মানহানি হলে কীভাবে আইন সহায়তা পাবেন?
মানহানি' শব্দটি শিক্ষিত সমাজে বহুল আলোচিত এবং স্পর্শকাতর একটি বিষয়। মানুষের সুনাম অতি মূল্যবান সম্পদ।এই সুনাম মানহানিকর অপবাদের দ্বারা ক্ষুণ্ণ হয়। স্থান-কাল-পাত্রভেদে মানহানির গুরুত্ব কমবেশি হয়ে থাকে।
যার মান অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক বা আর্থিক অবস্থান যত ওপরে তার মানহানির ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ তত বেশি অর্থ দ্বারা নির্ধারিত হয়। অবস্থান ভেদে ও মানহানির গুরুত্ব অনুযায়ী তার ক্ষতিপূরণ শতকোটি বা হাজার কোটি টাকাও কেউ দাবি করতে পারেন। যাহা ন্যায়নীতি, ন্যায়পরায়ণতা এবং বিবেকের দ্বারা নির্ধারিত হয়। দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় আদালতেই মানহানির মামলায় প্রতিকার পাওয়া যায়। তবে দেওয়ানি আদালতে প্রতিকারের জন্য আমাদের দেশে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন বিধিবদ্ধ হয় নাই।
মামলাটি আমলযোগ্য নয়, সমনযোগ্য, জামিনযোগ্য, আপসযোগ্য এবং যে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য। এ ক্ষেত্রে দেখা যাক আইন কী বলে?
মানহানি
যে ব্যক্তি, এইরূপ অভিপ্রায়ে বা এইরূপ জানিয়া বা এইরূপ বিশ্বাস করিবার কারণ থাকা সত্ত্বেও কথিত বা পাঠের জন্য অভিপ্রেত শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান কল্পমূর্তির সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কিত কোনো নিন্দাবাদ প্রণয়ন বা প্রকাশ করে যে অনুরূপ নিন্দাবাদ অনুরূপ ব্যক্তির সুনাম নষ্ট করিবে, সেই ব্যক্তি অতঃপর ব্যতিক্রান্ত ক্ষেত্রসমূহ ছাড়া উক্ত ব্যক্তির মানহানি করে বলিয়া গণ্য হইবে।
ব্যাখ্যা-১:
কোনো কিছুর জন্য কোনো মৃত ব্যক্তির নিন্দা করা তাহার মানহানির শামিল হতে পারে, যদি ওই নিন্দাবাদ এইরূপ হয় যে, উহা তাহার জীবদ্দশায় তাহার মানহানিকর এবং উহা তাহার পরিবার ও অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য অভিপ্রেত হয়।
ব্যাখ্যা-২
কোনো কোম্পানি বা সংঘ বা অনুরূপ ব্যক্তি সমাবেশ সম্বন্ধে কোনো নিন্দাবাদ করা মানহানির শামিল হতে পারে।
ব্যাখ্যা-৩
বিকল্প রূপে বা বিদ্রূপাত্মক রূপে প্রকাশিত নিন্দা বাদ মানহানির শামিল হতে পারে।
ব্যাখ্যা-৪
কোনো নিন্দাবাদই ব্যক্তির সুনাম নষ্ট করে বলিয়া গণ্য হইবে না, যদি না উক্ত নিন্দাবাদ অন্যান্য লোকের ধারণার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উক্ত ব্যক্তির নৈতিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক-সংক্রান্ত গুণাবলি।
অবনমিত করে, অথবা উক্ত ব্যক্তির বর্ণ বা পেশা সম্পর্কিত গুণাবলি অবনমিত করে বা উক্ত ব্যক্তির খ্যাতি নষ্ট করে অথবা এইরূপ বিশ্বাস করিবার কারণ জন্মায় যে উক্ত ব্যক্তির দেহ ঘৃণাজনক বা এইরূপ কোন অবস্থায় রহিয়াছে যাহা সাধারণত অসম্মানজনক বলিয়া বিবেচনা করা হয়।
ব্যতিক্রমগুলো নিম্নরূপ:-
প্রথম ব্যতিক্রম: জনমঙ্গলের প্রয়োজনে সত্য দোষারোপকরণ- কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে সত্য- দোষারোপ করা মানহানি বলিয়া গণ্য হইবে না, যদি উক্ত দোষারোপ জনমঙ্গলের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত বা প্রকাশ করা হয়। ইহা জনগণের মঙ্গলের জন্য কি না তাহা একটি বিবেচ্য বিষয়।
দ্বিতীয় ব্যতিক্রম: জনগণের প্রতি সরকারি কর্মচারীর আচরণ:-
সরকারি কার্যসম্পাদনের ব্যাপারে কোনো সরকারি কর্মচারীর আচরণ সম্পর্কে বা উক্ত আচরণে তাহার চরিত্রের যতদূর প্রকাশ পায়, যতদূর সম্পর্কে তাহার অধিক নহে সদ বিশ্বাসে যে কোনো অভিমত প্রকাশ করা মানহানি বলিয়া গণ্য হইবে না।
তৃতীয় ব্যতিক্রম:- যে কোনো গণসমস্যা সম্পর্কে কোনো ব্যক্তির আচরণ- যে কোনো গণসমস্যা সম্পর্কে কোনো ব্যক্তির আচরণ সম্বন্ধে এবং অনুরূপ আচরণে তাহার চরিত্রের যতটুকু প্রকাশ পায়, ততটুকু সম্বন্ধে- তাহার অধিক নহে সদ বিশ্বাসে যে কোনো অভিমত প্রকাশ করা মানহানি বলিয়া গণ্য হইবে না।
চতুর্থ ব্যতিক্রম: আদালতসমূহের কার্যবিবরণীর রিপোর্ট প্রকাশ করা- কোনো বিচারালয়ের প্রায় সম্পূর্ণ সত্য কার্যবিবরণীর রিপোর্ট প্রকাশ করা বা অনুরূপ কোনো কার্যবিবরণীর ফলাফল প্রকাশ করা মানহানি বলিয়া গণ্য হইবে না।
পঞ্চম ব্যতিক্রম: আদালতের সিদ্ধান্তকৃত মোকদ্দমার দোষ, গুণ বা সাক্ষীসমূহ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আচরণ- কোনো বিচারালয় সিদ্ধান্তকৃত কোন ফৌজদারি বা দেওয়ানি
মামলায় দোষ-গুণ
সম্পর্কে বা অনুরূপ মামলায় পক্ষ গ্রহণকারী হিসেবে যে কোনো ব্যক্তির সাক্ষীর বা প্রভুর আচরণ সম্পর্কে অথবা উক্ত আচরণে ব্যক্তি চরিত্রের যতটুকু প্রকাশ পায় ততটুকু তাহার অধিক নহে সম্পর্কে সদ বিশ্বাসে যে কোনো অভিমত প্রকাশ করা মানহানি বলিয়া গণ্য হইবে না। অনুরূপ আইনানুগ কর্তৃত্ব যেসব বিষয় সম্পর্কিত, সেই সব বিষয়ে উক্ত অপর ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে সদ বিশ্বাসে কোনো ভর্ৎসনা করিলে তাহা মানহানি বলিয়া গণ্য হইবে না।
ষষ্ঠ ব্যতিক্রম: যে কার্য উহার সম্পাদক কর্তৃক বিচারের জন্য পেশ করা হইয়াছে সেই কার্য সম্পর্কে বা অনুরূপ কার্যে সম্পাদকের চরিত্রের যতটুকু প্রকাশ পায়, ততটুকু সম্পর্কে সদ্ বিশ্বাসে যে কোন অভিমত প্রকাশ করা মানহানি বলিয়া গণ্য হইবে না।
সপ্তম ব্যতিক্রম: আইনানুগ কর্তৃত্ব বলে সদ বিশ্বাসে নিন্দা/ভর্ৎসনা করা মানহানি বলিয়া গণ্য হইবে না- আইনানুগ কর্তৃত্ব বা আইনসিদ্ধ চুক্তি অনুযায়ী সদ বিশ্বাসে পদস্থ কর্মকর্তা কর্তৃক অধস্তন কোনো ব্যক্তির আচরণ সম্বন্ধে নিন্দা/ ভর্ৎসনা করা মানহানি বলিয়া গণ্য হইবে না।
অষ্টম ব্যতিক্রম: কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তির নিকট সদ বিশ্বাসে অভিযুক্ত করণ- কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়বস্তু সম্পর্কে উক্ত ব্যক্তির যেসব ব্যক্তির আইনানুগ কর্তৃত্ব রহিয়াছে, তাহাদের কাহার ও নিকট সদ বিশ্বাসে কোনো অভিযোগ করা মানহানি বলিয়া গণ্য হইবে না।
নবম ব্যতিক্রম: কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তাহার সদ বিশ্বাসে স্বার্থ রক্ষার্থে বা অন্য কাহার ও কোনো দোষারোপকরণ- অপর কোনো ব্যক্তির চরিত্রের ওপর দোষারোপ করা মানহানি বলিয়া গণ্য হইবে না, যদি দোষারোপকারী নিজের বা অপর কোনো ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষার্থে বা জনকল্যানের খাতিরে উক্ত দোষারোপ করিয়া থাকেন।
দশম ব্যতিক্রম: সতর্ককৃত ব্যক্তির কল্যাণার্থে বা গণকল্যাণার্থে সতর্কতা- কোনো ব্যক্তিকে সদ বিশ্বাসে অন্য কোনো ব্যক্তির সম্মুখে সতর্ক করিয়া দেওয়া মানহানি বলিয়া গণ্য হইবে না, যদি অনুরূপ সতর্কতা সতর্ককৃত ব্যক্তি বা যে ব্যক্তিতে উক্ত ব্যক্তির স্বার্থ নিহিত রহিয়াছে তাহার বা গণকল্যাণার্থে অভিপ্রেত হয়।
শাস্তি
দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় বলা হয়েছে যে ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির মানহানি করে, সেই ব্যক্তি বিনাশ্রম কারাদণ্ড যাহার মেয়াদ ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত হইতে পারে বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।
জজকোর্ট, ঢাকা।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.