বুড়িগঙ্গায় ক্যাবল কার নির্মাণের পরিকল্পনা
দেশে প্রথমবারের মতো যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ‘ক্যাবল কার’ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীর উপর এ ক্যাবল কার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ক্যাবল কার হলে বুড়িগঙ্গা নদীর দুই পাশে বসবাসকারী বাসিন্দাদের যোগাযোগ দুর্ভোগ কমবে, পাশাপাশি নদীপথে পারাপারে দুর্ঘটনাও কমবে। এছাড়াও পর্যটনে গুরুত্ব বাড়বে বুড়িগঙ্গার। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কলকাতাভিত্তিক কোম্পানি কনভেয়ার ও রোপওয়ে সার্ভিসেস লিমিটেড এরই মধ্যে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
১৯ মার্চ হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি সদরঘাট পরিদর্শন করেছে ভারতের একটি প্রতিনিধি দল। ২০ মার্চ ভারতীয় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ওই প্রতিনিধি দল ‘এরিয়াল রোপওয়ে সিস্টেম’ নামে একটি ডিজিটাল উপস্থাপনা দেয়।ক্যাবল কার হলে সদরঘাট হয়ে বুড়িগঙ্গায় যাত্রী ও পণ্য পারাপারে কী ধরনের সহায়তা পাওয়া যাবে, নিরাপত্তাসহ আর কী কী বৈশিষ্ট্য থাকবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে ওই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। সেখানে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে অনেক মানুষ বসবাস করেন। তাদের দ্রুত পারাপারের প্রয়োজন হয়।তাছাড়া বুড়িগঙ্গায় যদি বিনোদনের ব্যবস্থা করা যায় সেজন্য ক্যাবল কার হলে কেমন হয় সেটা আমরা চিন্তা করছি। তার অংশ হিসেবে ভারতের প্রতিনিধি দল এসে একটা প্রেজেন্টশন দিয়েছে।দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে স্টাডি করে যদি অর্থনৈতিক ও পরিবেশগতভাবে টেকসই মনে হয় তাহলে সরকারের অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যাবল কার হলে বুড়িগঙ্গার দুই পাশের বাসিন্দারা দ্রুত ও নিরাপদে নদী পারাপার করতে পারবেন। নদীর পানি ও সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনাল পরিষ্কার থাকবে। নৌকা দিয়ে যাত্রী পারাপারে প্রায়ই লঞ্চের ধাক্কায় দুর্ঘটনা ঘটে।সেটাও বন্ধ হবে। তাই এরিয়াল রোপওয়ের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা নদীর দুটি পারকে সংযুক্ত করার প্রস্তাবটি যথাযথ মনে করছেন তারা। বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করতে ক্যাবল কার নির্মাণ করছে।বিশেষ করে পাহাড়, নদী ও যানজটপূর্ণ বিভিন্ন শহরে এ ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক দিন ধরে চালু রয়েছে। বলিভিয়ার রাজধানী লা পাজের পাহাড়ি এলাকায় গণপরিবহন হিসেবে ক্যাবল কার ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রস্তাবে দাবি করা হয়, টুইন রোপওয়ে সিস্টেমের মাধ্যমে সদরঘাটকে সিমসন ঘাট ও লালকুঠি ঘাটের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। বুড়িগঙ্গার উভয় পাশে মাল্টি কমপ্লেক্স স্টেশন নির্মাণ করে বোর্ডিং ও ডি-বোর্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে যাত্রীরা উঠানামা করতে পারবেন।প্রতিটি টার্মিনাল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ যাত্রী এ পরিসেবা পাবেন। ক্যাবল কারের যেসব বৈশিষ্ট্য থাকবে তাতে লাখ লাখ যাত্রী এ সিস্টেমের সাহায্যে বছরের পর বছর নিরাপদে চলাচল করতে পারবেন।ক্যাবল কারে যাত্রী ও পণ্য আনা-নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের নিরাপত্তা থাকবে। এটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণও সহজ। এছাড়াও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয়রা তাদের কোনো সমস্যা ছাড়াই এটি পরিচালনা করতে পারবেন। প্রস্তাবিত রোপওয়ে সিস্টেমের মধ্যে প্রয়োজনীয় অটোমেশন অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রকিবুর রহমানের সামনে ওই প্রতিনিধি দল সদরঘাট থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ওভারহেড বরাবর ‘কারভো’ নামের নগর যোগাযোগের জন্য অ-লিনিয়ার এরিয়াল রোপওয়ে সিস্টেমের নতুন ধারণা উপস্থাপন করে। বিদেশি সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, তারা একটি জরিপ প্রতিবেদন পরিচালনা করে তারপর প্রকল্পের প্রতিবেদন ও খরচ অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.