের মত পাখা থাকে, তবে এরা উড়তে পারে না,তবে এরা দেখতে সুন্দর। প্রাপ্ত বয়স্ক লক্ষা কবুতরের মূল্য ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
৩.সিলভার কিং: কিং এর একটি জাত সিলভার কিং। এদের দেখতে অনেকটা মুরগীর মত লাগে এবং গায়ের রং সিলভার কালারের।প্রাপ্ত বয়স্ক সিলভার কিং কবুতরের মূল্য ৪০০০ থেকে ৬০০০ টাকা।
৪. মুখ্খী: এই কবুতরের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা মাথা বেশি নাড়াবে এবং এদের মাথার একটি অংশ সাদা রঙের হবে।এদের উভয় ডানার তিনটি উড়বার উপযোগী পালক সাদা হয় যা অন্য কোনো কবুতরে দেখা যায় না। গা এর রং কাল, সিল্ভার, হলুদ হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক মুক্ষী কবুতরের মূল্য ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা।
৫.সার্টিনঃ সার্টিন কবুতর দেখতে অনেক সুন্দর,এদের মাথায় ঝুটি ও পায়ে মোজা থাকে।প্রাপ্ত বয়স্ক মুক্ষী কবুতরের মূল্য ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা।
৬.ম্যাগপাইঃ এদের দেখতে অনেকটা বকের মত।উচ্চতায় অনেক লম্বা হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক ম্যাগপাই কবুতরের মূল্য ২০০০ থেকে ৬০০০ টাকা।
৭. আউলঃ এদের দেখতে অনেকটা সাদা পেচার মত লাগে বলে এদের নাম করন আউল করা হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক আউল কবুতরের মূল্য ২০০০ থেকে ৮০০০ টাকা।
৮. জকোবিনঃ জকোবিন এর মাথায় পশমগুলো উল্টা পাল্টা এবং অবিন্যস্ত থাকে ,মাথা দেখা যায় না পশম গুলোর কারণে।প্রাপ্ত বয়স্ক জেকোবিন কবুতরের মূল্য ৩০০০ থেকে ৬০০০ টাকা।
৯. হেল্মেটঃ হেলমেট কবুতরের মাথায় ছোট একটি অংশ জুড়ে বাদামি রং থাকে এবং বাকি সারা শরীর সাদা রঙের হয় বলে এদেরকে হেলমেট নামকরণ করা হয়।
১০.বিউটি হোমা: বিউটি হোমা সাধারণত সাদা রঙের হয় এদের ঠোঁট অন্য কবুতরের থেকে আলাদা হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক বিউটি হোমা কবুতরের মূল্য ৩০০০ থেকে ৭০০০ টাকা। তাছাড়া সবজি ৩০০০-১ লক্ষ টাকা, মাকসি ৬-৮ হাজার, ব্ল্যাক হোমার ২-৫ হাজার, রেড চেকার ১০-১৫ হাজার, মিলি ১০-২০ হাজার এবং হোয়াইট হোমার ১৫-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
১১ . পটার কবুতর / বল কবুতর: বল একটি ফেন্সি জাতের কবুতর। এদের গলা বলের মত হওয়ায় এদের নাম বল বলা হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক পটার বা বল কবুতরের মূল্য ৬০০০ থেকে ৮০০০ টাকা।
১২. টাম্বলার/গিরিবাজ কবুতরঃ প্রাচীনকাল থেকেই গিরিবাজ কবুতর কে উড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয় এরা খুব ভালো উড়ে ।আকাশে উড়ার সময় ডিগবাজি খায়, অনেকেই এদের দিয়ে বাজি খেলে, অনেক দূর থেকে দেখে ছেড়ে দিলেও এরা বাসায় আসতে ভুল করনা। গিরিবাজ কবুতর অনেক ধরনের হয়ে থাকে উল্লেখযোগ্য কিছু গিরিবাজ কবুতরের নাম হচ্ছে সবুজ গোল,ঝাক,কালদম,জিরা গলা, দোবাজ,গীয়াসূল্লী, নাপতা, বাবড়া, লাল গলা ইত্যাদি। প্রাপ্ত বয়স্ক গিরিবাজ কবুতরের মূল্য সাধারণত ৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। তবে সবুজ গোল্লা ১০০০-১৫০০টাকা, গররা ১০০০-১৫০০ টাকা, মুসলদম ৮০০-১৫০০, কালদম ১০০০-২৫০০, বাগা ৮০০-১৫০০টাকা ;
১৩. ফ্রিল ব্যাক কবুতরঃ ফ্রিল ব্যাক দেখতে বেশ সুন্দর। পালক গুলি কোকরানো বেশ অাকর্ষনীয় লাগে। সাধারণত এরা সাদা রং এর হয়ে থাকে।এদের সাদা রং ছাড়াও কালো বা বাদামী বা অন্য রং এর ও হতে দেখা যায়। প্রাপ্ত বয়স্ক ফ্রিল ব্যাক কবুতরের মূল্য ৪০০০ থেকে ১০০০০ টাকা।
১৪.রেছার কবুতরঃ রেসার কবুতর দূর থেকে ছাড়ার কাজে ব্যবহার করা হয় এরা বাসায় ফিরতে কখনও ভুল করে না তাই এদেরকে দিয়ে বিভিন্ন রেস খেলা হয়। রেসার কবুতরের মূল্য ১০০০ থেকে লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
১৫. গোল্লা বা গোলা কবুতরঃ এই জাতের কবুতরের উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ। আমাদের দেশে এ জাতের কবুতর প্রচুর দেখা যায় এবং মাংসের জন্য এটার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। ঘরের আশেপাশে খোপ নির্মাণ করলে এরা আপনাআপনি এখানে এসে বসবাস করে। এদের বর্ণ বিভিন্ন সেডযুক্ত ধূসর এবং বারড-ব্লু রংয়ের। এদের চোখের আইরিস গাঢ় লাল বর্ণের এবং পায়ের রং লাল বর্ণের হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক গোল্লা বা গোলা কবুতরের মূল্য ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং বোম্বাই গোল্লা ৮০০-১০০০টাকা
১৬. লোটন/নোটন/রোলিং (Rolling): লোটান/নোটন কবুতরকে রোলিং (rolling) কবুতরও বলা হয়। গিরিবাজ কবুতর যেমন শূন্যের উপর ডিগবাজী খায়, তেমন লোটন কবুতর মাটির উপর ডিগবাজী খায়। সাদা বর্ণের এই কবুতরের ঘুরানো ঝুঁটি রয়েছে। এদের চোখ গাঢ় পিঙ্গল বর্ণের এবং পা লোমযুক্ত। প্রাপ্ত বয়স্ক নোটন কবুতরের মূল্য ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
১৭.জালালি কবুতরঃ ইসলাম ধর্মের মহান সাধক বা মহান জিহাদী পীর সাহেব হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর পালিত কবুতরের জাত কে জালালি কবুতর বলে।তাঁর পুরো নাম শায়খ শাহ জালাল কুনিয়াত মুজাররদ। তাঁর সম্পর্কে ছোট্ট আরও একটি তথ্য দিয়ে রাখি, তাঁর জন্মভূমি ইয়েমেনে যা আমরা অনেকেই জানি না। যাইহোক, ১৩০৩ সালে (৭০৩ হিজরী) ৩২ বছর বয়সে তিনি সিলেটে আসার পথে দিল্লীর আউলিয়া নিজামুদ্দীনের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন। সাক্ষাতের বিদায়কালে প্রীতির নিদর্শন স্বরূপ নিজামুদ্দীন হজরত শাহ্ জালাল (রাঃ) কে এক জোড়া সুরমা রঙের কবুতর উপহার দিয়েছিলেন। এই কবুতর নিয়েই তিনি সিলেটে এসেছিলেন। সেই থেকে সিলেটে এই কবুতরের ব্যাপকতা দেখা যায় এবং এর নাম হয় “জালালি কবুতর”।সাধারণত এই জালালি কবুতর খাওয়া হয় না। কারণ এটির মূল মালিকানা যরত শাহজালাল (রহঃ) এর। তবে অনেকে বলে, যদি এরা অাপনার বাড়িতে নিজ ইচ্ছায় বাসা করে ও খাবার খায় তবে বাচ্ছা অাপনি খেতে পারেন।
১৮. মুসল দম কবুতরঃ এই কবুতরের সমস্ত শরীর কালো কিন্তু দম বা লেজ গুলো সাদা।
১৯. সিল্কিঃ
২০. কাগজীঃ সমস্ত শরীর সাদা কিন্তু সমস্ত চোখ কালো।
২১. চিলাঃ এদের গায়ের রং অনেকটা চিলের মত।
২২. প্রিন্সঃ প্রিন্স কবুতর হচ্ছে ফেন্সি একটি কবুতর। সৌখিন কবুতর পালন করীরা এদের সংগ্রহে রাখেন । প্রিন্স কবুতরের দাম সাধারণত ৪০০০-৬০০০ টাকা। এমন কি ১০০০০০ টাকার ও প্রিন্স কবুতর পাওয়া যায়।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.