অনুমতি নিয়ে কেনা যাবে হরিণ-ময়ূর
উন্মুক্ত হলো ময়ূর ও হরিণ কেনা। শৌখিন ক্রেতারা ইচ্ছা করলে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে এ দুটি দৃষ্টিনন্দন প্রাণী কিনতে পারবেন। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে এ দুই প্রাণী কেনার জন্য সব ধরনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে হরিণ প্রতিটি ৩৫ হাজার টাকা ও ময়ূর এক জোড়া ৫০ হাজার টাকায় কেনা যাবে। হরিণ কেনার লাইন দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। এমপি, সরকারি কর্মকতা ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা এ লাইনে শরিক হয়েছেন। গত ছয় মাসে হরিণ কেনার জন্য বন বিভাগের বন্যপ্রাণী শাখায় চিত্রল হরিণের জন্য ৮৪২টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে প্রভাব খাটিয়ে ৯১ জন ও খামারি পর্যায়ে ৭টি প্রতিষ্ঠানকে হরিণ সংগ্রহ (কেনার) করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনেকে কেনার জন্য ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানাসহ কয়েকটি স্থানে আবেদন করেছেন। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গতকাল পর্যন্ত তার অফিসে বর্তমান জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকতা ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীসহ ১৯৮ জন ব্যক্তি চিত্রল হরিণ কেনার আবেদন করেছেন। আবার অনেকে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী শাখা থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন। সংগ্রহকারীদের মধ্যে সংসদ সদস্যও রয়েছেন। আরও রয়েছেন কয়েকজন আমলা ও ব্যবসায়ী। দেশে এখন ব্যক্তি ও খামারি পর্যায়ে ২৫৫ জন হরিণ পালনের লাইসেন্স পেয়েছেন। যারা এখনো লাইসেন্স সংগ্রহ করেও চিত্রল হরিণ সংগ্রহ করতে পারেননি তারা এখন বিভাগীয় বন্যপ্রাণী কর্মকর্তার অফিসে ধরনা দিচ্ছেন। দেশে চারটি বিভাগীয় বন্যপ্রাণী কর্মকর্তার অফিস রয়েছে। এগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যক্তি ও খামারের জন্য প্রতিটি হরিণ ৩৫ হাজার টাকায় কিনতে পারবেন। কেনার পরও কেবল নির্ধারিত ফি দিয়ে ব্যক্তি ও খামারি পর্যায়ে লাইসেন্স নেওয়া যাবে। আমরা আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে হরিণ বিক্রি করছি। হরিণের সংখ্যা ১০ এর বেশি হলে খামারের লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া বয়স্ক বা রোগাক্রান্ত হলে ভেটেরিনারি সার্জনের অনুমতি নিয়ে হরিণের মাংস খাওয়া যাবে। এ ছাড়াও অন্য আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) সংশোধন আইন-১৯৭৪ এর আওতায় ৬ জানুয়ারি থেকে চিত্রল হরিণ লালন-পালন সংক্রান্ত নয়া নীতিমালা প্রণয়ন করে। এই নীতিমালা সমগ্র বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে অন্য প্রজাতির হরিণ এ নীতিমালার আওতাভুক্ত হবে না। চিত্রল হরিণ লালন-পালনের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত ফি দিয়ে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে খামার ব্যতীত চিত্রল হরিণ লালন-পালনের লাইসেন্স ফি ৫০০ টাকা। মেট্রোপলিটন এলাকায় লাইসেন্স ফি ৫ হাজার টাকা। জেলা সদরের খামারের জন্য লাইসেন্স ফি ২ হাজার ৫০০ টাকা। অন্য এলাকায় প্রতি খামারের জন্য লাইসেন্স ফি ২ হাজার টাকা। এ ছাড়াও প্রতি হরিণের পজেশন ফি ১০০ টাকা। বার্ষিক নবায়ন ফি ১০০ টাকা। কোনো ব্যক্তির পালিত হরিণের সংখ্যা ১০টির বেশি হলে তাকে খামারির লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। লাইসেন্স করার আগে ও পরে হরিণ কেনা যাবে। তবে হরিণ কেনার ১৫ দিনের মধ্যে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। একইভাবে ময়ূরও কেনা যাবে এ প্রক্রিয়ায়। অনুমতি পেলে ব্যক্তি বা খামারির প্রতিনিধি চিড়িয়খানা বা বন বিভাগের নিয়ন্ত্রিত স্থান থেকে এ হরিণ ও ময়ূর কিনতে পারবেন। ঢাকা ও রংপুর চিড়িয়াখানা ছাড়াও বন বিভাগের গাজীপুর রেঞ্জ থেকে লাইসেন্স দেখিয়ে ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনের চিত্রল হরিণ ও ময়ূর কেনা যাবে। এ ছাড়া বাচ্চা দিলে কিংবা মারা গেলে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের অফিসে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.