আতঙ্ক ছড়াচ্ছে নতুন মাদক ‘ফেন্টানিল’
চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যথানাশক এবং
চেতনানাশক হিসেবে যথেষ্ট চাহিদা থাকা এই ওষুধটি এখন বাংলাদেশেও ব্যবহার
হচ্ছে হেরোইনের বিকল্প হিসেবে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধের সহজলভ্যতার সুযোগে
ভয়ঙ্কর এই মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছেন সমাজের শিক্ষিত উচ্চবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত
পরিবারের সদস্যরা। অতিমাত্রায় অপব্যবহারের কারণে ৩০ থেকে ৩৫ টাকার ২০
মিলিগ্রামের এই ইনজেকশনটি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। মাদক কারবারিরা
ইনজেকশন হিসেবে এবং পাউডার হিসেবে ফেন্টানিল সংগ্রহ করে হেরোইনের সঙ্গে
মিশিয়ে ‘চায়না হোয়াইট’ হিসেবে সরবরাহ করছে, সম্প্রতি এমন খবরে রীতিমতো
ভাবিয়ে তুলছে খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ (ডিএনসি) আইন প্রয়োগকারী
বিভিন্ন সংস্থাকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন
আহমেদ বলেন, মিয়ানমার আমাদের বিষয়টি জানিয়েছিল। তবে
পাচারের কোনো সত্যতা আমরা খুঁজে পাইনি। ফেন্টানিলের অপব্যবহার হচ্ছে কিনা
তা আমরা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছি। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের
অপব্যবহার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ২০১৭ সালের মাদকে আসক্ত ৭২ হাজার
অপমৃত্যুর মধ্যে ফেন্টানিলের অপব্যবহারে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ হাজার ছিল। গত
বছর ট্রাম্প প্রশাসন ফেন্টানিল পাচারের কারণে কূটনীতিকভাবে চীনকে অবহিত
করে। একই সঙ্গে দ্রুততর সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভয়াবহ না হলেও ফেন্টানিলের আসক্তির হার বেড়েই চলছে
কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে।
বাংলাদেশ থেকে একটি কোম্পানি অবৈধভাবে মিয়ানমারে ফেন্টানিল পাচার করছে ২০১৮
সালে এমন একটি অভিযোগ করে মিয়ানমারের মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারকে এ বিষয়ে কোনো জবাব না দিলেও ফেন্টানিলের
অপব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর নয়াবাজারকেন্দ্রিক একটি সিন্ডিকেট মাদক
ব্যবসায়ীদের কাছে ফেন্টানিল সরবরাহ করছে। পরবর্তীতে ফেন্টানিল অল্পমাত্রার
হেরোইনের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে চায়না হোয়াইট পাউডার। এই চায়না
হোয়াইট ব্যবহার হচ্ছে ‘সিসা বারে’। অনেক সেবনকারী বিভিন্ন ওষুধের দোকান
থেকে ২০ এমএল ফেন্টানিল ইনজেকশন সংগ্রহ করে সিরিঞ্জের মাধ্যমে শরীরে
নিচ্ছে। অস্ত্রোপচারের সময় ব্যথানাশক হিসেবে বহুল ব্যবহৃত ৩০ থেকে ৩৫ টাকার
এই ইনজেকশনটি ক্ষেত্রবিশেষে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছে অসাধু
ব্যবসায়ীরা। ফেন্টানিলের ভয়াবহতা সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি
অনুষদের সাবেক ডিন ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আ ব ম ফারুক বলেন, চেতনানাশক এবং ব্যথানাশক হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার
রয়েছে ফেন্টানিলের। তবে এই ওষুধটি নেশা হিসেবে ব্যবহার করলে সাময়িক সময়ের
জন্য আনন্দে মজলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। একটা সময়
সেবনকারীর সাধারণ স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়া পাওয়া যায় না। এনজাইম
এবং হরমোন নিঃসরণ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবে এটা
নিশ্চিত। একটা সময় সেবনকারীর শ্বাসকষ্ট, কাঁশি লেগে থাকে। ক্ষুধামন্দা লেগে
থাকে। খাবার খেলেও হজম হবে না। একটা সময় কিডনিও অকেজো হয়ে পড়বে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.