সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    গণপরিবহনের দশ অন্যায়

    গণপরিবহনের দশ অন্যায়

    গণপরিবহন ব্যবস্থায় কতটা নৈরাজ্য চলছে সেটি বুঝতে হলে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। রাজধানীর লোকাল বাসগুলোতে রোজ যাদের চড়তে হয়, তারা জানেন পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক। একটি দেশের রাজধানীর চিত্র দেখেই দেশটির সম্পূর্ণ চিত্র খানিকটা অনুমান করা যায়। রাজধানী ঢাকার প্রায় প্রতিটি সড়কই যেন একেকটি মৃত্যুফাঁদ। পথে পথে অকাল মৃত্যুর আয়োজন। নির্মম সেসব মৃত্যুদৃশ্যও এখন আমাদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

    সারা পৃথিবীতেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। কিন্তু অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের চিত্র অনেক বেশি ভয়াবহ। সড়কে অকালে এত অমূল্য প্রাণ পৃথিবীর আর কোনো দেশে ঝরে পড়ে বলে আমাদের জানা নেই। অথচ চাইলেই এ মৃত্যুর মিছিল থামিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু গোড়ায় যখন গলদ থেকে যায়, নানা উদ্যোগ নিয়েও কোনো সুফল পাওয়া যায় না তখন।রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থা সীমাহীন নৈরাজ্য আর অনিয়মের জালে যেন বন্দি হয়ে পড়েছে। গণপরিবহনে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা থেকে এসব চিত্র দেখতে হয় আমাদের। 

    ধরুন আপনি, মিরপুর দশ নম্বর থেকে রামপুরাগামী কোনো বাসে উঠেছেন। আপনি নামবেন হয়তো মাটিকাটা বা কুড়িল বিশ্বরোড। আপনাকে এটুকু পথের জন্য ভাড়া গুনতে হবে পঁচিশ টাকা। অথচ এ ভাড়া মিরপুর এক নম্বর থেকে বাড্ডা লিংক রোড পর্যন্ত দূরত্বের ভাড়া। কিন্তু আপনি যেখানেই নামুন, আপনাকে ভাড়া দিতে হবে পুরো দূরত্বেরই। যে দূরত্ব আপনি অতিক্রম করবেন তাতে হয়তো আপনার ভাড়া গোনার কথা পাঁচ বা দশ টাকা। অথচ আপনার পকেট থেকে বেরিয়ে যাবে পঁচিশ টাকা। এটি তাদের প্রথম অন্যায়।

    পরিবহন ব্যবসায়ীরা এ অসম নিয়মটি জায়েজ করে নিয়েছেন সিটিং সার্ভিসের নামে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সিটিং সার্ভিসের নাম করে এভাবে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হলেও আপনি সিটিং সার্ভিসের সেবা আশা করলে বুঝতে হবে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। পরিবহন ব্যবসায়ীরা সিটিং সার্ভিসের নাম করে বেশি ভাড়া আদায় করলেও তারা যত্রতত্র যাত্রী ওঠাবে এবং নামাবে। এটা তাদের দ্বিতীয় অন্যায়।

    আবার ধরুন, আপনি মিরপুর এক নম্বর থেকে বাড্ডা লিংক রোডের ভাড়া দিয়ে তার অনেক আগেই নেমে পড়েছেন। এর অর্থ লিংক রোড পর্যন্ত ভাড়া দেয়া আছে আপনার সিটটির। অথচ নতুন যাত্রী তুলে সেই একই সিট আবার বিক্রি করা হবে। এভাবে একই সিট সর্বোচ্চ ভাড়ায় যাত্রীদের কাছে বারবার বিক্রি হয়। এটা তাদের তৃতীয় অন্যায়।

    রাস্তায় স্টপেজ ছাড়াই তারা খেয়ালখুশিমতো যাত্রী ওঠায় ও নামায়। এটা তাদের চতুর্থ অন্যায়। 

    ট্রাফিক আইন না মেনে রাস্তায় অন্য গাড়ির সঙ্গে ড্রাইভারদের প্রতিযোগিতায় নামতে দেখা যায় হামেশাই। আইনের তোয়াক্কা না করে মেতে ওঠে বিপজ্জনক ওভারটেক প্রতিযোগিতায়। আর এ ওভারটেক করতে গিয়েই অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। অকালে ঝরে পড়ে মানুষের প্রাণ। এটা তাদের পঞ্চম অন্যায়।

    অধিকাংশ গাড়িরই কোনো ফিটনেস থাকে না, এটা তাদের ষষ্ঠ অন্যায়। 

    অধিকাংশ ড্রাইভারের লাইসেন্স পাওয়া যায় না, এটা তাদের সপ্তম অন্যায়। 

    অনেক সময় অদক্ষ কন্ডাকটর বসে পড়ে ড্রাইভিং সিটে, এটা তাদের অষ্টম অন্যায়।

     অনেক সময় রুট পারমিট থাকে না, এটা তাদের নবম অন্যায়।

    অনেক সময় যাত্রী তুলেও যাত্রীর নির্দিষ্ট গন্তব্যের আগেই যানজটের অজুহাত দেখিয়ে তাদের সুবিধামতো মাঝপথে যাত্রী নামিয়ে দেয়া হয়। ধরুন আপনি কুড়িল থেকে মিরপুর দশ নম্বরে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠেছেন। যথারীতি আপনাকে বাড়তি ভাড়াই গুনতে হবে। তাও না হয় দিলেন। কিন্তু বাস মিরপুর এগারো পর্যন্ত এসে যানজটের দোহাই দিয়ে আপনাকে এগারোতেই নামিয়ে দিয়ে তাদের সুবিধামতো দিকে চলে যাবে।

    সঙ্গে নির্বিকার কণ্ঠে উপদেশ দিয়ে বলবে, ‘সামনে জ্যাম, দশ পর্যন্ত হাঁইটা যান।’ অথচ দশ নম্বর যাবে বলেই আপনাকে কুড়িল থেকে তুলে নিয়েছে। এভাবে নির্দিষ্ট গন্তব্যের আগে নামিয়ে দিলে ভাড়া ফেরত দেয়া উচিত। কিন্তু ভাড়াও ফেরত পাবেন না আপনি। অর্থাৎ তাদের খেয়ালখুশিমতো আপনাকে তারা যেখানে-সেখানে নামিয়ে দিতে পারে। এটা তাদের দশম অন্যায়।

    এমন অসংখ্য অন্যায় করেও তারা রোজ পার পেয়ে যাচ্ছে। তাদের হাতে জিম্মি নিরীহ যাত্রীরা। রোজ এভাবেই অসংখ্য অন্যায়কে মেনে নিয়েই রাস্তায় নামছেন যাত্রীরা। অথচ গণপরিবহন ব্যবস্থা তদারকি করার জন্য আছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের তাহলে কাজ কী? এত অনিয়ম কীভাবে চলতে পারে দিনের পর দিন? প্রশ্ন আছে, জবাব দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানও আছে; কিন্তু জবাব পাবেন না।

    তবে কি গণপরিবহন ব্যবস্থায় এ নৈরাজ্যই আমাদের নিয়তি? যদি তাই হয় তবে গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণে বা শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তাদের কাজ কী? ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ভাবতে হবে। কারণ বারবার দুর্ঘটনা ঘটবে আর ছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসবে এটা কোনো সমাধান নয়। প্রায় সবকিছুরই শেষ থাকে। পরিবহন সেক্টরের এ নৈরাজ্যেরও একটি সমাধান প্রয়োজন। দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে।

    আমাদের গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে আর কত সময়ের প্রয়োজন? আর কত জীবনের প্রয়োজন? এভাবে সড়কে মৃত্যুর মিছিল চলতে থাকলে সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ম্লান হয়ে উঠবে নিরীহ যাত্রীদের চোখে।

    ইমন চৌধুরী : লেখক ও সাংবাদিক

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !