কাফন-দাফনে বর্জনীয় কাজ
মৃত্যুরোগে আক্রান্ত অবস্থায় বর্জনীয় কাজ
১. রুগীর চিকিৎসার ব্যাপারে হালাল-হারামের খেয়াল করা হয় না। অনেক সময় হারাম জিনিষ দ্বারা চিকিৎসা করা হয়। হিন্দুদের থেকে ঝাড়-ফুঁক, তাবীজ নেওয়া হয়। অথচ তারা কুফরী কালাম দিয়ে এগুলো করে থাকে, যা গ্রহণ করা নাজায়িয ও হারাম। (আবূ দাউদ: হাঃ নং ৩৮৭০, ৩৮৭৪, আহকামে মাইয়্যেত: ২২৩)
২. রুগীর উযূ, নামায, সতর ইত্যাদির ব্যাপারে খেয়াল করা হয় না। অথচ এ অবস্থায়ও তার উপর এগুলো জরুরী। তাই মৃত্যুরুগীর নিকট আত্মীয়দের এগুলোর ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিত।
৩. অনেকে রুগী দেখতে গিয়ে সুন্নাত মুতাবেক দু‘আ তো পড়েই না । উপরন্তু রুগীর সামনে এমন কথা বলে যার দ্বারা রুগী তার হায়াত থেকে নিরাশ হয়ে যায়। এটা মারাত্মক ভুল। (মুসলিম শরীফ: হাঃ নং ৯১৯ নাসায়ী: হা: নং ১৮২৫, আবূ দাউদ: হাঃ নং ৩১১৫)
৪. মুমূর্ষাবস্থায় মৃত্যুরুগী এক তৃতীয়াংশের অতিরিক্ত সম্পদে কারো জন্য ওসিয়্যত করবে না। কারণ: মৃত্যুরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এর অতিরিক্ত সম্পদ থেকে তার মালিকানা দুর্বল হয়ে যায়। (আহকামে মাইয়্যেত: ২২৬)
৫. কোন ওয়ারিশের জন্য সম্পদের ওসিয়্যত করবে না। কারণ ওসিয়্যতের পর অবশিষ্ট ২/৩ অংশের মধ্যে মৃত্যুরুগীর পূর্ণ মালিকানা থাকে না। তাছাড়া ওয়ারিশদের জন্য ওসিয়্যত করা নাজায়িয। (মুসনাদে আহমাদ: হাঃনং ১৭৮, ইবনে মাজাহ: ২৭১৩)
৬. মুমূর্ষাবস্থায় সন্তানদেরকে সামনে এনে বিভিন্ন সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। যেমনঃ টাকা কোন ব্যাংকে রেখেছে? অমুক জমির পজিশন কি? ইত্যাদি। এগুলো একেবারেই অনুচিত। কারণ এর দ্বারা মুত্যুরোগীর অন্তর দুনিয়ামুখী হয়ে যায়। আর জীবনের শেষ মুহূর্তে তার অন্তর দুনিয়ামুখী হওয়া মারাত্মক ভুল। (আহকামে মাইয়্যেত:২২৮)
৭. মুমূর্ষাবস্থায় নিজের কোন অঙ্গ যেমন: চক্ষু, কিডনী ইত্যাদি দানের ওসিয়্যত করা যাবে না। কারণ কারো কোন অঙ্গ তার মালিকানাধীন নয়, বরং সবকিছুতেই মালিকানা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের। মানুষকে সাময়িকভাবে হেফাজত করা ও দুনিয়া আখিরাতের কল্যাণে ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয়েছে মাত্র। (রদ্দুল মুহতার: ২/৯৩)
৮. কালিমার তালক্কীন করার ক্ষেত্রে মৃত্যুরুগীকে কালিমা পড়তে আদেশ দেয়া হয়, যা একেবারেই অনুচিত। কারণ মুমূর্ষরুগী মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর হয়ে কালিমা পড়তে অস্বীকার করে বসতে পারে। পরিণতি এই হয় যে, একটা মুস্তাহাব আমল করাতে গিয়ে একজন ঈমানদার ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। এজন্য সন্তানদের দায়িত্ব হল তার পাশে বসে কালিমা পড়তে থাকা। সে একবার পড়ে নিলে দ্বিতীয়বার পড়ার জন্য আর তাকে তালক্বীন করবে না। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত কালিমার তালক্বীন করতেই থাকতে হবে এমন মনে করা ভুল। (দুররে মুখতার: ২/১৯১)
৯. অনেকে মূর্খতাবশত: রুগীর নিকট সূরা ইয়াসীন পড়তে দেয় না। তারা মনে করে এটা পড়লে রুগীর আর বাঁচার আশা থাকে না। এমনটি মনে করা ভুল। (আবূ দাউদ: হা: নং ৩১২১, সহীহ ইবনে হিব্বান: হা: নং ২৯৯১, দূররে মুখতার: ২/১৯১)
মৃত্যুর পর বর্জনীয় কাজ
১. কারো ইন্তেকালের পর তার লাশ মাটির উপর রাখবে না। বরং খাটিয়ার উপর রাখবে। (দুররে মুখতার: ৩/৮৪)
২. সবরের পরিপন্থী কোন আচরণ কারো থেকে প্রকাশ না পায় সে দিকে খোয়াল রাখবে। যেমন: বড় আওয়াজে ক্রন্দন করা। পরিধেয় বস্ত্র ছিঁড়ে ফেলা। মাথা-বুক চাপড়ানো, জাহিলী যুগের শব্দ মুখে উচ্চারণ করা ইত্যাদি। (বুখারী শরীফ: হা: নং ৬২৯৪, তিরমিযী হা: নং ৯৮৪)
৩. মৃতব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পূর্বে তার পাশে বসে কুরআনের তিলাওয়াত করবে না। বরং সাওয়াব রেসানীর জন্য কুরআন খানী করতে চাইলে তা অন্য স্থানে করবে। তবে তা বিনা পারিশ্রমিকে হওয়া জরুরী। (দুররে মুখতার: ৩/৮৩, ফাতাওয়ায়ে রাহীমিয়া: ৮/১৯৭)
৪. ইন্তেকালের পরও পর্দার বিধান বহাল ধাকে। তাই জীবদ্দশায় যাদের সাথে দেখা সাক্ষাত নাজায়িয ছিল তারা মৃতব্যক্তিকে দেখতে পারবে না। সুতরাং বেগানা পুরুষের লাশ বেগানা মহিলাদের জন্য দেখা যেমন নিষেধ, তেমনিভাবে বেগানা মহিলার লাশ বেগানা পুরুষের জন্য দেখাও নিষেধ। তবে স্বামী-স্ত্রী মৃত্যুর পর একে অপরের চেহারা দেখতে পারবে। তবে স্বামী স্পর্শ করতে পারবে না। (সূরায়ে নিসা: ২২, রদ্দুল মুহতার: ২/১৯৫, আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/২১৯, মাহমূদিয়া: ২/৩৯৮)
৫. এমনিভাবে আত্মীয়-স্বজনের মধ্য থেকে যাদের পরস্পর দেখা সাক্ষাত নাজায়িয, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তারা এক অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। এজাতীয় হারাম কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে। অনেকে মৃত ব্যক্তির ছবি উঠিয়ে তা সংরক্ষণ করে থাকে এবং পত্রিকায় দেয়, যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ বিধায় তা থেকে বিরত থাকবে। (আহসানুল ফাতওয়া:৪/২১৯)
৬. মৃত ব্যক্তির পশম, মোচ, নখ কর্তন করবে না। এমনিভাবে তার চুল দাড়ি আঁচড়ানো থেকেও বিরত থাকবে। সমাজের অনেক মূর্খ লোক মৃত ব্যক্তির নাভীর নীচের পশম কাটাকে সুন্নাত মনে করে, তাদের এধারণা ঠিক নয়। (দুররে মুখতার: ২/১৯)
৭. মৃত্যুর পরে বিভিন্ন অজুহাতে আমাদের দেশে দাফনে যে দেরী করা হয় তা শরীয়ত সম্মত নয়।কারণ শরী‘আতে মুর্দাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাফন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং বেশী দেরী করার কোন অবকাশ নেই। কাজেই মায়্যিতের ছেলে-মেয়েদের উপস্থিতির জন্য দাফনে দেরী করা ঠিক নয়। বরং তারা অনুপস্থিত থাকলেও উপস্থিত আত্মীয়-স্বজন তাৎক্ষণিকভাবে দাফন কার্য শেষ করে ফেলবে। পরে তারা এসে কবর যিয়ারত করবে এবং দু‘আ করবে। তারা দূরে থাকে এবং এসে মৃত মা-বাপের চেহারা দেখবে এই অজুহাতে তাদের জন্য দাফনে বিলম্ব করা যাবে না।
৮. অনেকে মায়্যিতের চেহারা দেখানোর জন্য অনেক সময় নষ্ট করে; অথচ এর জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ করা ঠিক নয়। বরং স্বাভাবিক কাজ কর্মের মধ্যে এটা সেরে নেয়া কর্তব্য বা একান্ত জরুরত পড়লে কাফন পরানোর পর জানাযার পূর্বে অল্প সময়ের মধ্যে দেখিয়ে দেয়া যায়। (আহসানুল ফাতাওয়া:৪/২১৯)
৯. অনেকে জানাযার জামা‘আতে লোক সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য নানা অজুহাত পেশ করে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, এখন সকাল আট ঘটিকায় জানাযা পড়লে জানাযায় লোক সংখ্যা বেশী হবে না। সুতরাং বাদ যুহর বা বাদ জুম‘আ জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হবে। তাদের একথাও শরীয়ত সম্মত নয়। এটা গুনাহের কাজ। গুনাহের কাজ করে বেশী লোক হাজির করার দ্বারা মায়্যিতের তো কোন ফায়দা হবেই না, বরং কবরে মু’মিনের জন্য প্রস্তুত কৃত জান্নাতের বিছানা, জান্নাতের লেবাস, জান্নাতের হাওয়া থেকে তাকে বঞ্চিত রাখা হয়।
১০. অনেক লোককে দেখা যায় তারা মৃত্যুর পর লাশ দেশের বাড়িতে বাপ-মায়ের সাথে দাফন করার ওসিয়্যত করে যায়। অথচ এরূপ ওসিয়্যত করা শরীয়ত সম্মত নয়, এবং অন্যদের জন্য সে ওসিয়্যত পূর্ণ করাও ঠিক নয়। অনেকে এ ধরনের ওসিয়্যত ছাড়াও নিজের আত্মীয়স্বজনদের লাশ দেশের বাড়িতে নিয়ে যায়। এক দেশ থেকে আরেক দেশে নিয়ে যায়, বিদেশ থেকে দেশে নিয়ে আসে। অথচ এগুলো দাফনে বিলম্ব হওয়ার কারণ হওয়ায় এসব কাজ নিষেধ। শরী‘আতের ফয়সালা হল যে ব্যক্তি যে স্থানে বা শহরে মারা গেল তাকে তৎপার্শ্ববর্তী মুসলমানদের কোন কবরস্থানে দাফন করে দিতে হবে। (দূররে মুখতার: ৬/৬৬৬ আল বাহরুল রায়েক: ২/৩৩৫, আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/২০৯)
১১. অনেক জানাযার ক্ষেত্রে আরেকটি বদ রসম লক্ষ্য করা যায় যে, জানাযা নামাযের পূর্বে সমবেত মুসল্লীদের জিজ্ঞাসা করা হয় “লোকটি কেমন ছিলেন?” সকলে উত্তর দেয় “ভাল ছিলেন।” হাদীসের ফযীলত জবরদস্তী সাক্ষ্য উসূল করার দ্বারা হাসিল হবে না বরং অনেকে বাধ্য হয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় এবং এমন কথা মুখে বলে যা তার অন্তর স্বীকার করে না। এরূপ করা উচিত নয়।
১২.জানাযা নামায একাধিক বার পড়া হয়। এরূপ করা শরীয়ত সম্মত নয় । বরং তা একবার হওয়াই বাঞ্ছনীয়। হ্যাঁ! যদি মৃত ব্যক্তির কোন ওলী জানাযায় শরীক না হয়ে থাকে এবং তার পক্ষ থেকে পূর্বে আদায়কৃত নামাযের অনুমতিও না হয়ে থাকে তাহলে সেই ওলী পূর্বের নামাযে যারা অনুপস্থিত ছিল তাদের কে নিয়ে ২য় বার জানাযা নামায পড়তে পারে। (রদ্দুল মুহতার: ২/২২২, আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/২১৩)
১৩. তেমনিভাবে গায়েবানা জানাযার যে প্রথা চালু রয়েছে হা জায়িয নেই। (ফাতহূল কাদীর: ২/১৮, জাহিরুল ফাতাওয়া:২/১৮, মাহমূদিয়া: ৭/২২৭)
১৪. আরেকটি বদ রসম হল; অনেকে জানাযার নামাযের পরে মুর্দার চেহারা দেখায়। এতে দাফন বিলম্বিত হয়, যা শরী‘আতে নিষিদ্ধ। (বুখারী শরীফ: হা: নং ২৬৯৭, আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/২১৯ মাহমূদিয়া: ২/৩০৮)
১৫. আরেকটি বদ রসম এই যে, মুর্দাকে কাঁধে করে কবর স্থানে নেয়ার সময় লোকেরা উচ্চ স্বরে কালিমায়ে তাইয়্যিবা ও কালিমায়ে শাহাদাত পড়তে থাকে। এটা ঠিক নয়। বরং অন্তরে অন্তরে মায়্যিতের জন্য ইস্তিগফার করতে থাকবে। (দুররে মুখতার: ২/২৩৩, আল বাহরুল রায়েক: ২/৩৩৬, ইমদাদুল মুফতীন: ১৬৪, আহকামে মাইয়্যেত:২৪০)
১৬. অনেক স্থানে মায়্যিতের খাটের উপর কালিমা বা আয়াতুল কুরসী ইত্যাদি আয়াত খচিত চাদর দিয়ে মায়্যিতকে ঢেকে দেয়া হয়। আবার অনেকে কাফনের কাপড়ে আয়াতুল কুরসী বা অন্য কোন আয়াত লিখে দেয় অনুরূপ কেউ কেউ মাইয়্যিতের কপালে আঙ্গুল দিয়ে কালেমা লেখে এসবই নাজায়িয। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ২৬৯৭, আহসানুল ফাতাওয়া: ১/৩৫১, মাহমূদিয়া: ২/৪০১)
১৭. অনেকে লাশের আগে বা পাশা-পাশি চলতে থাকে, এটাও ঠিক নয়। বরং লাশ বহনকারী ব্যতীত সকলেই লাশের পিছে পিছে চলবে এবং লাশ জমিনে রাখার পূর্বে কেউ বসবে না। (আবূ দাউদ: হা: নং ৩১৮০, দুররে মুখতার: ২/২৩৬, আল বাহরুল রায়েক: ২/৩৩৩)
১৮. জানাযা নামাযের পরপর দাফনের পূর্বে অনেক স্থানে সম্মিলিতভাবে দু‘আ ও মুনাজাত করা হয়। এটা নাজায়িয। শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই। কারণ জানাযা নামাযই মায়্যিতের জন্য দাফন পূর্ব সম্মিলিত দু‘আ। (বুখারী শরীফ: ২/৬৫২, আল বাহরুর রায়িক; ২/৩২১, আহসানুল ফাতাওয়া: ১/৩৫২)
১৯. জানাযার ব্যাপারে আরেকটি বদ রসম হল বিনা অপরাগতায় মসজিদে জানাযা পড়া। শরী‘আতের দৃষ্টিতে বাইরে জানাযা পড়ার সুযোগ থাকাবস্থায় মসজিদে জানাযা পড়া মাকরুহে তাহরীমী। (রদ্দুল মুহতার: ২/২২৪, আল বাহরুর রায়েক: ২/৩২৭, নসবুর রায়া: ২/২৭)
২০. স্বাভাবিকভাবে জানাযা তৈরী হয়ে যাওয়ার পর ওয়াক্তিয়া নামাযের সময় হয়ে গেলে যদিও জানাযার নামায ফরয নামাযের পরে সুন্নাতের আগেই পড়া উচিত। কিন্তু বর্তমান যামানায় ফরযের পর সুন্নাত পড়ে জানাযা পড়বে। কারণ মানুষের নিকট সুন্নাতের গুরুত্ব না থাকায় একবার মসজিদ থেকে জানাযার জন্য বের হলে আর সুন্নাত পড়ার খেয়াল থাকে না। (দুররে মুখতার: ২/১৬৭, ইমদাদুল মুফতীন: ৭৩৭)
দাফন পরবর্তী বর্জনীয় কাজ
১. জন্ম বার্ষিকী, মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা ইহুদী, খ্রিষ্টান ও হিন্দুদের সংস্কৃতি। দীনী ইলম না থাকার দরুন এসব বিদ‘আত ও বদ রসম মুসলমানরা ভাল কাজ মনে করে চালু করে দিয়েছে। এগুলো মারাত্মক গুনাহের কাজ। এ ধরনের গুনাহ থেকে অনেকের তাওবাও নসীব হয় না। সুতরাং এগুলো অবশ্যই ত্যাগ করা কর্তব্য। (বুখারী শরীফ: হা: নং ৫৮৯২, মুসলিম শরীফ: হা: নং ২৫৯)
২. সওয়াব রেসানীর জন্য অনেকে তিনদিনা, সাতদিনা, ত্রিশা, চল্লিশা বা এজাতীয় রসমী অনুষ্ঠান করে। কুলখানী করে, প্রচলিত মীলাদ পড়ে।
ধুম-ধামের সাথে ধনী লোক ও আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়ায় ইত্যাদি। এগুলো ভুল, হিন্দুয়ানী তরীকা। শরী‘আতের দৃষ্টিতে খুশীর সময় দাওয়াত খাওয়ানোর নিয়ম। আর পিতা-মাতা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যু কোন খুশীর বিষয় নয়। তাই এসব দাওয়াত খাওয়ানো কুসংস্কার।(রদ্দুল মুহতার: ২/২৪০, আহকামে মায়্যিত: ২৪১, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ: ৫/৪৪৭, ফাতাওয়া রহীমিয়া: ১/৩৯৬)
৩. সাওয়াব রেসানীর আরেকটি তরীকা হচ্ছে গরীব-মিসকীনদেরকে খানা খাওয়ানো। অনেকে মাইয়্যিতের ইজমালী সম্পত্তি থেকে খানা খাওয়ায়। এক্ষেত্রে ওয়ারিশ যদি বালিগ হয় এবং সকলের পরামর্শ বা সম্মতিতে খানা খাওয়ানো হয় তাহলে শরী‘আতের দৃষ্টিতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু কোন একজন ওয়ারিশও যদি নাবালেগ বা পাগল থাকে বা কেউ এতে অসম্মত থাকে তাহলে এরূপ করা জায়িয হবে না। এবং ঐ খানা খাওয়াও নাজায়িয হবে। এর দ্বারা এতীমের মাল খাওয়ার গুনাহ হবে। যদিও ঐ নাবালিগ বা পাগল অনুমতি দেয়। কেননা শরী‘আতে তার অনুমতি গ্রহণযোগ্য নয়। (বাইহাকী শরীফ: ৬/১০১)
৪. অধিকাংশ ক্ষেত্রে মায়্যিতের সম্পদ বণ্টনে অনেক দেরী করা হয়, এতে বিবাহিত বোনদের এবং দূরে অবস্থানকারী ভাইদের হক নষ্ট করা হয় এবং বিশেষ করে কোন সন্তান যদি নাবালেগ হয় যাকে শরী‘আতের পরিভাষায় এতীম বলে, সেই এতীমের মাল তার মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন কর্তৃক খাওয়া হয়। এজন্যে জরুরী হল কালবিলম্ব না করে মায়্যিতের রেখে যাওয়া স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পদ তার ওয়ারিশদের মধ্যে ভাগ করে প্রত্যেককে তার দখল বুঝিয়ে দেয়া। এবং এতীমের অংশ তার অভিভাবককে বুঝিয়ে দেয়া।(সূরা নিসা:৬, মা‘আরিফুল কুরআন: ২/৩০৬)
৫. পয়সার বিনিময় কুরআন খতম করে সওয়াব রেসানী করা ভুল। এতে মায়্যিতের কোন ফায়দা হয় না এবং যে বিনিময়ের লেন-দেন করা হয় তাও নাজায়িয। সুতরাং মায়্যিতের আত্মীয়-স্বজন ও মহব্বতের লোকেরা নিজের স্থান থেকে মায়্যিতের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করে সওয়াব রেসানী করে দিবে। (রদ্দুল মুহতার: ২/২৪১, আহসানুল ফাতাওয়া: ১/২৭৫)
৬. কবর পাকা করার যে প্রথা চালু হয়েছে এটা শরী‘আতে নিষেধ। হ্যাঁ! হিফাযতের জন্য গোরস্থানের চতুঃপার্শ্বে পাকা দেয়াল তৈরী করা যায়।(তিরমিযী হা: নং ১০৫২)
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.