সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    ব্যক্তিগত গাড়িতে পতাকার খেয়ালখুশি মতো ব্যবহার, কেউ কেউ গাড়িতে লাগান সাইরেনও!

    ব্যক্তিগত গাড়িতে পতাকা স্ট্যান্ড

    রাজধানীতে ঘর থেকে রাস্তায় তাকালে চোখ আটকে যাবে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড (পতাকা লাগানো ছোট খুঁটি) সজ্জিত গাড়িতে। দেখা যায়, বেশকিছু প্রাইভেট কার ও জিপ গাড়ির বাঁ পাশে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড লাগানো। এসব গাড়ির কোনো কোনোটিতে আবার জাতীয় পতাকাও রয়েছে। তবে কাভার লাগানো। কিন্তু ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড কি যে কোনো গাড়িতে লাগানো যায় বা যার ইচ্ছা তিনিই এ স্ট্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন? ফ্ল্যাগ ব্যবহার করার অধিকার আছে কাদের? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খায় অনেকের মনে। কিন্তু কোনো সদুত্তর নেই সরকারি প্রশাসনের কাছে। মন চাইল আর অমনি ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড লাগিয়ে গাড়ি হাঁকাচ্ছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার গাড়িতে সাইরেন লাগিয়ে দাপিয়ে বেড়ান শহরময়। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘ফ্ল্যাগস্ট্যান্ডের যথেচ্ছ ব্যবহার অনুচিত। শুধু রাষ্ট্রের প্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের যানবাহনে এ স্ট্যান্ড থাকার নিয়ম।’

    স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের আলোকে গাড়িতে পতাকা ও স্টিকার লাগানোসংক্রান্ত একটা গাইডলাইন প্রস্তুতের জন্য ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভাও হয়েছিল। সে সভায় বেশকিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো এখনো বাক্সবন্দী। পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ফ্ল্যাগ রুলস, ১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে মন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ; বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক/কনস্যুলার, মিশনসমূহের প্রধানগণ তাদের যানবাহনে বা জলযানে পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রী এবং সমপদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ, উপমন্ত্রী এবং সমপদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ রাজধানীর বাইরে দেশের অভ্যন্তরে অথবা বিদেশে ভ্রমণকালে তাদের যানবাহনে পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যেক বিভাগ, জেলা এমনকি উপজেলা ও পৌর শহরে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রাইভেট কার ও জিপ গাড়িতে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড দেখা যায়। পৌরসভার মেয়র থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধির গাড়িতে এ স্ট্যান্ড লাগানো রয়েছে। কিন্তু তারা কোনোভাবেই স্ট্যান্ড ব্যবহারের অনুমোদনপ্রাপ্ত নন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন পদস্থ কর্মকর্তা একটি ঘটনার উল্লেখ করে বলেছেন, ‘মাস কয়েক আগে উত্তরবঙ্গের একটি পৌরসভার মেয়র তার গাড়িতে পতাকা উড়িয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভিতর দিয়ে চলে যান। কিন্তু কেউ তাকে বাধা দেয়নি। বিষয়টি বেশ আশ্চর্যজনক!’

    সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত সরকারি পরিবহন পুলের সুনির্দিষ্ট গাড়িতে পতাকা ব্যবহারের জন্য স্ট্যান্ড লাগানোর একটা অলিখিত বিধান রয়েছে। এর বাইরে জেলা শহরগুলোয় ডিসি পুলের একাধিক গাড়িতে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড লাগানো হয়। কোনো জেলায় একই দিনে একাধিক ভিআইপি উপস্থিত হলে তখন ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড-সজ্জিত এসব গাড়ি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এখন পরিবহন পুল ও ডিসি পুলের বাইরে প্রচুর গাড়িতে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারের উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত কর্মকর্তারা যারা গাড়ি পেয়েছেন তাদের প্রায় সবার গাড়িতেই ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড রয়েছে। একইভাবে পুলিশের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তার গাড়িতেও পতাকাস্ট্যান্ড লাগানো রয়েছে। এ ছাড়া সরকারের অন্যান্য বাহিনীর কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড দেখা যায়। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন স্বাধীন সংস্থার প্রধানদের গাড়িতেও ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ব্যবহার করা হয়। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের ও দাতা সংস্থার জিপ গাড়িতেও ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড দেখা যায়। মন্ত্রিপরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়েছিল। ওই বছরের ৩১ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ওই সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সংসদীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে গাড়িতে পতাকা ও স্টিকার লাগানোর বিষয়ে একটি গাইডলাইন প্রস্তুতের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণের সুপারিশ করা হয়। জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়। ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে একটি সভাও হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিভিন্ন সংস্থা/কমিশনের নিজস্ব পতাকা গাড়িতে ব্যবহারের বিষয়ে বিদ্যমান বিধিবিধান পর্যালোচনা করে একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা যেতে পারে এবং গাড়িতে স্টিকার ব্যবহার করা হলে স্টিকার প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নামসহ সুনির্দিষ্ট মেয়াদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) স্টিকারে উল্লেখ থাকতে হবে। অবৈধ ও ভুয়া স্টিকার ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু ওই সভার পর গত দুই বছরে এ বিষয়ে আর কোনো সভা হয়নি। যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সেগুলোর বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতিও নেই।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !