সাপের মাথার মণি আসলে কি?
সাপের মাথার মণি বলতে আমরা সবাই জানি এটা আসলে চকচকে কোনো পাথর। এই মণি নিয়ে আমাদের ভিন্ন ভিন্ন ধারণার কমতি নেই। কেউ ভাবেন মণির অনেক মূল্য তো কেউ ভেবে থাকেন অলৌলিক গুন ভরা থাকে এই মণি। কিন্তু আসলে কি? সত্যি বলতে আদৌ কি সাপের মাথায় মণি থাকে?
সাপের মাথার মণি বললেই ছোটবেলায় পড়া রূপকথার গল্প মনে যায়। স্মৃতির পর্দা জুড়ে সাপ ও সাপের মাথার ঝলমলে রত্ন। সেখান থেকে ঠিকরে বেরচ্ছে আলো। কিন্তু সুকুমার রায় তাঁর ‘হযবরল’-তে লিখে গিয়েছেন— 'মানুষের বয়স হলে এমন হোঁৎকা হয়ে যায়, কিছুতেই কোনও কথা বিশ্বাস করতে চায় না।'
বয়স বাড়লেই যে কোনও সচেতন মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় বিষয়টা। সাপের মাথায় কোনও মণি থাকতে পারে না। থাকলে, চিড়িয়াখানায় বা বাড়ির আশপাশে কখনও না কখনও যে সাপেদের সঙ্গে মোলাকাত হতো, তাদের কারও না কারও মাথায় সেটা দেখা যেত। এমনকী, নিজে না দেখলেও অন্য কেউ না কেউ দেখত। তার পর বোঝা যায়, পুরো বিষয়টা একটা মিথ মাত্র।
কিন্তু তাহলে সাপের মণি যাকে বলা হয়, সেটা কী?
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আসলে এই মণি হল সাপের বিষের কঠিন রূপ। সাপের বিষ তৈরি হয় একটি গ্রন্থিতে। সেখান থেকে বিষ নির্গত হয়ে সাপের দাঁতে এসে জমা হয়। কখনও কখনও বিষ নির্গত না হতে পারলে সেই বিষ জমে কঠিন স্ফটিকাকার হয়ে যায়। সেটাই লোকের কাছে সাপের মণি!
এই জমাট বাঁধা বিষ খুব একটা কঠিন নয়। এর রং কালো। এ থেকে আলোর দ্যুতির বিচ্ছুরণ ইত্যাদি কিছু হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। পুরোটাই মিথ। প্রগাঢ় কল্পনা মাত্র। এছাড়াও অনেক ভণ্ড লোকেরা সাপের খোলসের ভিতর দিয়ে অন্য পাথর সাপের মাথার কাছে নিয়ে এসে তাকে দেখায় সাপের মণি হিসেবে।
এমনই নানা লোক ঠকানো ক্রিয়া কৌশলে আজও সাধারণ মানুষকে ঠকানো হয়। নকল রত্ন এনে দুর্মূল্য নাগমণি বলে চালানোর চেষ্টা হয়। আসলে সাপের মতো রহস্যময় সরীসৃপকে ঘিরে সেই আদিকাল থেকে নানা আশ্চর্য মিথ্যা গড়ে উঠেছে। নাগমণি তার মধ্যে হয়তো সবথেকে আশ্চর্য ও রহস্যময় মিথ্যা।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.