ইয়াজিদি সম্প্রদায় (এক রহস্যময় গোষ্ঠী!)
ইরাকের একটি রহস্যময় ধর্মীয় গোষ্ঠী ইয়াজিদি সম্প্রদায়। বলা হয় শয়তানের উপাসক এ ধর্মমতের অনুসারীরা। তাদের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তা দুনিয়ার প্রথম মানব আদমকে সৃষ্টি করার পর মালিক তাউস ফেরেশতাকে নির্দেশ দেন তাকে সেজদা করার জন্য। মালিক তাউস এ নির্দেশ অমান্য করে ঈশ্বরের বিরাগভাজন হন এবং শয়তানে পরিণত হন। তবে ঈশ্বর পরবর্তীতে তাকে ক্ষমা করেন।
ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মতে, শয়তান ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করে অন্যায় করেননি। কারণ তিনি ঈশ্বরের বদলে আর কাউকে সেজদা করাকে যথার্থ মনে করেনি। ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের বসবাস উত্তর পশ্চিম ইরাকের পাহাড়ি এলাকায়। রহস্যময় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের কারণে ইয়াজিদিদের নিয়ে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে।
ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়, তাদের সংখ্যা আট লাখের মতো। ইরাকে ৬ লাখ ৫০ হাজার, জার্মানিতে ৬০ হাজার, সিরিয়ার ৫০ হাজার, রাশিয়ায় ৪০ হাজার ৫৮৬, আর্মেনিয়ায় ৩৫ হাজার ২৭২, জর্জিয়ায় ২০ হাজার ৮৪৩, সুইডেনে ৪ হাজার, তুরস্কে ৩৭৭, ডেনমার্কে ৫০০ মিলে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষ সাকুল্যে ৭ লাখের বেশি নয় এ পৃথিবীতে।
বিবিসির মতে, মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গি সংস্থা আইএসসহ সুন্নি চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোর বিশ্বাস, ইয়াজিদি নামটি এসেছে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার নাম থেকে। উমাইয়া বংশের দ্বিতীয় খলিফা (৬৪৭-৬৮৩) ইয়াজিদ অত্যন্ত অজনপ্রিয় শাসক ছিলেন। তবে আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, এ গোষ্ঠীর নামটির সঙ্গে খলিফা ইয়াজিদ বা পারস্যের (প্রাচীন ইরান) শহর ইয়জদের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং নামটি নেওয়া হয়েছে আধুনিক ফার্সি ‘ইজদ’ থেকে, যার অর্থ হচ্ছে দেবদূত বা দেবতা। তা থেকে ইয়াজিদি শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে, ‘ঈশ্বরের উপাসক’। ইয়াজিদিরা ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন এবং খ্রিস্টধর্মের পবিত্র গ্রন্থ বাইবেল উভয়কেই শ্রদ্ধা করে থাকে। তাদের নিজস্ব ধর্মীয় প্রথাগুলোর বেশির ভাগই মৌখিক।
ব্যাপ্টিস্ট খ্রিস্টানদের মতো ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের শিশুদের সর্বাঙ্গ পবিত্র পানিতে ডুবিয়ে দীক্ষা দেন একজন ‘পীর’। ডিসেম্বরে ইয়াজিদিরা তিন দিন রোজা রাখে। পরে পীরের সঙ্গে সুরা পান করে। সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ থেকে ২০ তারিখ ইয়াজিদিদের বার্ষিক তীর্থযাত্রার সময়। এ সময় তারা মসুল শহরের উত্তরে অবস্থিত লালেশ এলাকার শেখ আদির মাজারে গিয়ে নদীতে ওজুর মতো করে পবিত্র হয়। এ ছাড়া ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মধ্যে পশু উৎসর্গ করা এবং খতনা দেওয়ার প্রথাও রয়েছে।
ইয়াজিদিদের সর্বোচ্চ উপাস্য দেবতার নাম ইয়াজদান। তাদের মতে, সাতজন ফেরেশতার মাধ্যমে ইয়াজদান সৃষ্টি জগতের সব কিছু পরিচালনা করেন। এর মধ্যে প্রধান মালিক তাউসকে দিনে পাঁচবার উপাসনা করে ইয়াজিদিরা।
মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের কাছে মালিক তাউস শয়তানেরই অপর নাম।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.