রিজার্ভ চুরির মামলা তিন বছরে নিষ্পত্তির আশা
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বাকি অর্থ ফিরিয়ে আনা ও ক্ষতিপূরণ আদায়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে করা মামলা নিষ্পত্তিতে ৩ বছর সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি। টাকা উদ্ধারে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা।
রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। এ সময় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, বিএফআইইউর উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জিএম আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আইনজীবী আজমালুল হোসেন জানান, মামলাটি ৩ বছরের মধ্যে সমাধান হবে। তবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এ সময় কমতে বা বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের (ফেড) সঙ্গে মামলার বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। তারা মামলার জন্য বিভিন্ন নথি, তথ্য সরবরাহসহ সাক্ষী দেবে। ৪০০ প্যারার ১০৩ পৃষ্ঠার মামলার অভিযোগপত্রে আরসিবিসিসহ ৭টি প্রতিষ্ঠান, ১৫ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ২৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে বিবাদী করা হয়েছে। ১০১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে শ্রীলংকার ২০ মিলিয়ন ডলারসহ ফেরত এসেছে ৩৫ মিলিয়ন ডলার। বাকি ৬৬ মিলিয়ন ডলার ফেরত পেতে মামলা করা হয়েছে। এর সঙ্গে সুদসহ মামলার খরচ ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে বিবাদীরা। মামলা করতে বিলম্বের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ফেডের সঙ্গে চুক্তি করতে সময় লেগেছে। শুরু থেকেই লেগে ছিলাম। সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এখন ভালো অবস্থানে আছি। ফিলিপিন্সে মামলা না করে কেন যুক্তরাষ্ট্রে করা হল এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মামলা করার জন্য তৃতীয় স্থান যুক্তরাষ্ট্রই উত্তম ছিল। কারণ এখানে মামলা নিষ্পত্তি দ্রুত হবে। এছাড়া বিবাদীদের অনেক সম্পদ আছে যুক্তরাষ্ট্রে। ফিলিপিন্সের চুক্তিও আছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। যা দিয়ে উভয় দেশের যে কোনো তথ্য আদান-প্রদান এবং মামলার রায় কার্যকর করা সম্ভব। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের প্রতিবেদন কেন প্রকাশ করা হয়নি জানতে চাইলে আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, সরকার কেন প্রকাশ করেনি তা আমি জানি না। তবে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে ফিলিপিন্সে চলমান তদন্ত ব্যাহত হতো। ওই জায়গায় আমি নিজে থাকলেও তা প্রকাশ করতাম না। হয় তো বা সরকার সে কারণে প্রকাশ করেনি। এ মামলা পরিচালনায় কত খরচ হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ‘টাকা উদ্ধারে খরচ নিয়ে সবার জানার আগ্রহ বেশি দেখছি। হিসাব চূড়ান্ত হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত তিন কোটি টাকার বেশি খরচ হয়নি। একই প্রশ্ন টেনে নিয়ে বিএফআইইউ উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, কত খরচ হল সেটা বড় কথা নয়; সরকারের লক্ষ্য অপরাধী ধরা।’
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরে রিজার্ভ চুরির বাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং আইনি খরচ ফেরত পেতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলাটি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ দেয়া ল ফার্ম কোজেন ও’কনর। মামলায় অভিযোগ করা হয়, আরসিবিসির শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা এ অর্থ চুরির জন্য কয়েক বছর ধরে ‘জটিল ষড়যন্ত্র’ করেন। শনিবার আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। সুইফটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হ্যাকড করে পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলংকায় যাওয়া দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে এখনও ফেরত আসেনি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.