দুই সন্ত্রাসীর জবানবন্দি ‘গুলি করবি তবে মারবি না’
‘বড় নেতা হইয়া গেছস, নেতামি ছুটাইয়া দিমু’- এ কথা বলে ওয়ারীর যুবলীগ নেতা মো. জুয়েলসহ তিনজনকে এলোপাতাড়ি গুলি করে পুরান ঢাকার ভয়ঙ্কর শুটার গ্রুপের সদস্যরা।অতর্কিত হামলা করে পুরান ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ২২ মামলার আসামি সুলতান আহমেদ ইমু ও তার ক্যাডাররা। অবশ্য এ হামলার আগে স্থানীয় এক কমিশনারের সঙ্গে ইমুর ১০ লাখ টাকার চুক্তি হয়।
চুক্তিতে শর্ত দেয়া হয়- ‘জুয়েলকে গুলি করতে হবে, তবে যেন না মরে।’ শুটার গ্রুপের সদস্য সোহেল ও মিরাজের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।গত বছর ১১ আগস্ট ওয়ারী থানার লালমোহন সাহা স্ট্রিটের একটি মাংসের দোকানে বসা জুয়েলকে টার্গেট করে তার পায়ে গুলি করে ইমু, মো. সোহেল, আবির ও ডান্সার। এ সময় স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করলে তারা ফাঁকা গুলি ও বোমা ফাটিয়ে পালিয়ে যায়।
মামলার বাদী, তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ও শুটার গ্রুপের সদস্যদের দেয়া তথ্যানুসারে ১১ আগস্ট রাত ৮টার দিকে ওয়ার্ড যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. জুয়েল, মো. রবিন ও কাজল ইসলামকে গুলি করে অস্ত্র ও মুখোশধারী ছয় সন্ত্রাসী।এ ঘটনায় জুয়েলের ছোট ভাই সোহেল রানা বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় মামলা করেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী জোনাল টিমকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। জুয়েলকে লক্ষ্য করে গুলি করার আগে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশি করার সময় ইমু, মিরাজ, লিটন ও আবির পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে বলে জানা গেছে।
২৬ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ইমু নিহত হয়। তার বিরুদ্ধে রাজধানীসহ বিভিন্ন থানায় ২২টির মতো মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার শিকদার মোহাম্মদ হাসান ইমাম যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করেছি।তাদের মধ্যে সোহেল ও মিরাজসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারদের মধ্যে সোহেল ও মিরাজ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এদিকে, মামলার বাদী সোহেল রানা যুগান্তরকে বলেন, পুরান ঢাকার কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে ইমু নিয়মিত চাঁদা নিত। এতে জুয়েল বাধা দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তার ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তিনি আরও জানান, আহত জুয়েলসহ তিনজন বেশ কিছু দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, জুয়েলের ওপর হামলার জন্য স্থানীয় এক কমিশনারের সঙ্গে ইমুর ১০ লাখ টাকার চুক্তি হয়। হামলার পর তারা চুক্তির পাঁচ লাখ টাকা পায়।
সম্প্রতি আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে সোহেল জানায়, মোটরসাইকেলের কাজ করাতে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে গেলে ইমুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তার সঙ্গে চলাফেরা শুরু করি। তার সঙ্গে মিশতে গিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি।ঘটনার দিন আমি, ইমু, মিরাজ, আবিরসহ ছয়জন অস্ত্র ও বোমা নিয়ে ওয়ারীতে যাই। ঘটনাস্থলে জুয়েলসহ তিনজনের পায়ে ইমু গুলি করে। আমি গুলি করার আগেই পিস্তলের ম্যাগাজিন খুলে পড়ে যায়।
মিশন শেষে বাসে করে আমরা যার যার বাসায় চলে যাই। এরপর ইমুর কথা অনুযায়ী চুক্তির টাকা আনতে গরুর হাটে বিপ্লবের কাছে যাই। বিপ্লব না এসে লোক দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা পাঠায়। ইমুকে সব টাকা বুঝিয়ে দেই। সোহেল আরও জানায়, নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে যে বন্দুকযুদ্ধ হয়েছিল সেই গাড়িতে ইমু, আবির, লিটন ও মিরাজ ছিল।২৬ জানুয়ারি আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে মো. মিরাজ জানায়, ঘটনার দিন বন্ধু সোহেল, ইমু, আবির, ডান্সার ও ভাগিনা লিটন মিলে ওয়ারীতে যাই। তাদের সবার কাছে পিস্তল ছিল। একটি মাংসের দোকানে জুয়েলকে দেখে ইমু, সোহেল, আবির ও ডান্সার এলোপাতাড়ি গুলি করে। লোকজন ধাওয়া দিলে আমরা বোমা হামলা করি। এরপর গুলিস্তানে গিয়ে বাসে করে মালিবাগ চলে যাই।
সূত্র- যুগান্তর
সূত্র- যুগান্তর
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.