কারবালার ইতিহাস পর্ব-৫ (ইয়াজিদের করুণ পরিণতি)

৬১ হিজরীর মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনার মূল নায়ক মুয়াবিয়া (রঃ) পাপিষ্ঠ পুত্র ইয়াজিদ। তারই নির্দেশে রাসূলের (সা.) প্রাণপ্রিয় নাতি ইমাম হুসাইন (রাঃ) ও তার পরিবারবর্গ নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেছিলেন। নরাধর ইয়াজিদের মৃত্যু সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে।
শাবিস্তান বার্তা সংস্থার রিপোর্ট: মুয়াবিয়া ইবনে ইয়াজিদের মৃত্যু নিয়ে অনেকের কৌতুহল রয়েছে। কিভাবে এবং কোন অবস্থাতে এ নরাধম ও পাপিষ্ঠ ব্যক্তি কদর্যপূর্ণ জীবনের ইতি ঘটেছিল, সে সম্পর্কে জানার আগ্রহের কোন কমতি নেই। তাই আমরা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে ইয়াজিদের মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরছি। অবশ্য এ নরাধমের মৃত্যু সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও সর্বজন বিদিত ঘটনাগুলো নিম্নে তুলে ধরছি-
১ম মতঃ-
নির্ভরযোগ্য ইতিহাস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে যে, ইয়াজিদ ৬৪ হিজরিতে একবার তার বেশ কিছু লোকজন নিয়ে পশু শিকারের জন্য
রাজধানীর বাইরে যায়। কয়েক দিনের পথ অতিক্রমের পর এক জায়গায় একটি অতি সুন্দর
হরিন দেখতে পায় সে। এ অবস্থায় ইয়াজিদ একাই ওই হরিন ধরবে বলে ঘোষণা করে এবং
এ কাজে কারো সহযোগিতার দরকার নেই ও কেউ যেন তার সঙ্গে না আসে বলেও সে
অন্যদের নির্দেশ দেয়।
কিন্তু হরিনটিকে ধরতে বা শিকার করতে গিয়ে
ইয়াজিদ উপত্যকা থেকে উপত্যকা পর্যন্ত ঘোড়া ছুটিয়েও সফল হয়নি এবং এক পর্যায়ে
হরিনটি বহু দূরের এক উপত্যকায় অদৃশ্য হয়ে গেলে ইয়াজিদ নিজেকে হারিয়ে ফেলে।
ইয়াজিদের লোকজন আরো আগে তাকে হারিয়ে ফেলেছিল।পাষণ্ড ইয়াজিদ এক ভয়াবহ প্রান্তরে তীব্র পিপাসার্ত অবস্থায় পানি খুঁজতে থাকে। কিন্তু কোথাও সে পানি খুঁজে পায়নি।
এক পর্যায়ে সে পানির পাত্র হাতে এক আরব ব্যক্তিকে দেখতে পায়। সে তাকে পানি দেয়ার অনুরোধ জানায় এবং বলে যে, আমাকে চিনতে পারলে পানি দেয়া ছাড়াও তুমি অনেক সম্মানও করবে।
ওই আরব ব্যক্তি বলেন: কে আপনি?
ইয়াজিদ বলে: আমি আমিরুল মু'মিনিন ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া।
এ কথা শুনে ওই আরব ব্যক্তি মহাক্ষিপ্ত হয়ে বলে: খোদার শপথ, তুই হলি ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ)'র হত্যাকারী, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) শত্রু! আর এ কথা বলেই সে তরবারি বের করে ইয়াজিদকে হত্যা করতে এগিয়ে আসে।
এ অবস্থায় ইয়াজিদের ঘোড়া মারাত্মভাবে ভীত হয়ে পালাতে চাইলে ইয়াজিদ ঘোড়ার পিঠ থেকে উল্টে পড়ে এবং তার একটি পা ঘোড়ার রেকাবে আটকে যায়। এ অবস্থায় ভীত-সন্ত্রস্ত ঘোড়াটি ইয়াজিদকে নিয়ে কাঁটাযুক্ত বন ও এবড়ো থেবড়ো পাথরের ওপর দিয়ে পালাতে থাকায় তার দেহ থেতলে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। (অন্য বর্ণনা অনুযায়ী নিজ ঘোড়ার পায়ের তলেই পিষ্ট হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায় ইয়াজিদ।)
ওদিকে ইয়াজিদের বিশেষ প্রহরীদের একটি দল তাকে খুজতে এসে দেখে যে ইয়াজিদের শরীর বলতে আর কিছু নেই কেবল তার একটি রান বা পায়ের অংশ বিশেষ ঘোড়ার রেকাবের মধ্যে আটকে ঝুলে আছে। (লোহুফ, সাইয়্যেদ ইবনে তাউস)
২য় মতঃ-
ইয়াজিদের মৃত্যু সম্পর্কে শেইখ সাদুক তার গ্রন্থে অপর একটি ঘটনায় লিখেছে যে, ইয়াজিদ এক রাতে অতিরিক্ত মদ পান করে ঘুমায়। কিন্তু সকালে তার লোকজন দেখতে পেল সে মৃত্যু বরণ করেছে এবং তার চেহারা আলকাতরার মত কাল বর্ণের হয়ে গেছে।তাকে দামেস্কের বাব আস সাগিরে দাফন করা হয়।
৩য় মতঃ-
কারবালার ঘটনার পর নরাধম ইয়াজিদ তীব্র মাথা-ব্যথা রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। একদিন সে মাতাল অবস্থায় শৌচাগারে পড়ে যায় এবং সেখানেই প্রাণ ত্যাগ করে। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৩৭ বছর এবং তার পুরো শরীর আলকাতরার মত কালো হয়ে গিয়েছিল।
৪র্থ মতঃ-
'আলকামিল ফিততারিখ' বইয়ে ইয়াজিদের মৃত্যু সম্পর্কে এসেছে: মিনজানিক (বা পাথর নিক্ষেপক কামান জাতীয় অস্ত্র) থেকে পাথরের একটি টুকরো ইয়াজিদের মুখের এক পাশে আঘাত করায় সে কিছুকাল অসুস্থ থেকে মারা যায়।
৫ম মতঃ-
আবার কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, বিশ্বনবী (সা.) ও আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (রাঃ)'র বিশিষ্ট সাহাবি হুজর বিন উদাই কিন্দির (মুয়াবিয়া তাঁকে শহীদ করেছিল) কন্যা সালামি হুজরের ভাতিজা আবদুর রহমানের সহায়তায় ইয়াজিদকে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে জাহান্নামে পাঠিয়েছিলেন।
৪র্থ মতঃ-
'আলকামিল ফিততারিখ' বইয়ে ইয়াজিদের মৃত্যু সম্পর্কে এসেছে: মিনজানিক (বা পাথর নিক্ষেপক কামান জাতীয় অস্ত্র) থেকে পাথরের একটি টুকরো ইয়াজিদের মুখের এক পাশে আঘাত করায় সে কিছুকাল অসুস্থ থেকে মারা যায়।
৫ম মতঃ-
আবার কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, বিশ্বনবী (সা.) ও আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (রাঃ)'র বিশিষ্ট সাহাবি হুজর বিন উদাই কিন্দির (মুয়াবিয়া তাঁকে শহীদ করেছিল) কন্যা সালামি হুজরের ভাতিজা আবদুর রহমানের সহায়তায় ইয়াজিদকে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে জাহান্নামে পাঠিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া ঐতিহাসিক কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার মাত্র তিন বছর নয় মাস ক্ষমতার মসনদে থাকার পর ৬৪ হিজরীতে ৩৭ বছর বয়সে জাহান্নামে গমণ করে।
মুয়াবিয়ার এক খ্রিস্টান উপপত্নীর গর্ভে জন্ম নিয়েছিল ইয়াজিদ। ইয়াজিদের
মায়ের নাম ছিল মাইসুন বিনতে বাইদাল আল কুলাইবি আন-নাসরানিয়া। সে ছিল এক
সিরিয় বেদুইন। সিরিয়ার গভর্নর থাকাকালে মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান এই
নারীকে অপহরণ করে এবং পরে পরিত্যাগ করে। অনেকের মতে ইয়াজিদ ছিল এক অবৈধ বা
জারজ সন্তান।
ইয়াজিদকে দুধ পান করিয়েছিল বেশ কয়েকজন চরিত্রহীন মহিলা। মুয়াবিয়ার কোনো ছেলে বা পুত্র সন্তান না থাকায় বহু বছর পর ইয়াজিদকে দামেস্কে নিয়ে আসে। মুয়াবিয়া বিশ্বনবী (সা.)'র বড় নাতি ইমাম হাসান মুজতাবা (রাঃ)'র সঙ্গে সন্ধির শর্ত লঙ্ঘন করে ইয়াজিদকে নিজের উত্তরাধিকারী বলে ঘোষণা করেছিল।
ইয়াজিদ কোনো ধর্মে বিশ্বাস করত না, যদিও তার গলায় ঝুলত মায়ের দেয়া একটি ক্রুশের লকেট। সে মাত্রাতিরিক্ত মদ পান করে মাতাল হয়ে থাকত এবং তার সঙ্গে সমকামে লিপ্ত হতে নিজের চাকরদের আহ্বান জানাত।
ইয়াজিদের মৃত্যুর ৫৮ বছর পর ১৩২ হিজরিতে আব্বাসীয় খলিফা আবুল আব্বাস আস সাফ্ফাহ উমাইয়া খলিফাদের কবর খুঁড়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল। ফলে আমির মুয়াবিয়াসহ তার পরের সব উমাইয়া রাজার কবর খুঁড়ে ফেলা হয়। ইয়াজিদের কবরে কেবল তার পায়ের একটি হাড় পাওয়া যায়, আর সবই ছিল কয়লার মত কালো হয়ে যাওয়া ছাইতুল্য মাটি। অর্থাৎ কবরের আজাবে তার পুরো শরীর ও হাঁড় পুড়ে গিয়েছিল।
সুন্নি ও শিয়া মুসলিম আলেমদের মতে ইয়াজিদ ছিল কাফের। কারণ, সে প্রকাশ্যেই বলেছিল নবী এবং ওহী বলতে কখনও কিছু ছিল না। অভিশপ্ত ইয়াজিদের সামনে যখন ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর পবিত্র শির মুবারক আনা হয় তখন সে বলেছিল, আহা! আমার (কাফের) পূর্বপুরুষরা যদি আজ বেঁচে থাকত তাহলে তারা দেখতে পেতেন যে কিভাবে আমি বদর এবং ওহুদ যুদ্ধে (মুসলমানদের হাতে) নিহত আমার (দাদা আবু সুফিয়ানের) আত্মীয়-স্বজনদের রক্তের বদলা নিয়েছি মুহাম্মদের কাছ থেকে! এই নরাধম পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ আরো বলেছিল, হুসাইনকে হত্যার মাধ্যমে আমরা মুহাম্মদকেই হত্যা করেছি!
(উল্লেখ্য, নবীবংশকে তথা হযরত আলী (রাঃ) ও নবী নন্দিনী খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর পুত্র বেহেশতী যুবকদের সর্দার ইমাম হুসাইনম (রাঃ) এর বংশধরদের কাছে ইসলামী খেলাফত ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে আব্বাসীয়রা জনগণের সমর্থন নিয়ে উমাইয়া রাজবংশকে উতখাত করলেও আব্বাসীয়রাও নবী-বংশের কোনো ইমামের কাছে কখনও ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়নি। বরং আব্বাসীয়রা নবীবংশের ওপর জুলুম অত্যাচারের ব্যাপারে উমাইয়াদেরকেও ছাড়িয়ে যায় এবং তাদের হাতে নবী-বংশের ৬ জন ইমাম শাহাদত বরণ করেছেন।
ইয়াজিদকে দুধ পান করিয়েছিল বেশ কয়েকজন চরিত্রহীন মহিলা। মুয়াবিয়ার কোনো ছেলে বা পুত্র সন্তান না থাকায় বহু বছর পর ইয়াজিদকে দামেস্কে নিয়ে আসে। মুয়াবিয়া বিশ্বনবী (সা.)'র বড় নাতি ইমাম হাসান মুজতাবা (রাঃ)'র সঙ্গে সন্ধির শর্ত লঙ্ঘন করে ইয়াজিদকে নিজের উত্তরাধিকারী বলে ঘোষণা করেছিল।
ইয়াজিদ কোনো ধর্মে বিশ্বাস করত না, যদিও তার গলায় ঝুলত মায়ের দেয়া একটি ক্রুশের লকেট। সে মাত্রাতিরিক্ত মদ পান করে মাতাল হয়ে থাকত এবং তার সঙ্গে সমকামে লিপ্ত হতে নিজের চাকরদের আহ্বান জানাত।
ইয়াজিদের মৃত্যুর ৫৮ বছর পর ১৩২ হিজরিতে আব্বাসীয় খলিফা আবুল আব্বাস আস সাফ্ফাহ উমাইয়া খলিফাদের কবর খুঁড়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল। ফলে আমির মুয়াবিয়াসহ তার পরের সব উমাইয়া রাজার কবর খুঁড়ে ফেলা হয়। ইয়াজিদের কবরে কেবল তার পায়ের একটি হাড় পাওয়া যায়, আর সবই ছিল কয়লার মত কালো হয়ে যাওয়া ছাইতুল্য মাটি। অর্থাৎ কবরের আজাবে তার পুরো শরীর ও হাঁড় পুড়ে গিয়েছিল।
সুন্নি ও শিয়া মুসলিম আলেমদের মতে ইয়াজিদ ছিল কাফের। কারণ, সে প্রকাশ্যেই বলেছিল নবী এবং ওহী বলতে কখনও কিছু ছিল না। অভিশপ্ত ইয়াজিদের সামনে যখন ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর পবিত্র শির মুবারক আনা হয় তখন সে বলেছিল, আহা! আমার (কাফের) পূর্বপুরুষরা যদি আজ বেঁচে থাকত তাহলে তারা দেখতে পেতেন যে কিভাবে আমি বদর এবং ওহুদ যুদ্ধে (মুসলমানদের হাতে) নিহত আমার (দাদা আবু সুফিয়ানের) আত্মীয়-স্বজনদের রক্তের বদলা নিয়েছি মুহাম্মদের কাছ থেকে! এই নরাধম পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ আরো বলেছিল, হুসাইনকে হত্যার মাধ্যমে আমরা মুহাম্মদকেই হত্যা করেছি!
(উল্লেখ্য, নবীবংশকে তথা হযরত আলী (রাঃ) ও নবী নন্দিনী খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর পুত্র বেহেশতী যুবকদের সর্দার ইমাম হুসাইনম (রাঃ) এর বংশধরদের কাছে ইসলামী খেলাফত ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে আব্বাসীয়রা জনগণের সমর্থন নিয়ে উমাইয়া রাজবংশকে উতখাত করলেও আব্বাসীয়রাও নবী-বংশের কোনো ইমামের কাছে কখনও ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়নি। বরং আব্বাসীয়রা নবীবংশের ওপর জুলুম অত্যাচারের ব্যাপারে উমাইয়াদেরকেও ছাড়িয়ে যায় এবং তাদের হাতে নবী-বংশের ৬ জন ইমাম শাহাদত বরণ করেছেন।
Bangladeshi Taka Converter
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.