সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    বাংলাদেশেই তৈরি হয় যে ভয়ংকর অস্ত্রগুলো

    বাংলাদেশ সেনা নৌ ও বিমান বাহিনী এক অনন্য উচ্চতায় নিজেদের নিয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশের সামরিক অস্ত্র কারখানায় তৈরি হচ্ছে বেশ কয়েক ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র। আসুন জেনে নেই কি কি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করা হয় বাংলাদেশে। 
    বিডি ০৮ রাইফেল:  বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর স্ট্যান্ডার্ড সাব-মেশিন গান। এটা মূলত চাইনিজ টাইপ ৮১-এর বাংলাদেশী সংস্করণ। টাইপ ৮১ - বিডি ০৮ রাইফেল দেখতে অনেকটা একে-৪৭ তবে এর মধ্যে অনেক মডিফিকেশন করা হয়েছে।যেমন: এতে ফিক্সড গ্যাস অপারেটর এর বদলে ফ্লোটিং গ্যাস অপারেটর ব্যবহার করা হয়েছে যা ঝাঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এর কার্যকরী দূরত্ব প্রায় ৫০০ মিটার । এর দ্বারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করা যায়। সব মিলিয়ে এটি একে ৪৭ এর থেকে আরও কার্যকর। বিডি ০৮ বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় তৈরি হয়।



    ১৯৮১ সালে নাগাদ পিপলস রিপাবলিক আর্মি (পিএলএ) কর্তৃক চীনে টাইপ ৮১ অ্যাসাল্ট রাইফেল সার্ভিসে চালু করা হয়েছিল কিন্তু ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে পর্যন্ত তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। এটি সোভিয়েত এসকেএস কারবিন এবং টাইপ ৫৬ রাইফেল (একটি চীনা লাইসেন্সে নির্মিত একে-৪৭ ধরনের রাইফেল) এর প্রতিষ্ঠাপিত রূপ। ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে চীন ও ভিয়েতনামের সীমান্ত বিরোধের সময় এটি প্রথম যুদ্ধের ব্যবহার আসে। পিএলএ তার টাইপ -৮১-এর বেশিরভাগগুলো বর্তমানে টাইপ ৯৫ অথবা টাইপ ০৩ সিরিজের সাথে প্রতিস্থাপিত করেছে, যদিও এটি এখনও রক্ষণাবেক্ষণ এবং সশস্ত্র পুলিশে চীনে ব্যবহৃত হচ্ছে।পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্তর্গত বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় এর ডিজাইনের সংস্করণ ও পরিমার্জনার মাধ্যমে ২০০৮ সালে নাগাদ উৎপাদন শুরু হয়।

    বিবরণ:
     
    বিডি ০৮ রাইফেল :

    • ভর : ৩.৫ কেজি
    • এমুনিশান : ৭.৬২ মি.মি.
    • কার্যকরী দুরত্ব : ৪০০ মিটার
    • ফায়ারিং রেট : ৭২০ রাউন্ড/ মিনিট
    • ম্যাগাজিন: ৩০ রাউন্ড অথবা ৭৫ রাউন্ডের ড্রাম ম্যগাজিন
    এছাড়া এতে AK / AKM সিরিজের যেকোন মডেলের ম্যগাজিন ব্যবহার করা যায়।

    বিডি ০৮ মেশিন গান :
    • ভর : ৫.৫ কেজি
    • এমুনিশান : ৭.৬২ মি.মি.
    • কার্যকরী দূরত্ব : ৫০০ মিটার
    • ফায়ারিং রেট : ৭২০ রাউন্ড/ মিনিট
    • ম্যাগাজিন: ৭৫ রাউন্ড



    উৎপাদন:
    বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার প্রতিষ্ঠার কাজ প্রথম শুরু হয় ১৯৬৮ সালে চীন সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায়। ১৯৭০ সালের ৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে এটিকে আর্মির চীফ অফ স্টাফ স্যাক্রেটারিয়েটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং পুরো প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন করে সাজানো হয়। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে রাইফেল বিডি-০৮ প্রস্তুতের পরিকল্পনা প্রক্রিয়া শুরু হয়। যা সফলতা পায় ২০০৮ সালে নাগাদ। বর্তমানে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় রাইফেলটির বার্ষিক উৎপাদন বাড়িয়ে ১৪ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে।


    বিডি ১৪ হেভি মেশিন গান:

    বিডি ১৪ হচ্ছে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় উৎপাদিত ৭.৬২ মিমি হেবি মেশিনগান। এটিকে ট্যাংক,এপিসি সহ যেকোন সুবিধাজনক স্থানে বসানো যায়। এছাড়া সম্মুখ যুদ্ধে ফায়ার সাপোর্ট দেবার জন্য ত্রিপদ স্ট্যান্ড অথবা দ্বিপদ স্ট্যান্ডে সেট করে ফায়ার করা যায়। এর ৭.৬২ মিমি এর বুলেট খুবই মারাত্মক আর এর ভেদন ক্ষমতা প্রচণ্ড। মিনিটে এটা দ্বারা ৭০০-৮০০ রাউন্ড বুলেট অনায়াসে ফায়ার করা যায়।



    সেনাবাহিনীতে যে  বিডি ১৪ ব্যবহার করা হয়  সেটা  টাইপ ৮০ এর বেঙ্গল ভার্সন যা চিন হতে লাইসেন্স প্রাপ্ত। কিন্তু এর মালিক রাশিয়া যারা এটা তৈরি করে এবং এর নাম দেয় "একে পিকে এম"। এই আগ্নেয়াস্ত্রের ডিজাইন করেন বিখ্যাত অস্ত্র উদ্ভাবক মিখাইল কালাশনিকভ  আর এই একে পিকে এমের চির প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে আমেরিকান "এম ২৪০"।

    এক নজরে এই অস্ত্রের বৈশিষ্ট্য সমূহ:

    টাইপ: জেনারেল পার্পোস
    হেভি-মেশিনগান

    অরিজিন:রাশিয়া(একে পিকে এম)

    সার্ভিস:- ১৯৮০ টাইপ ৮০ (২০১৪ বিডি ১৪)

    ডিজাইনার:- মিখাইল কালাশনিকভ

    ওজন: - ১২.৬ কেজি

    লেন্থঃ- ১১৯২ মি.মি.

    কার্টিজঃ- ৭.৬২×৫৪ মিমি

    রেট অফ ফায়ারঃ- ৭০০-৮০০ রাউন্ড পার মিনিট

    রেঞ্জঃ - ১০০-১৫০০ মিটার।

    শুধু আগ্নেয়াস্ত্র নয় নৌ বাহিনীর যুদ্ধজাহাজ তৈরিতেও এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের শিপইয়ার্ডেই তৈরি হচ্ছে নৌ বাহিনীর জন্যে যুদ্ধ জাহাজ। বিশাল সমুদ্র সীমা প্রাপ্তির পর এই সকল যুদ্ধ জাহাজ দেশের গভীর সমুদ্রে নিরাপত্তা ও খনিজ সম্পদ আরোহণে ব্যবহার করা হচ্ছে।

    বাংলাদেশে নির্মিত যুদ্ধজাহাজ – পদ্মা ক্লাস

    বিএনএস পদ্মা:

    বাংলাদেশের যে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ শিল্পে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে তার প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় যখন সর্বপ্রথম দেশে নির্মিত ওয়ারশিপ বিএনএস পদ্মা ওপিভি ২০১৩ সালে কমিশন লাভ করে। সেই ছিলো শুরু,তার পর হতে কেবলই অগ্রযাত্রা। ওপিভির পর বানানো হয়েছে লার্জ পেট্রল ক্রাফট,এ বছর হতে বানাতে যাচ্ছি কর্ভেট ও আগামী বছর বা এ বছরের শেষ হতেই ফ্রিগেট ও বানানোর প্রজেক্ট ও দৃশ্যমান হবে। তবে কর্ভেট আর ফ্রিগেট তৈরি হবে চিটাগং ড্রাই ডকইয়ার্ড এ।

    বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে একটি অসাধারণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১৯৯৯ সালে,মৃতপ্রায় খুলনা শিপইয়ার্ডকে তুলে দেওয়া হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে। এরপর বাংলাদেশ নৌবাহিনী পুনরায় খুলনা শিপইয়ার্ড কে সজীব করে তোলে ও তারই ফলস্বরূপ তৈরি হয় পদ্মা ক্লাস ওপিভি বা অফশোর পেট্রল ভেসেল। এটি কোন বৃহৎ জাহাজ নয়,কিন্তু এটা ইঙ্গিত দিচ্ছিলো যে জাহাজ শিল্পে নৌবাহিনী তার কারিশমা দেখাতে যাচ্ছে। এবং তা হয়েছেও।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে বিল্ডার নেভী তে পরিণত করা হবে অর্থাৎ যত ইক্যুয়েপমেন্ট সব দেশেই তৈরি করা হবে। সেদিন ও বেশি দূরে নয়।

    পদ্মা ক্লাস অফশোর পেট্রল ভেসেল এর খুঁটিনাটি:

    দৈর্ঘ্য : ১৬৫ ফুট
    প্রস্থ : ২৫ ফুট
    উচ্চতা: ১৩ ফুট
    ওজন : ৩৫০ টন
    গতি: ঘণ্টায় প্রায় ২৩ নটিক্যাল মাইল বা ৪৩ কিলোমিটার।
    ক্রু সংখ্যা :- ৪৫ জন.
    অস্ত্রশস্ত্র :-

    ২টি 20 mm অ্যান্টি এয়ারক্রাফ্ট গান
    ২টি 37 mm Canon রয়েছে।
    MANPADS


    আমাদের বৃহৎ সামুদ্রিক অর্থনৈতিক এলাকার ওপর নজরদারিই এর প্রাথমিক দায়িত্ব। দেশীয় জাহাজ হিসেবে এটি সকল বাংলাদেশীর কাছেই একটি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এরকম পদ্মা ক্লাসের প্রায় ২৩ টি ওপিভি নির্মাণের পরিকল্পনা গঠন করা হয়েছে ও ৫ টি ইতিমধ্যেই নির্মিত হয়েছে। পদ্মা ক্লাসের ইতিমধ্যে নির্মিত অন্য ওপিভি গুলো হল বিএনএস সুরমা বিএনএস অদম্য  বিএনএস অপরাজেয় বিএনএস অতন্দ্র।

    দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সমরাস্ত্র বিক্রয় বাণিজ্য কে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ চাইলে এখন থেকে সমরাস্ত্র রপ্তানি করতে পারবে। ইতিমধ্যে লেবানন বাংলাদেশ হতে সমরাস্ত্র ক্রয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মালদ্বীপ পদ্মা ক্লাস পেট্রল ভেসেলের ওপর আগ্রহ দেখিয়েছে অনেক আগেই।  তবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ৫০০ টনের নিচে কোন জাহাজ রাখবে না বিধায় কয়েক বছর পর পদ্মা ক্লাস ওপিভি গুলোকে কোস্ট গার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে।

    দুর্জয় ক্লাস এলপিসি:

    বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সেমি স্টিলথ বড় ধরণের টহল জাহাজ হল এই দুর্জয় ক্লাস গাইডেড মিসাইল এলপিসি। এই ধরণের ২ টি জাহাজ বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে আছে আর বাকি ০২ টার নির্মাণকাজ চলছে।বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে এই ধরণের মোট ০৮ টি জাহাজ সার্ভিসে থাকবে।

    বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে গড়ে তোলার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০০৯ সালে চীনের সাথে সাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে চীন তাদের টাইপ ০৫৬ করভেটের ডাউনগ্রেড ভার্সনের প্রযুক্তি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে।চুক্তি অনুসারে জাহাজগুলো ০৬টি [প্রথম ০২টা চীনে] খুলনা শিপইয়ার্ডে চীনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নির্মিত হবে।



    ২০১২ সালের ২৬ অগাস্ট বিএনএস দুর্জয় এবং২৭ সেপ্টেম্বর বিএনএস নির্মূল এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। শিপ ০২ টি ২৯ অগাস্ট ২০১৩ সালে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম নৌঘাঁটিতে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কমিশনিং করেন। বর্তমানে ট্রান্সফার অফ টেকনোলজি এর আওতায় খুলনা শিপইয়ার্ডে ০২ টি জাহাজের নির্মাণকাজ চলছে।

    এক নজরে দুর্জয় ক্লাস এলপিসি:

    ক্লাস: লার্জ প্যাট্রোল ক্লাস
    ডিসপ্লেসমেনট: 648 টন
    দৈর্ঘ্য: 64,2 এম (211 ফুট) (সার্বিক)
    বীম: 9 মিটার (30 ফুট)
    গভীরতা: 4 মিটার (13 ফুট)
    প্রোপালসান: ০২ টি ডিজেল ইঞ্জিন
    গতি: 28 নট (52কিমি/ঘঃ)
    পাল্লা:2,500 নট (4.600 কিমি; 2,900 মাইল)
    একটানা স্থায়িত্ব:15 দিন
    পারসনেলঃ 60জন

    সেন্সর এবং প্রসেসিং সিস্টেম: এসআর 60 সার্চ রাডার
    ESS -3 বো মাউন্টেড সোনার
    TR-47C গানফায়ার কন্ট্রোল রাডার
    রণসজ্জা: 2 X 2টি সি 704 AShM;

    সামনের দিকে ০১ টি H/PJ-26 ৭৬মিমি কামান
    2 টি টাইপ 730B ০৬ব্যারেল 30 মিমি CIWS
    2 x 6টি সুপার ব্যারিকেড চ্যাফ লাঞ্চার+ টর্পেডো লাঞ্চার

    এছাড়া ভারী মোটর যান থেকে বুলেট প্রফু জ্যাকেটও তৈরি হয় বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানাতে। অচিরেই আরও উন্নত মানের বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উৎপাদন করা হবে এই কারখানাতে।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !