সোহেল রানার প্রথম জানাজা সম্পন্ন!
রাজধানীর বহুতল ভবন এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আটকে পড়াদের বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোহেল রানার প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফুলবাড়িয়ার সদর দফতরে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সোহেল রানার সহকর্মীরা তার লাশ ঘিরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।তারা অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় জানান ‘বীরকে’।জানাজায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন, সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খান, পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইব্রাহীম খান, এনটিএমসির ডিজি জিয়াউল আহসান উপস্থিত ছিলেন।
জানাজার আগে বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ফায়ারম্যান সোহেল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। ফায়ার সার্ভিসসহ আমরা সবাই তার পরিবারের প্রতি লক্ষ্য রাখব। তার পরিবারে যদি উপযুক্ত কেউ থাকে তাকে একটি চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।মন্ত্রী আরও বলেন, সোহেল রানা মানুষকে ভালোবাসতেন, দেশকে ভালোবাসতের, এর প্রমাণ তিনি রেখে গেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এফআর টাওয়ারে উদ্ধার করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।তার মৃত্যুতে গোটা জাতি শোকাহত।তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।এর আগে সকালে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমইএচ) হিমঘর থেকে তার লাশ ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরে আনা হয়। জানাজার পর সহকর্মীদের শ্রদ্ধা শেষে সোহেলের লাশবাহী গাড়ি গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনার উদ্দেশে রওনা হয়।
প্রসঙ্গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারের ভয়াবহ আগুনে ঘটনাস্থলে ২৫ জন ও হাসপাতালে এক জন নিহত হন। আগুনের ঘটনায় উদ্ধার অভিযানে গিয়ে আহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোহেল রানা সিঙ্গাপুরে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৭ মিনিট) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান, বাংলাদেশ সময় রোববার দিবাগত রাত ২টা ১৭ মিনিটে সোহেল মারা যান। সোমবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে করে তার মৃতদেহ দেশে আসে।২০১৫ সালে মুন্সীগঞ্জের কমলাঘাট নদী ফায়ার স্টেশনে দায়িত্বপালনের মাধ্যমে কর্মজীবনের শুরু সোহেল রানার।এর কয়েক মাস পরেই বদলি হন কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে। গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর উদ্ধার অভিযানে যোগ দেন রানা। ২৩ তলা ওই ভবনে আটকা পড়া মানুষদের ল্যাডারের মাধ্যমে নামাচ্ছিলেন তিনি। সোহেল চার-পাঁচজন আটকে পড়া মানুষ নিয়ে নামার সময় দেখেন তার উদ্ধারকারী ল্যাডারটি ওভারলোড দেখাচ্ছে।
ওভারলোড হলে সাধারণত সিঁড়ি নিচে নামে না, স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক হয়ে যায়। এ অবস্থায় ল্যাডারের ওজন কমাতে একপর্যায়ে সোহেল ল্যাডার থেকে বেয়ে নিচে নামতে থাকেন। এরপর ল্যাডারটির ওজন কমে যাওয়ায় সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়। এরপরই দুর্ঘটনাটি ঘটে, যা তার জীবনের আলো নিভিয়ে দিল।ল্যাডারের ভেতরে সোহেলের একটি পা ঢুকে যায়। এ ছাড়া তার শরীরের সেফটি বেল্টটি ল্যাডারে আটকে পেটে প্রচণ্ড চাপ লাগে। এরপর থেকেই সংজ্ঞাহীন সোহেল। দুর্ঘটনার পরপরই সোহেল রানাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রতিদিন চার ব্যাগ রক্ত দিলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নতি হচ্ছিল না।পেটের ক্ষতের কারণে সমস্যা হচ্ছিল রানার। সে কারণে সিএমএইচের চিকিৎসকদের পরামর্শে গত শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রানাকে পাঠানো হয় সিঙ্গাপুর। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.