সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    ভাই দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, আমরা গর্বিত: সোহেল রানার সহোদর

    ভাই দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, আমরা গর্বিত: সোহেল রানার সহোদর


    ‘ভাই দেশের জন্য, দেশের মানুষকে বাঁচাতে জীবন দিয়েছেন, এ জন্য আমরা গর্বিত’। জানাজার আগে ফায়ারম্যান সোহেল রানার লাশ সামনে রেখে কথাগুলো বলছিলেন তার ছোট ভাই উজ্জ্বল মিয়া।মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফুলবাড়িয়ার সদর দফতরে সোহেল রানার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ফায়ার সার্ভিসকর্মীর লাশটি আনা হলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সোহেলকে শেষ দেখা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার সহকর্মীরা।জানাজার আগে সোহেল রানার ছোট ভাই উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ‘আমার ভাই দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই মানুষের জন্য কাজ করতেন- পরোপকারী ছিল। ভাই দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, এ জন্য আমরা গর্বিত। আমরা চাই- সবাই যেন তার মতো দেশের জন্য কাজ করতে পারি। আমার ভাইয়ের যদি কোনো ভুলত্রুটি থাকে, তা হলে আপনারা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। দোয়া করবেন সে যেন জান্নাতবাসী হয়।’

    কান্নাজড়িত কণ্ঠে উজ্জ্বল আরও বলেন, ‘আমার ভাই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুতে আমরা পথে বসে গেছি। সরকার আমাদের পরিবারের প্রতি একটু সুদৃষ্টি দিলে বড়ই উপকার হবে।’জানাজা শেষে সোহেলের মরদেহ গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাড়ি পর্যন্ত তার বিদায় যাত্রায় পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনরা সঙ্গী হয়েছেন। জানাজায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন, সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খান, পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইব্রাহীম খান, এনটিএমসির ডিজি জিয়াউল আহসান উপস্থিত ছিলেন।

    জানাজার আগে বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ফায়ারম্যান সোহেল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। ফায়ার সার্ভিসসহ আমরা সবাই তার পরিবারের প্রতি লক্ষ রাখব। তার পরিবারে যদি উপযুক্ত কেউ থাকে তাকে একটি চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।মন্ত্রী আরও বলেন, সোহেল রানা মানুষকে ভালোবাসতেন, দেশকে ভালোবাসতে- এর প্রমাণ তিনি রেখে গেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এফআর টাওয়ারে উদ্ধার করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তার মৃত্যুতে গোটা জাতি শোকাহত। তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।এর আগে সকালে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমইএচ) হিমঘর থেকে তার লাশ ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরে আনা হয়। জানাজার পর সহকর্মীদের শ্রদ্ধা শেষে সোহেলের লাশবাহী গাড়ি গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনার উদ্দেশে রওনা হয়।

    প্রসঙ্গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারের ভয়াবহ আগুনে ঘটনাস্থলে ২৫ জন ও হাসপাতালে একজন নিহত হন। আগুনের ঘটনায় উদ্ধার অভিযানে গিয়ে আহত ফায়ার সার্ভিসকর্মী সোহেল রানা সিঙ্গাপুরে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান। সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান, বাংলাদেশ সময় রোববার দিবাগত রাত ২টা ১৭ মিনিটে সোহেল মারা যান। সোমবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে করে তার মৃতদেহ দেশে আনা হয়।২০১৫ সালে মুন্সীগঞ্জের কমলাঘাট নদী ফায়ার স্টেশনে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন সোহেল রানা।এর কয়েক মাস পরেই বদলি হন কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে। গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর উদ্ধার অভিযানে যোগ দেন রানা। ২৩তলা ওই ভবনে আটকাপড়া মানুষকে ল্যাডারের মাধ্যমে নামাচ্ছিলেন তিনি। সোহেল চার-পাঁচজন আটকেপড়া মানুষ নিয়ে নামার সময় দেখেন তার উদ্ধারকারী ল্যাডারটি ওভারলোড দেখাচ্ছে।ওভারলোড হলে সাধারণত সিঁড়ি নিচে নামে না, স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক হয়ে যায়। এ অবস্থায় ল্যাডারের ওজন কমাতে একপর্যায়ে সোহেল ল্যাডার থেকে বেয়ে নিচে নামতে থাকেন। এতে ল্যাডারটির ওজন কমে যাওয়ায় সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়। এরপরই দুর্ঘটনাটি ঘটে, যা তার জীবনের আলো নিভিয়ে দিল।

    ল্যাডারের ভেতরে সোহেলের একটি পা ঢুকে যায়। এ ছাড়া তার শরীরের সেফটি বেল্টটি ল্যাডারে আটকে পেটে প্রচণ্ড চাপ লাগে। এরপর থেকেই সংজ্ঞাহীন সোহেল। দুর্ঘটনার পরপরই সোহেল রানাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রতিদিন চার ব্যাগ রক্ত দিলেও প্রত্যাশানুযায়ী উন্নতি হচ্ছিল না।পেটের ক্ষতের কারণে সমস্যা হচ্ছিল রানার। সে কারণে সিএমএইচের চিকিৎসকদের পরামর্শে গত ৫ এপ্রিল রানাকে পাঠানো হয় সিঙ্গাপুরে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !