আত্মাহুতি দেয়া ছাড়া আমাদের উপায় নেই
‘জীবনে হয়তো কোনো পাপ করেছি, যার প্রায়শ্চিত্ত করতে এসেছি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্দ্বে আড়াই মাসেরও বেশি সময় আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। এমনিতেই আমরা সেশনজটের মধ্যে পড়েছি। শিক্ষাজীবন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন তারা। পা ধরেও তাদের বিবেককে নাড়া দিতে পারিনি। এমন অবস্থায় আত্মাহুতি দেয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’
কথাগুলো বলছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) অনুষদের লেভেল-৪, সেমিস্টার-২ এর ছাত্র শামীম ইসলাম। ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর দাবিতে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হাঁটু গেড়ে ও কান ধরে অভিনব কর্মসূচি পালনকালে ক্ষোভে-দুঃখে-কষ্টে এমন কথা বলেন শামীম।
সিএসই, বিজ্ঞান, ফিসারিজ অনুষদের সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অভিনব আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় কারও মাথায় ছিল জমটুপি ও কাউকে ফাঁসির রশিতে আত্মাহুতি দেয়ার ভঙ্গিতে দেখা যায়। দুপুরে ক্যাম্পাসে বুকে ফেস্টুন নিয়ে হাঁটু গেড়ে এবং কান ধরে অভিশাপ মোচনের এই প্রতীকী কর্মসূচি পালিত হয়।
ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) অনুষদের লেভেল-৪, সেমিস্টার-২ এর ছাত্র সজীব চৌধুরী মাথায় জমটুপি, হাতে ফাঁসির রশি ধরে জানান, আড়াই মাস ধরে ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর দাবি জানিয়ে আসছি।
শিক্ষক ও প্রশাসন কেউই কথা শুনছেন না। বাবা-মা অনেক আশা নিয়ে তাদের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে আমাদের লেখাপড়ার জন্য পাঠিয়েছেন। তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। আত্মাহুতি দেয়া ছাড়া কোনো উপায়ও দেখছি না।
আত্মাহুতির কোনো ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার প্রশাসন ও শিক্ষকদেরই নিতে হবে। শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রশাসন ও শিক্ষকরা শুধু তাদের কথাই ভাবছেন। আমাদের দিকে কেউ তাকাচ্ছেন না।
এদিকে সংকট নিরসনে মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টায় ভিসির বাসভবনে আন্দোলনরত নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক, প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম, ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেন ভিসি প্রফেসর ড. মু. আবুল কাশেম। রাত ১২টা পর্যন্ত বৈঠক চললেও সংকট নিরসন হয়নি।
আন্দোলনরত সহকারী অধ্যাপকদের নেতৃত্বদানকারী কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বলেন, ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না, এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক, শিক্ষার্থীদের দেখে কষ্ট লাগে। কিন্তু আমরা আমাদের মর্যাদার জন্য লড়াই করছি। সম্মানজনক নিষ্পত্তি পাচ্ছি না। তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম মঙ্গলবারের বৈঠকেই যাতে সমস্যার সমাধান হয়। প্রশাসন সেই সভাটি ভণ্ডুল করে দেয়।
প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের নেতা প্রফেসর ড. হারুনর রশিদ জানান, মঙ্গলবার আমরা বসেছিলাম। প্রশাসনের কিছু শিক্ষকের জন্যই আলোচনা ভেস্তে গেছে। এটি খুবই দুঃখজনক। তিনি সংকট সমাধান করে ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
হাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সফিউল আলম জানান, একাধিকবার আলোচনার পরও সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনা চলছে যাতে দ্রুত ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হয়।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.