বাঙালিদের বউ কত প্রকার ও কি কি?
‘বাঙালিদের মেয়েদের তুলনা পৃথিবীর কোনও মেয়েদের সঙ্গে হয়না। তাই আপনার বিয়ে করতে হলে বাঙালি মেয়েকেই বিয়ে করুন।’ এইটুকু শুনে আপনার নিশ্চয় কান কটকট , মাথা ভনভন অথবা চোখে সর্ষেফুলও দেখছেন। বিবাহিতরা ক্ষেপে উঠে বলছেন ‘বাঙালি হোক কিংবা অ-বাঙালি সব মেয়েরাই সমান।
এতে তফাত এর কিছু নেই’ তবে আপনাকে বলি এত উত্তেজনার কিছু নেই। মেয়েরা সবসময় জটিল তা সকলেই জানে। কিন্তু আপনি কি জানেন বাঙালিদের বউ কত প্রকার ও কি কি? মেয়ে যেমনই হোক না কেন বিয়ের পর পরিবর্তন অনিবার্য। কেউ কথায় কথায় ফণা তুলে ফোঁস করে ওঠে আবার কেউ, সুকুমার রায়ের ছড়ার মতো: ‘করে নাকো ফোঁস ফাঁস, মারে নাকো ঢুঁশ্ঢাঁশ, নেই কোনও উৎপাত, খায় শুধু দুধ ভাত।’ বেলনি হাতে কখনও ছক্কা কখনও বা ফক্কা। এরকমই হয় বউদের সব প্রকারভেদ। এবার তাই একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
সুন্দরী বউ: এই বউ ভীষণ সুন্দরী হয় এবং এটাই তার সমস্যা। সুন্দরী বউ যদি বিনয়ী হয় তবেও সমস্যা, আর দেমাগি হলেতো কথাই নেই। সুন্দরী বউয়ের রূপের দেমাগ থাকলে পুরো শ্বশুরবাড়ি, বিশেষত ননদ ও জা’এর সঙ্গে ঝামেলায় পড়ে যায়। আর যদি রূপ নিয়ে কোন গর্ব না-ও থাকে তবেও না-চাইতেও অনেক কথাই শুনতে হয়। এদিক ওদিক হলেই রূপ-সৌন্দর্যের কথা তুলে খোঁটা দেওয়া শুরু।
লক্ষ্মী বউ: আবহমান বাংলা চিরায়ত আদর্শ বউ আমাদের লক্ষ্মী বউ। এই বউ লক্ষ্মী বউ অল্পতেই খুশি। বরের কাছ থেকে তার কোন বাড়তি ডিমান্ড নেই। সারাদিন ঘরের টুকটাক কাজ করবে, ড্রয়িংরুম ও বেডরুম একাধিকবার গোছাবে, গেস্ট আসলে হাসিমুখে তাদের আপ্যায়ন করবে। কাজের লোককে দিয়ে না করিয়ে সব কাজ নিজেই করে ফেলবে। রান্নাঘরে তার দক্ষতার ছাপ রাখবে এবং সবশেষে বড়কে ব্যাপক ভালোবাসবে। লক্ষ্মী বউ বেশ দুর্লভ প্রকৃতির। এদের দেখা আজকাল শুধু পুরনো বাংলা ছবি বা ওই ন্যাকামি মার্কা সিরিয়ালেই পাওয়া যায়।
রাগী- মেজাজি বউ: খ্যাঁচখ্যাঁচ, খিটমিট, কটমট শব্দগুলো এই বউয়ের জন্যই তৈরি হয়েছিল। সকালে উঠেই কাজের লোকের সঙ্গে খ্যাঁচখ্যাঁচ, এরপর বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় এক প্রস্থ ঝামেলা রাস্তায় স্কুল থেকে ফিরে আসার সময় বাজার করতে গিয়ে দোকানদারের ওপর চোটপাট । এরপর ঘরে ঢুকে বাচ্চাদের পড়াতে বসে উত্তম মাধ্যম মার। দিনের শেষ ডোজটা বরাদ্দ থাকে বরের ওপর।
হস্তিনী বউ: হস্তিনী বউয়ের হাতি হয়ে ওঠার পেছনে তার স্বাস্থ্যের কোন সম্পর্ক নেই। এই বউ ঘরে রাখা অনেকটা হাতি পোষার মত। মাসের শুরুতেই সে বরের মানিব্যাগটির ওপর অধিপত্য বিস্তার করবে। খরচের ব্যাপারে সে হিসেবের ধার ধারে না। মাসের মধ্যে ১৪বার শপিংয়ে গিয়েও তার শান্তি হয়না। হাতি যেমন হঠাৎ গ্রামে হানা দিয়ে শস্যক্ষেত নষ্ট করে দেয়, তেমনি হস্তিনী বউ স্বামীর সংসারের টাকা সুন্দরভাবে বাবার সংসারে মানি লন্ডারিং করে দেবে।
চিরযৌবনা বউ: তার বয়স হয়েছে, কিন্তু রূপ-সৌন্দর্যে লেশমাত্র পড়েনি। অন্যান্য মেয়েরা বয়স বাড়ার সঙ্গে ফুলেফেঁপে ওঠে চামড়ায় ভাঁজ পড়ে, সেখানে চিরযৌবনা বউ দিন দিন আরও সুন্দর হচ্ছেন। বরকে তার এই বউকে নিয়ে কোন পার্টিতে গেলে লোকে তাদের দেখে বাবা-মেয়ে ভাবে। চিরযৌবনা বউয়ের বরেরা পরকীয়ার সাবধান!
সন্দেহবাজ বউ: এই বউ শুধু জামাইকে সন্দেহ করে। সে কোথায় যায়, কি খায়, কাদের সাথে ওঠা-বসা করে সব খবর তার চাই। ৫ মিনিটের বেশি এদিক-ওদিক হলেই ফোন। বিজি পেলেই আর রক্ষা নেই। কার সাথে কথা বলছিলে? কেন বলছিলে হাজার রকমের প্রশ্ন শুরু। শার্টের কলারে চুল আর লিপস্টিকের দাগ খোঁজা তার রোজকার কাজ। নিষ্পাপ স্বামীদের এমন বউরা প্রতিবাদী করে তোলেন। স্বামীরা ভাবেন – কিছু না করেই যখন এত কিছু শুনছি, তার চেয়ে ভালো কিছু করে তবে শুনি।
বৌ-মা: এই বউ ‘বউ’ কম, মা বেশি। সব সময় বরের ওপর একটা অভিভাবক ফলানোর চেষ্টা করে। সারাক্ষণ- এটা খাবে না, ওটা ধরবে না, বেশি বুঝবে না তো- এসব বলে নিজের বরকে শাসন করতে থাকে।
নিঃসঙ্গ বউ: এই বউয়ের বর বিয়ে করে তাকে গ্রামের বাড়ি রেখে গিয়েছে কিংবা দেশের বাইরে চলে গিয়েছে। এই নিঃসঙ্গ বউয়ের জীবন খুব কষ্টের হয়। বর কবে ফিরবে ক্যালেন্ডারে সেই দিন গোনা যেন শেষ হয়না। বরের সঙ্গে কথা বলতে যোগাযোগের কোন মাধ্যমই বাদ দেন না। অনেকটা ঠিক করুন ৬০’র দশকের সিনেমার মতন কেস।
আত্মকেন্দ্রিক বউ: নিজেকে নিয়েই পুরোটা সময় ব্যস্ত থাকেন আত্মকেন্দ্রিক বউ। ঘরের রান্নাবান্নার পুরো দায়িত্বটা কাজের লোককে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আর ছেলেমেয়ের পড়াশোনা অসংখ্য কোচিং। অবসর সময়টা কাজে লাগান টিভিতে সিরিয়াল দেখে আর রূপচর্চা করে। যৌথ পরিবারের ক্ষেত্রে বাড়ির অন্য বউদের মত সংসারের কোন কাজে-কর্মে তার কোন অংশগ্রহণ থাকে না। কিন্তু এর জন্য যে লোকে থাকে খারাপ ভাবছে তাতেও কোন ভ্রুক্ষেপ থাকে না।
হাই স্ট্যাটাস বউ: এই বউ বরকে পদে পদে ও হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেবে সে কোন ফ্যামিলির মেয়ে, সেখানে কি কি হতো যা তার সংসারে কি হয় না। এই বউ সব সময় বরকে বলবে, মাখন ছাড়া কোন দিন সে সকালে ব্রেকফাস্ট করেনি, বিয়ের পর যে চাকরিটা পেয়েছেন সেটাও তার বাবার কল্যাণে, ঘরের আসবাবপত্র সবই তারই বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা ইত্যাদি ইত্যাদি।
হতাশাগ্রস্ত বউ: এই বউয়ের আফসোস আর দুঃখের সীমা নেই। স্বামীর সংসারে এসে সে কিছুই পায়নি। কত শখ ছিলো বিয়ের পর সুইজারল্যান্ড যাবে, প্রতিদিন একটা নতুন শাড়ি হবে, সাউথসিটিতে একটা ফ্ল্যাট হবে, ছেলে-মেয়েরা নামী স্কুলে পড়বে – আরও কত কি! উঠতে বসতে এইসব হতাশা নিয়ে মীরা কুমারীর মত দিন কাটে।
হিংসুটে বউ: হিংসুটে বউয়ের সবকিছুতেই হিংসে, সবার সাথেই হিংসে। এই বউকে তার বর আর্থিক বা মানসিকভাবে কোনকালেই সুখী করতে পারবে না। আর বউয়ের নজর শুধু কোন মেয়ে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে শাড়ি কিনলো, জা-ননদরা কে কি করলো। সারাদিন শুধু এইসব নিয়েই আলোচনা আর ফিসফাস।
প্যাঁচালো বউ: এই বউ সংসারে অশান্তি বয়ে আনেন – তার কথা-বার্তা, তার আচার আচরণ, কূটচাল কুটনামির স্বভাব দিয়ে। বরের কানে শ্বাশুড়ির নামে বদনাম করেন আর শ্বাশুড়ির সামনে ছেলের। ‘এর কথা ওকে’ আর ‘ওর কথা একে’ বলে বেড়ানো তার স্বভাব। কথা ছড়ানোর সময় দু’-চার পরত রং মাখাতেও ছাড়েন না প্যাঁচালো বউ।
পানসে বউ: কোন কিছুর প্রতিই এই বউয়ের বিশেষ কোন আগ্রহ নেই। আপনি হয়তো অনেক শখ করে তার জন্য কিছু একটা উপহার নিয়ে এলেন – ‘হ্যাঁ, সুন্দরৃ’ ব্যস এতটুকুতেই শেষ। সারাজীবন আপনি তাকে একটাই প্রশ্ন করেই দিন কাটিয়ে দিলেন- ‘আচ্ছা তুমি এমন কেন?’
বাপের বাড়ি প্রিয় বউ: বছরের মধ্যে ১০ মাসই এই বউ বাপের বাড়ি থাকেন। কস্মিন-কদাচিৎ শ্বশুড়বাড়িতে গিয়ে তাদের খবরা-খবর জেনে আসেন। বউয়ের কারণে বরকেও অনেকটা সময় শ্বশুরবাড়িতে কাটাতে হয়। বউয়ের এমন বাপের বাড়ি প্রিয়তা শ্বশুরবাড়ির অশান্তি , তাদের সাথে বনিবনার অভাবে শুরু হতে থাকে।
কর্মজীবী বউ: কর্মসূত্রে অনেকটা সময়ই বাড়ির বাইরে থাকতে হয় কর্মজীবী বউকে। আর তাই সন্তানের দেখ ভালসহ সাংসারিক নানা কাজে খুব কমই সময় দিতে পারেন। অধিকাংশ পরিবারেই বিষয়টিকে অত্যন্ত নেগেটিভ ভাবে নেওয়া হয়। সবক্ষেত্রে বরের সমস্যা না থাকলেও সমস্যা থাকে শ্বশুরবাড়ির। সেই চাপে অনেক সময় কর্মজীবী বউদের চাকরী ছেড়ে সংসারমুখী হতে হয়। আর শক্ত মানসিকতার অনেকে দীর্ঘদিন লড়াই চালিয়ে হয় জয়ী হন।
তিড়িং-বিড়িং বউ: এই বউ সবকিছুতেই খুব উৎফুল্ল গোছের। বিয়ের পরে সমাজ যে ধরণের গাম্ভীর্য আশা করে তার অনেক কিছুই এর মধ্যে অনুপস্থিত। সাধারণত কমবয়সী মেয়েরা বউ হয়ে ঘরে এসে তার বয়সী কোন দেবর ও ননদ পেলে লাফালাফি শুরু হতে থাকে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.