সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    কারবালার ইতিহাস পর্ব-৪ (ইয়াজিদের ধারাবাহিক কু-কীর্তি)



    Image result for ইয়াজিদের মৃত্যু





    আজ হতে ১৩৭১ বছর আগে ৬৪ হিজরির এই দিনে (১৪ ই রবিউল আউয়াল) জালিম ও খোদাদ্রোহী শাসক ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া মারা যায়। (মহান আল্লাহর অনন্ত অভিশাপ তার ওপর বর্ষিত হোক)


    ইয়াজিদ তার তিন বছর নয় মাসের অবৈধ শাসনামলে অন্তত: তিনটি মহাপাপ ও অপরাধযজ্ঞের জন্য ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত ও ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে।

    প্রথম মহাপাপঃ-  ৬১ হিজরিতে কারবালায় বিশ্বনবী (সা.)এর প্রিয় নাতী হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)ও তাঁর ছয় মাসের শিশুপুত্র হযরত আলী আসগরসহ নবী (দরুদ) বংশের ১৮ জন সদস্যকে নৃশংসভাবে পিপাসার্ত অবস্থায় শহীদ করা। কারবালায় ইমামের আরো প্রায় ৬০ জন সমর্থকও বীরের মত লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন।ইমাম শিবিরের জন্য কয়েকদিন ধরে পানি সরবরাহ নিষিদ্ধকারী ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হুসাইন (আ.)এর পবিত্র লাশসহ নবী-পরিবারের সদস্যদের লাশের ওপর ঘোড়া ছুটিয়ে লাশগুলো দলিত-মথিত করেছিল এবং তাঁদের মস্তক ছিন্ন করে বর্শার আগায় বিদ্ধ করেছিল। তারা কারবালায় ইমাম শিবিরের তাঁবুগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে লুটপাট চালিয়েছিল। এ ছাড়াও নবী-বংশের নারী ও শিশুদেরকেও টেনে হিঁচড়ে শিকল পরিয়ে বন্দী অবস্থায় কুফার গভর্নরের দরবারে ও দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে নিয়ে গিয়েছিল খোদাদ্রোহী ইয়াজিদ বাহিনী।


    দ্বিতীয় মহাপাপঃ-  


    নরপশু ইয়াজিদের নির্দেশে কুফায় নিযুক্ত তার গভর্নরের অনুগত সেনাদের হাতে বিশ্বনবী (সা.)’র প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর পরিবার-পরিজনসহ প্রায় ১০০ জন সঙ্গীর বেশিরভাগেরই কারবালায় শাহাদত বরণের  হৃদয়বিদারক এবং মহাবিয়োগান্তক ঘটনার খবর শুনে মদীনাবাসী ইয়াজিদের চরিত্র ও প্রকৃতি সম্পর্কে তদন্ত চালায়। তারা এ লক্ষ্যে দামেস্কে একটি তদন্ত-টিম পাঠায়। তদন্ত-টিম তাকে ইসলামী মূল্যবোধ-শূন্য  ও একজন নৈতিক চরিত্রহীন ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখতে পায়। ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তাঁর মহান বিপ্লব ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের সহযোগিতা করতে না পারার জন্য মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গণ-অনুশোচনা ক্রমেই জোরদার হতে থাকে।

    এ অবস্থায় মদীনাবাসী তাদের শহর থেকে ইয়াজিদের নিযুক্ত গভর্নরকে বের করে দেয় এবং ইয়াজিদের অনৈসলামী শাসনকে বৈধ শাসন হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করে। ফলে মহাপাপিষ্ঠ ইয়াজিদ সিরিয়া থেকে  কুখ্যাত মুসলিম বিন উকবার নেতৃত্বে ১০ হাজার সেনা পাঠায়। হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফও ছিল এই সেনাবাহিনীর এক সাধারণ সেনা। (হাজ্জাজ পরবর্তীকালে উমাইয়া শাসক হয়েছিল এবং হাজার হাজার সাহাবীকে হত্যা করেছিল।) ইয়াজিদ তার  পাপিষ্ঠ বাহিনীকে পবিত্র মদীনা শহরে হামলা এবং মসজিদে নববীর অবমাননা ও তিন দিন ধরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে মদীনায় লুট-পাট আর গণহত্যা চালানোসহ গণ-ধর্ষণের অনুমতি দেয়া।
    উকবা মদীনার উত্তর-পূর্ব দিকে হাররা অঞ্চলে মদীনার প্রতিরোধকামীদের ওপর হামলা চালায়। অস্ত্রে সুসজ্জিত উমাইয়ারা বিপুল সংখ্যক মুজাহিদকে হত্যার পর শহরের ভেতরেও প্রতিরোধকামীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়ে তাদের শহীদ করে। এমনকি যারা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ(সা.)’র পবিত্র মসজিদে ও তাঁর পবিত্র মাজার বা রওজায় আশ্রয় নিয়েছিল তাদেরকেও নির্মমভাবে শহীদ করেছিল ইয়াজিদের পাষণ্ড সেনারা। বিশ্বনবী (সা.)’র বহু সাহাবীসহ ৭০০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব শহীদ হয় তাদের হামলায়।
    ইয়াজিদের সেনারা মদীনায় অন্তত ১০ হাজার মানুষকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে। এরপর উকবার নির্দেশে তার নেতৃত্বাধীন ইয়াজিদের সেনারা তিন দিন ধরে মদীনা লুট-তরাজ চালায় এবং নারীদের সম্ভ্রমহানি করে। তারা মদিনার মসজিদে নববীকে ঘোড়ার আস্তাবল বানায় এবং ঘোড়ার মলমূত্রে অবমাননা করা হয় মুসলিম বিশ্বের পবিত্রতম এই স্থানের।


    তৃতীয় মহাপাপঃ-  
    পবিত্র মদীনা শহরে হামলা এবং মসজিদে নববীর অবমাননা ও তিন দিন ধরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে মদীনায় লুট-পাট আর গণহত্যা গণ ধর্ষণ চালানোর পর ইয়াজিদের পাপিষ্ঠ সেনাদল মক্কার দিকে যায়, এমনকি পবিত্র কাবা ঘরেও হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে।
    পাষণ্ড ইয়াজিদের বর্বর সেনারা (কারবালার মহা অপরাধযজ্ঞ সম্পাদনের তিন বছর পর) পবিত্র মক্কা অবরোধ করে। তারা মহান আল্লাহর ঘরে তথা পবিত্র কাবায় জ্বলন্ত ন্যাপথালিনযুক্ত অগ্নি-গোলা নিক্ষেপ করে কাবা ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ফলে মক্কার বিশিষ্ট সাহাবীদের কাছে ইয়াজিদের খোদাদ্রোহী চরিত্রের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়।পবিত্র কাবাঘরে হামলার পরই খবর আসে যে কুখ্যাত জালিম ও কাফির ইয়াজিদ মারা গেছে।


    মদীনায় নারীদের ওপর ইয়াজিদ-সেনাদের গণ-ধর্ষণের পরিণতিতে এক হাজারেরও বেশি অবৈধ সন্তান জন্ম নিয়েছিল এবং তাদের বাবা কে ছিল তা সনাক্ত করার কোনো উপায় ছিল না। ইতিহাসে এদেরকে ‘হাররা বিদ্রোহের সন্তান’বলে উল্লেখ করা হত। হাররার যুদ্ধ বা হাররার গণহত্যা নামে পরিচিত এই ঘটনা বহু বছর ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্যে স্মরণ করা হয়েছে।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !