ফিরছে ঐতিহ্যের মসলিন
ফিরে আসছে হারিয়ে যাওয়া মসলিন শাড়ি। ৩০০ বছর পর পরীক্ষামূলকভাবে বিশ্বখ্যাত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ‘মসলিন’ কাপড় তৈরি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ১৭০ গ্রাম ওজনের একটি শাড়ি তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেয়া হয়েছে।
যে সুতা থেকে মসলিন তৈরি হতো, সেই ফুটি কার্পাস তুলাগাছের চাষও শুরু হয়েছে। মসলিনের ঐতিহ্য ফেরাতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতায় নেয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার (১ম পর্যায়) শীর্ষক’ প্রকল্প। তবে নতুন এ প্রকল্পটির কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হয়নি।
এজন্য প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেয়ার তাগিদ দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় স্টিয়ারিং কমিটির সভা। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. ফায়জুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ তাগিদ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি জারি করা ওই সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সভায় জানানো হয়, ১২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে গত জুলাই থেকে শুরু করে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্পের অনুকূলে কোনো বরাদ্দ ছিল না। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জন্য রক্ষিত থোক বরাদ্দ থেকে ২ কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১ কোটি টাকা অবমুক্ত করা হয়। কিন্তু সভার সময় পর্যন্ত এক টাকাও ব্যয় হয়নি। তবে সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, সুতা তৈরির জন্য কাঁচামাল ও কারিগর, কাপড় বুননের জন্য তাঁতিদের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশকিছু কারিগর এবং তাঁতি সংগ্রহ করে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষণের ফলে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে ১৭০ গ্রাম ওজনের একটি শাড়ি তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রায় ১ বিঘা জমিতে তুলা চাষ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএসসি ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত চারটি নমুনার বায়োমেট্রিক প্রোফাইল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকরণ, ডিএনএ পৃথকীকরণ এবং ফুটিকরণ জাতের বিশেষায়িত মার্কার প্রস্তুতকরণের লক্ষ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তিনি জানান, গবেষণা কাজে ব্যবহারের জন্য প্রথম পর্যায়ের রাসায়নিক দ্রব্যাদি এবং ল্যাব যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। সভায় প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেয়ার জন্য উপস্থিত সব সদস্যই পরামর্শ প্রদান করেছেন বলে কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রকৃতপক্ষে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে, তা সঠিকভাবে নিরূপণ করে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে অর্থবরাদ্দের প্রস্তাব করার জন্য পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি মতামত ব্যক্ত করেছেন। সেই সঙ্গে ভিত্তিপ্রস্তর অনুযায়ী প্রকল্প এলাকায় প্রকল্পের নামফলক স্থাপন, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ করা অর্থের সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি এবং বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করে পণ্য ও সেবা ক্রয়, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা ও আর্থিক শৃঙ্খলা যথাযথভাবে প্রতিপালন, আইন ও বিধিমালা অনুসরণ করে প্রকল্পের ক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা এবং নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্প সমাপ্ত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে মসলিন সুতা ও কাপড় তৈরির প্রযুক্তি পুনরুদ্ধারের নির্দেশনা দেন। এ লক্ষ্যে ১২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের পরিচালক ও বায়োটেকনোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করে দেয়া হয়।
সূত্রমতে, ফুটি কার্পাস নামক তুলা থেকে প্রস্তুত অতি চিকন সুতা দিয়ে মসলিন তৈরি করা হতো। এটি ঢাকাই মসলিন নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের সোনারগাঁ অঞ্চলে চড়কা দিয়ে কাটা, হাতে বোনা মসলিনের জন্য সর্বনিু ৩০০ কাউন্টের সুতা ব্যবহার হতো। ফলে মসলিন হতো কাচের মতো স্বচ্ছ। এই মসলিন রাজকীয় পোশাক তৈরিতে ব্যবহার করা হতো। প্রায় ২৮ প্রকারের মসলিনের মধ্যে জামদানি এখনও ব্যাপক আকারে প্রচলিত। নানা কারণে আঠারো শতকের শেষার্ধে বাংলায় মসলিন তৈরি বন্ধ হয়ে যায়।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.