যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপেই থেমেছিল পাক-ভারত যুদ্ধ

গত মাসে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতির সময় উভয় দেশ পরস্পরের দিকে পাল্টাপাল্টি মিসাইল তাক করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায় উভয় দেশ নিবৃত হয়। রয়টার্স জানায়, পাকিস্তান ভারত দুই দেশের সম্পর্ক এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে, মার্কিন কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ না হলে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগেই যেত।এতে বলা হয়েছে, অভিনন্দন বর্তমানের চোখ ও হাত বাঁধা ছবি দেখার পরই যুদ্ধের হুঙ্কার দিয়েছিল ভারত। মিগ-২১ বনাম এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের ডগফাইটের পর সরাসরি ভারত-পাক যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
এতে বলা হয়, ছয়টি মিসাইল পাকিস্তানের অভ্যন্তরে তাক করে রেখেছিল নয়াদিল্লি। এর পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে ইসলামাবাদও ক্ষেপণাস্ত্র তাক করেছিল। তবে নয়াদিল্লি, ইসলামাবাদ ও ওয়াশিংটনের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এসব জানায়।ইমরান খান ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ছেড়ে দিয়ে উদারতা দেখানোর ঘটনায় নমনীয় হয়ে যায় ভারত। এতে যুদ্ধের পরিস্থিতি অনেকটা রোধহয়।যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের দাবি, অভিনন্দকে আটক অবস্থার ভিডিও দেখার পরই ভারতীয় কূটনৈতিক ও সামরিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় নয়াদিল্লি সরাসরি হুমকি দেয়, পাকিস্তানের মাটিতে ছয়টি মিসাইল দিয়ে হামলা চালানো হবে। তবে কী ধরনের মিসাইল বা কোথায় সেগুলো ফেলা হবে তা নয়াদিল্লি স্পষ্ট করেনি। এ খবরে পাকিস্তানও পাল্টা জবাবে বলে ভারত একটা মিসাইল ফেললে তারা তিনটি ফেলবে।এই উত্তেজনার খবরে হস্তক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। উত্তেজনা এতটাই চরমে ছিল যে দুই প্রতিবেশী দেশকে নিরস্ত করতে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনকে পর্যন্ত ময়দানে নামতে হয়।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বালাকোটে ঢুকে বোমা ফেলে ভারতীয় বিমানবাহিনী। পরের দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের আকাশসীমায় ঢোকে পাকিস্তানের একাধিক যুদ্ধবিমান এফ-১৬। সেই সময়ই মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমান নিয়ে পাক যুদ্ধবিমানগুলোকে তাড়া করেন অভিনন্দন। এরপর শুরু হয় ‘ডগফাইট’।এতে দাবি করা হয়, পাকিস্তানের একটি এফ-১৬ ধ্বংসের পর অভিনন্দনের যুদ্ধবিমানও ধ্বংস হয়। তিনি অবতরণের পর পাক সেনার হাতে বন্দি হন। ওই ঘটনার পর পাক সেনাদের প্রকাশিত এ০কটি ভিডিওতে দেখা যায়, অভিনন্দনের চোখ বাঁধা। হাত পিছমোড়া করে বাঁধা।
এই ছবি দেখার পরই ভারতীয় গোয়েন্দা এবং সামরিক মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।ওয়াশিংটন, ইসলামাবাদ এবং নয়াদিল্লির সূত্রের বরাতে রয়টার্সের দাবি, পাক সেনার ওই ভিডিও দেখেই ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ‘সিকিওর লাইনে’ সরাসরি পাক আইএসআই প্রধান আসিম মুনিরকে ফোন করেন। ডোভাল পাকিস্তানকে জানিয়ে দেন, অভিনন্দনকে তারা আটক করলেও পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাস দমনে ভারত পিছপা হবে না। পাকিস্তানের মাটিতে যে সব জঙ্গিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের কিছুতেই ছাড়বে না ভারত। সেই সময়ই ছয়টি মিসাইল হামলা চালানোর কথা জানতে পারেন মার্কিন গোয়েন্দারা।
রয়টার্সের দাবি করছে, পাক সরকারের এক মন্ত্রী এবং পশ্চিমা এক কূটনৈতিক আলাদাভাবে নিশ্চিত করেছেন যে, ওই সময়ই ভারত অন্তত ছয়টি মিসাইল পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ‘টার্গেট’ করে রেখেছিল। পাকিস্তানের ওই মন্ত্রী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির গোয়েন্দা সংস্থা এ নিয়ে যোগাযোগ করেছিল। নাম প্রকাশে ওই মন্ত্রীর দাবি, ইসলামাবাদও বলে দিয়েছিল, আপনারা একটা মিসাইল ফেললে আমরা তিনটি ছাড়ব। ভারত যাই করবে, আমরা তার তিনগুণ প্রত্যাঘাত করব।তবে অজিত ডোভালের অফিস রয়টার্সকে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। পাক সেনাও এ নিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে গেছে। আসিম মুনিরও রয়টার্সের প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় দেশটির আধাসামরিক বাহিনীর ৪৯ জন সেনা সদস্য নিহত হয়। এ নিয়ে নতুন করে পাকিস্তান ভারত উত্তেজনা দেখা দেয়।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.