নবীজী(সঃ) ছবি!
ক্লাসের ছোট ছেলে মেয়ে গুলোর হাতে একটা করে সাদা কাগজ দেয়া হয়েছে।
.
সবাই কাগজ পেয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্যে শিক্ষিকা ইসাবেলা, পুরো ক্লাসটা ঘুরে একবার দেখলেন, তারপর ধীর পায়ে সামনে এগোলেন। ব্ল্যাক বোর্ডের সামনে এসে দাঁড়িয়ে তিনি ছাত্র ছাত্রিদের উদ্দেশ্য করে বললেনঃ
"আশা করছি তোমরা সবাই গতকাল ‘প্লাস দো লা রেপুবলিক চত্বরের’ জঙ্গিবাদ বিরোধী সংহতি সমাবেশে যোগ দিয়েছিলে। আজকের ক্লাসে তাই তোমাদেরকে একটা নতুন এসাইনমেন্ট দিচ্ছি। আজকে তোমাদেরকে প্রফেট মোহাম্মাদকে আঁকতে হবে।
মনে কর, শার্লিহেবদোর আগামী সংখ্যার প্রথম পাতায় তোমাদের আঁকা প্রফেট মোহাম্মাদ এর এই ছবিটা ছাপা হবে, ঠিক আছে।"
.
ইসাবেলা এই বলে ঘড়ির দিকে তাকালেন। ছেলে মেয়েরা যার যার মত আঁকতে শুরু করেছে। শুধু শেষ বেঞ্চের কোনায় বসে থাকা ছেলেটা অপ্রস্তুতভাবে ইতি উতি তাকাচ্ছে ।
.
ইসাবেলা আড় চোখে ছেলেটিকে দেখল। তার এমন অপ্রস্তুত হয়ে যাওয়ার কারণটা ইসাবেলা জানেন, কারন ছেলেটার নাম আব্দুল্লাহ।
.
.
আব্দুল্লাহ বড় বড় চোখ করে ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু একটা বলতে চায় সে,
ইসাবেলা প্রথমে দেখেও না দেখার ভান করল। কিন্তু কিছু পরে আব্দুল্লাহ হাত তুলল।
.
নাহ আজকে জঙ্গিবাদের পক্ষে কথা বলার সুযোগ কাউকেই দেয়া হবে না। ইসাবেলা আব্দুল্লাহকে হাত নামিয়ে নেয়ার ইশারা দিলেন এবং ছবি আকা শুরু করতে বললেন।
.
.
আব্দুল্লাহ বিমর্স মুখে মাথা নিচু করে রইল। এই ভাবে কেটে গেল অনেকটা সময় , এরপর চারিপাশে একবার চোখ বুলাল সে, তারপর দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে তার পেন্সিলের নিবটা ছোয়ালো কাগজে।
.
.
ম্যাডাম ইসাবেলা এতক্ষণ গম্ভীর মুখে লক্ষ করছিলেন আব্দুল্লাহকে। এখন তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন ।
.
প্রফেট মুহাম্মাদকে নিয়ে তোমাদের গোঁড়ামিকে আজ মাটির সাথে পিষে দেব , ভাবলেন ইসাবেলা। আর ঠিক তখনই ইসাবেলার অজান্তেই তার ঠোটের কোনে ভেসে উঠলো বিদ্রূপের তীর্যক হাসি।
.
.
.
২,
ক্লাস শেষ হয়েছে অনেক আগে। জমা পড়া এসাইনমেন্ট গুলো সামনে নিয়ে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে ইসাবেলা।
.
.
আব্দুল্লাহ কি এঁকেছে সেটা দেখার কৌতহল ধরে রাখা কঠিন। তবে ইসাবেলা ঠিক করে রেখেছে , আব্দুল্লাহ যেমনই আঁকুক না কেন হাইস্ট মার্কটা তাকেই দেয়া হবে এবং ক্লাসে সবার সামনে তার এই ছবির জন্যে তাকেই পুরস্কৃত করা হবে।
.
.
কফির কাপটা সরিয়ে রেখে জমা পড়া এসাইনমেন্ট গুলোর মধ্য থেকে ম্যাডাম আব্দুল্লাহর কাগজটা বের করল। আব্দুল্লাহর জমা দেয়া কাগজটায় চোখ পরতেই ইসাবেলার ভ্রু কুচকে গেল।
.
তার কাগজে কোন ছবি নেই । আছে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা একটা চিঠি।
.
.
ইসাবেলা গম্ভীর মুখে পড়তে শুরু করল।
.
.
প্রিয় প্রফেট (সাঃ)
.
আজকে আমাদের ক্লাসটিচার আমাদেরকে আপনার ছবি আঁকতে বলেছিল। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে আপনাকে আঁকতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আঁকতে পারিনি , আমি তো আপনাকে কখনওই দেখিনি। তাই আমি আমার চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
.
জানেন ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ), তখন আমি কি দেখলাম , আমি আমার মাকে আপনার জীবনী পড়ে ব্যকুল হয়ে কাঁদতে দেখলাম। বাবাকে দেখলাম সারা রাত আল্লাহর ইবাদাত করতে। আমার বড় বোনটাকে দেখলাম রাস্তা ঘাটে শত অপমানিত হওয়ার পরও হাশি মুখে নিকাব করতে। আমার মুসলমান বুন্ধুদেরকে দেখলাম আমাকে বুকে জড়িয়ে ক্ষমা চাইতে যদিও দোষটা হয়ত আমারি ছিল। আমি আজকে এই ছবি গুলোই আঁকতে চেয়েছিলাম।
.
এই অঞ্চলের মানুষ গুলো অদ্ভুত! এরা সব কিছুই দেখতে চায়, সবকিছুই এদের চোখের সামনে রাখতে চায়।
.
তাই আমি আমার চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম, আর আমি দেখেছিলাম আপনি মুচকি হেসে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। আমাদের সবার দিকে এগিয়ে আসছেন। ইয়া রাসুলাল্লাহ পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর সব থেকে নিখুঁত আপনার সেই হাশি। আমি কি করে এত নিখুঁত এত সুন্দর হাশিটাকে এই কাগজে আঁকব ?
.
.
আমি আমার টিচারকে এগুলো সবই বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি আমাকে ক্লাসে কোণ কথা বলতে দেয় নি।
.
অবশ্য এখানে হয়ত তার কোণ দোষ নেই। সে হয়ত কখনও কাউকে না দেখে ভালো বাসতেই শেখেনি।
.
কাউকে না দেখেও যে ভালোবাসা যায় সেটা হয়ত এরা কখনও বুঝবেই না। কিন্তু আমি , আমি আপনাকে ভালোবাসি । অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি। কখনও না দেখেই ভালোবাসি।
.
.
আমি খুব ভালো ছবি আঁকতে পারি না। কিন্তু আমি লিখতে পারি। আর তাই আমি আপনার কাছে এই চিঠিটা লিখলাম ইয়া রাসুলাল্লাহ(সাঃ),
.
.
যদি আপনি আমাদের মাঝে কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক সেকেন্ড বা এক মুহুর্তের জন্যেও ফিরে আসতেন, তাহলে তারা ঠিকই বুঝতে পারত, আপনাকে আমরা কেন এতটা ভালোবাসি।
.
.
আব্দুল্লাহ।
১২ জানুয়ারি প্যারিস।
.
.
ইসাবেলা আব্দুল্লাহর লেখা চিঠিটা হাতে নিয়ে বসে আছে, আর কারও এসাইনমেন্ট আর চেক করতে ইচ্ছা করছে না। সরিয়ে রাখা কফিটাও ঠাণ্ডা হচ্ছে। হোক , ইসাবেলার কিছুই যায় আসে না।
.
.
.
.
[বিঃদ্রঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে নিয়ে তৈরি করা একটা শর্টফিল্ম চোখে পড়েছিল ফেইসবুকে। যতবার দেখেছি ততবার চোখ ভিজে গিয়েছে , কিন্তু শেয়ার করতে পারছিলাম না তাই সেই শর্ট ফিল্মটার বিষয় বস্তু নিয়েই এই গল্পটা লিখেছিলাম। সেই লেখাটা আবারও চোখে পরলো ... জানি হয়ত পুরোই ছাইপাঁশ হয়েছে... তাতে কি...
.
.
.
.
আল্লাহ্ আমাদেরকে প্রকৃত ইমান দান করুক । আল্লাহ্ এবং তার রাসুল (সাঃ) কে আমাদের জীবনের চেয়েও অধিক ভালোবাসার তৌফিক দেক... আমিন ]
Bangladeshi Taka Converter
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.