ধর্ষণের আসামিকে ‘ক্রসফায়ারে’ দেয়া কি সমাধান?
বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে৷ গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী গত কয়েক সপ্তাহে ধর্ষণের মামলার বেশ কয়েকজন আসামি ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন৷ মানবাধিকার কর্মীরা (অপরাধীদের দালাল) বলছেন, বিচার নিশ্চিত না করে ক্রসফায়ার মানবাধিকারের লঙ্ঘন৷
যখন তারা নিরীহ শিশু, কিশোরী, তরুণীদের ধর্ষণ করে তখন এই অপরাধীদের দালাল এটাও মানবাধীকার কর্মীকে দেখা যায় না।
যাই হোক, রবিবার (২৪.০৪.১৮) ভোররাতে চট্টগ্রামের বাঁশখালী-পেকুয়া এলাকায় র্যাব-এর সঙ্গে ক্রসফয়ারে আব্দুল হাকিম মিন্টু (৩০) নামে শিশু ধর্ষণ মামলার এক আসামি নিহত হয়৷ র্যাব জানিয়েছে, ঐ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে প্রথমে তাদের গোলাগুলি হয়৷ পরে আব্দুল হাকিম মিন্টুর লাশ পাওয়া যায়৷ র্যাব-এর কথা অনুযায়ী, ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, পাঁচ রাউন্ড গুলি ও দু'টি গুলির খোসা উদ্ধার করে তারা৷নিহত আব্দুল হাকিম মিন্টু গত ১৮ এপ্রিল বাঁশখালীর শেখেরখীল ইউনিয়নে এলাকায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ১০ বছরের একটি শিশুর ধর্ষণ মামলার আসামি৷
গত ২১ এপ্রিল রাতে সাতক্ষীরা কলারোয়ায় শিশু ধর্ষণ মামলার আসামি সোহাগ হোসেন পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হয়৷ সে কলারোয়া উপজেলার কেড়াছাগাছি ইউনিয়নের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ন'বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণ করেছিল বলে জানায় পুলিশ৷
৯ এপ্রিল যাশোরে র্যাব-এর ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে শিশু ধর্ষণ মামলার আরেক আসামি আল আমিন ওরফে বাবু৷ যশোর সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের পর তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানায় ব়্যাব৷ তার বিরুদ্ধে গত ৩০ মার্চ আট বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণ করার অভিযোগে মামলা আছে৷ ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ানশুটার গান, এক রাউন্ড গুলি ও একটি ছোরা উদ্ধার করা হয় বলে খবর৷
গত ৯ মার্চ ভোর রাতে আশুলিয়ায় ক্রসফায়ারে ধর্ষণ মামলার আসামি রুবেল নিহত হয়৷ রুবেল সাভারে একটি বাসে তরুণী ধর্ষণ ও চালক হত্যা মামলার প্রধান আসামি বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
গত বছরের ১৭ অক্টোবর ভোর রাতে কক্সবাজারে শিশু ধর্ষণ মামলার আসামি সেলিম র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়৷ র্যাব জানায়, সেলিম ঐ বছরের ২৩ আগস্ট কক্সবাজার বিমানবন্দর রোডের ফিশারিঘাট এলাকায় তিন বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করেছিল৷ সেলিমকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযোন চালালে গোলগুলিতে সে নিহত হয়৷ ঘটনাস্থল একটি বিদেশি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটার গানও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় ব়্যাব৷
এদিকে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য ধর্ষণকারীদের ক্রসফায়ারে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন খোদ সংসদেই৷ জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ গত ১০ এপ্রিল সংসদে এই দাবি জানান৷ তিনি সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় দেশে সম্প্রতি ‘গণধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার' বিষয়টি তুলে ধরেন৷ এরপর গত মার্চ মাসে আশুলিয়ায় বন্দুকযুদ্ধে ধর্ষণের আসামি নিহত হওয়ার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘ন'বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে পালিয়ে গিয়েছিল সে৷ সেই ধর্ষণকারীর সাথে র্যাব-এর বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে৷ র্যাব-এর দু'জন আহত হয়েছে৷ ধর্ষক নিহত হয়েছে৷ এটাই জনগণ দেখতে চায়৷''
তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিনই বাসে ধর্ষণ হবে আর আপনি আইনের আশ্রয় নেবেন? এভাবে চলতে পারে না৷ মানুষ দেখতে চায়, এই মুহূর্তে বিচার হবে কি হবে না৷'' তিনি অবশ্য একইসঙ্গে ধর্ষণ মামলার বিচারের জন্য সংক্ষিপ্ত আদালতের কথাও বলেন৷
মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ধর্ষণের মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও তদন্তে অনীহা দেখতে পাই আমরা৷ বিচারেও তেমন অগ্রগতি নেই৷ শতকরা মাত্র তিনভাগ মামলায় আসামির শাস্তি হয়৷ নানা পর্যায়ে প্রভাবশালীদের ছাড়ও দেয়া হয়৷ বাস থেকে নেমে এক নারী যৌন হয়রানির অভিযোগ করলেন৷ অথচ পুলিশ বললো, তদন্ত ছাড়া তাকে আটক করা যাবে না৷ এছাড়া মামলা প্রমাণেও আছে নানা জটিলতা৷ এ সব কারণে ধর্ষকরা পার পেয়ে যায়৷ ফলে ধর্ষণ বেড়ে চলেছে৷ ধর্ষক অপ্রতিরোধ হয়ে উঠছে৷ তাই একমাত্র বিচার নিশ্চিত করা গেলে এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে৷''
তিনি অারো বলেন, ‘‘ধর্ষণের মামলার আসামিদের ক্রসফায়ারে দেয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না৷ একটি অপরাধ দমনে আরেকটি অপরাধ করা হচ্ছে৷আমরা এটাকে হত্যাই বলি৷ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন৷ এর মাধ্যমে ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ কমবে না৷ কমার কোনো কারণও নেই৷ আর ধর্ষনের বিচার যে হয় না, তার প্রমাণ হলো ক্রসফায়ার৷ বিচার নিশ্চিত করতে হবে৷ ধর্ষণ বন্ধে ক্রসফায়ার কোনো সমাধান নয়৷''
তাই সবচেয়ে সহজ সমাধান, "No Corss Fire, No jail, রাষ্ট্রীয় ভাবে বিচার করে ধর্ষককে প্রকাশ্যে দিবালকে শুক্রবার জুম্মার পর মধ্য প্রাচ্যের মত কতল বা শিরচ্ছেদ করা"।
মধ্য প্রাচ্যে বা অারব রাষ্ট্রের মত প্রকাশ্যে দিবালকে ধর্ষকদের কতল বা শিরচ্ছেদ করা যায়। তবে এদেশে ধর্ষণের হার শুধু কমবেই না মেয়েরা সব জায়গায় নিরাপদ থাকবে। হউক সেটা ঘর, বাহির, রাস্তা কিংবা কর্মক্ষেত্র। তাই একজন মুসলমান হিসেবে, এক বোনের ভাই হিসেবে, একজন বাংলাদেশী হিসেবে, একজন নারী নিরাপদ অধিকার দাবিকারী হিসেবে, মুজিব সেনা হিসেবে দেশ রত্ম, মানবতা মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অামার দাবী ও অাবদার অবিলম্বে বাংলাদেশে ধর্ষণ রোধে রাষ্ট্রীয় বিচারের মাধ্যমে ধর্ষককে প্রকাশ্যে কতল বা শিরচ্ছেদের অাইন প্রণয়ন করা হউক।
সূত্র:- www.dw.com
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.