বাম সমাবেশ থেকে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস হটানোর ডাক
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ব্রিগেডের সমাবেশ থেকে বিজেপি ও তৃণমূল-কে হটানোর ডাক দিয়েছেন বামেরা। রবিবার বামফ্রন্টের ডাকা সমাবেশ থেকেই কেন্দ্র থেকে বিজেপি সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে উৎখাতের ডাক দেন বাম শরিক দলের নেতারা।
তৃণমূলকে একহাত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের রাজ্যে যে দল শাসন করছে, তারা বিজেপির সাথে ঘর করেছিল। শুধু ঘর করাই নয়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরএসএস-র পত্রিকা ‘পঞ্চজন্য’ মোড়ক উন্মোচনেও উপস্থিত ছিলেন এবং বলেছিলেন আমি না আসলে জানতেই পারতাম না আরএসএস কেমন ধরনের সংগঠন। সেই আরএসএস-কে এ রাজ্যে ঘাঁটি তৈরি করতে সহায়তা করেছিলেন দলের প্রধান নেত্রী। আজ তারাই বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলছে। আসলে এই দুই দলই একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলে। আমি বলতে চাই বিজেপি ও তৃণমূল-একই বৃন্তের দুইটি ফুল।’
বিমান বসুর অভিযোগ, রাজ্যে ভোটদানের অধিকার নেই, গণতান্ত্রকেও হরণ করা হয়েছে। বহু কমরেডদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের দুর্গ তোলার ডাক দেন। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বামপন্থীদের শক্তি বাড়ানোরও আহ্বান জানান তিনি।
সিপিআইএম’এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘মোদি সরকারকে হটিয়ে দেশকে বাঁচাতে হবে। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসকে সরিয়ে বাংলাকে বাঁচাতে হবে। আর এই লাল পতাকাই এদেরকে সরিয়ে সুন্দর ভারত ও সুন্দর বাংলা গঠন করতে। এটাই আমাদের সংকল্প। কারণ এরা যে নীতি নিয়ে সরকার চালাচ্ছে তাতে দেশ, দেশের মানুষ, সমাজের ক্ষতি হচ্ছে। মোদির নীতির ফলে দেশে বেকারত্ব বেড়েছে, নোট বাতিল, জিএসটি চালু হওয়াতে কয়েক লাখ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গোটা দেশে লুঠ চলছে। সারা দেশে সহিংসতা বেড়ে চলেছে। আসামে নাগরিক পঞ্জির নামে দেশের সংবিধানকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। দেশের মানুষ এখন নীতির বদল চাইছে, তারা নেতা চায় না।’
তৃণমূলকে আক্রমণ করে ইয়েচুরি বলেন, ‘যে বিজেপির বিরুদ্ধে গুজরাটের দাঙ্গার অভিযোগ উঠেছিল, মমতা একটা সময় সেই এনডিএ সরকারের হাত ধরেছিল। আর এখন ওদের বিরুদ্ধে গালমন্দ করছেন তিনি। আসলে বিজেপি ও তৃণমূল উভয়েই ভাঁওতাবাজি চালাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রীকে পকেটমারের সাথে তুলনা করে ইয়েচুরি বলেন, ‘উনি হলেন সেই পকেটমার, যে প্রথমে দশ হাজার রুপি পকেট মেরে এখন সেই রুপি থেকে অন্যের টিকিট কেটে দিয়ে সহানুভুতি দেখাচ্ছেন। উনি হলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। পাঁচ বছর লুট করে এখন পয়সা ফেরত দিচ্ছেন। একে হারাতে হবে। আর পকেটমার যখন কাজ করে তখন একা করে না, তার এক সঙ্গী থাকে। সে হল তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী। এরা দুইজন মিলেই লুট করছে।’
একদিকে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি, অন্যদিকে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল। কেন্দ্র ও রাজ্যের এই দুই ক্ষমতাসীন দলের পরস্পরবিরোধী সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের জেরে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত রাজ্যের রাজনীতি। আর এই আবহেই রাজ্যের নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব প্রমাণ করতেই প্রায় তিন বছর পর এদিন ব্রিগেডে সমাবেশ করলো বামফ্রন্ট।
বিমান বসু, সীতারাম ইয়েচুরি ছাড়াও এদিনের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, আরএসপি নেতা ক্ষিতি গোস্বামী, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা দেবব্রত বিশ্বাস, সিপিআইএম সাংসদ সেলিম প্রমুখ।
তবে শারীরিক অসুস্থতা উপেক্ষা করেও ব্রিগেড ময়দানে হাজির ছিলেন রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্যকে সাথে নিয়েই এদিন দক্ষিণ কলকাতার বাড়ি থেকে গাড়িতে করে ব্রিগেড সমাবেশে আসেন বুদ্ধদেব। যদিও সেই অসুস্থতার কারণেই সিঁড়ি ভেঙে মঞ্চে ওঠেননি তিনি। মঞ্চের নীচেই গাড়ির মধ্যে বসেই বিভিন্ন বক্তাদের ভাষণ শোনেন তিনি। শেষে প্রায় ৪৫ মিনিট পর ফের বাড়ির উদ্যেশে রওনা দেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী। এ ব্যাপারে মীরা ভট্টাচার্য জানান আমরা ‘শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলাম।’
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.