সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    খুন্তির ছ্যাঁকায় কালো দাগ পড়ে গেছে ডালিয়ার শরীরে!

    ডালিয়া-গৃহকর্ত্রী সেলিনা বেগম

    ডালিয়ার শরীরের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে খুন্তির ছ্যাঁকার জখম নেই। অনেক দিনের পুরনো জখমের স্থানগুলোতে পচন ধরে গেছে। আবার কোনো কোনো স্থান ফুলে কালো হয়ে টিউমারের মতো হয়ে আছে।এ ছাড়া হাত-পা, বুক ও পিঠে খুন্তির ছ্যাঁকায় বসন্ত রোগের মতো কালো দাগ পড়ে গেছে। কারণে-অকারণে গৃহপরিচারিকা ডালিয়াকে প্রায় ১৫ মাস সর্বাঙ্গে নির্যাতন করা হয়।

    এ সব অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার দুপুরে ফতুল্লার দেলপাড়া পেয়ারাবাগান এলাকার একটি ৫তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে ডালিয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করে পুলিশ।এ সময় ওই বাড়ির গৃহকর্ত্রী সেলিনা বেগমকে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত সেলিনা বেগম পেয়ারাবাগান এলাকার সৌদি আরব প্রবাসী মো. বাবু মিয়ার স্ত্রী।

    অপরদিকে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী ডালিয়া চাঁদপুরের ছেঙ্গারচর কলাকান্দা ইউনিয়নের শানিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা জামাল উদ্দিনের মেয়ে।এলাকাবাসী জানান, পেয়ারাবাগান এলাকায় সৌদি প্রবাসী বাবু মিয়ার নিজস্ব ৫তলা বাড়ি। এ বাড়িতে বাবুর স্ত্রী সেলিনা দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান নিয়ে দ্বিতীয় তলায় একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। প্রায় দুই বছর আগে গৃহপরিচারিকা ডালিয়াকে তার গ্রামের বাড়ি থেকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে সেলিনা তাদের বাসায় নিয়ে আসেন।

    এরপর কারণে-অকারণে গরম খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন করে। ওই সময় চিৎকার শুনে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে সেলিনার ফ্ল্যাট থেকে ডালিয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর স্থানীয়ভাবে আপোষ মীমাংসা করে ডালিয়াকে তার বাবার হাতে তুলে দেয়।

    পরে ৬ মাস না যেতেই সেলিনা আবারও চাঁদপুর গিয়ে ৪ হাজার টাকা বেতন, ভালো খাবার দেয়াসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে ডালিয়াকে নিয়ে আসে তাদের বাসায়। এরপর আবারও পূর্বের মতোই গরম খুন্তি দিয়ে ডালিয়ার শরীরে ছ্যাঁকা দেয়া শুরু করে সেলিনা।

    ফ্ল্যাটের দরজা জানালা বন্ধ করে প্রায় ১৫ মাস এভাবে ডালিয়াকে নির্যাতন করে সেলিনা। এলাকাবাসী প্রায় সময় ডালিয়ার চিৎকার শুনলেও উশৃঙ্খল সেলিনার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি। অবশেষে এলাকাবাসী থানায় ফোন করে পুলিশকে জানান।

    ডালিয়ার বাবা জামাল উদ্দিন জানান, তার তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে ডালিয়া তৃতীয়। দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ডালিয়া আর ছোট এক ছেলে রয়েছে। তার স্ত্রী লাইলি বেগম মানসিক রোগী। সে নিজেও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে ঘরেই বসে থাকেন। ভিজিডি কার্ডের চাল দিয়ে কোনোমতে সংসার চালান।

    নির্যাতনের ভুল শিকার করে মাফ চেয়ে ৪ হাজার টাকা বেতন ভালো খাবার ও পোশাক দেয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে ডালিয়াকে নিয়ে আসে সেলিনা। প্রায় ১৫ মাস আগে ডালিয়াকে নিয়ে এসে এভাবে নির্যাতন করলেও এ পর্যন্ত এক টাকাও বেতন দেয়নি। বেতন চাইলেই সেলিনা গালাগাল করত।

    পুলিশের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে থানায় এসে দেখি ডালিয়ার শরীরের কোনো স্থান নেই যেখানে খুন্তির ছ্যাঁকা না দেয়া হয়েছে। আমি এ নির্যাতনের বিচার চাই।

    ডালিয়া জানান, একটি কাজের হুকুম দিয়ে মুহুর্তে আরেকটি কাজের হুকুম দিতেন সেলিনা। তা দ্রুত না করতে পারলেই চুলোয় খুন্তি গরম দিয়ে আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে শরীরে চাপ দিয়ে ধরে রাখতেন। দেহ থেকে আত্মাটা বের হয়ে যেতে চাইলেও সেলিনা আমাকে চিৎকার করতে দিত না। সারাটা রাত জ্বরে চিৎকার করলেও একটু ওষুধ এনে দিত না। উল্টো সকালে ঘুম থেকে কানে ধরে টেনে উঠাত থাল-ভাসন ধুতে।

    ফতুল্লা মডেল থানার এসআই ফজলুল হক জানান, এলাকাবাসীর দেয়া সংবাদে ডালিয়াকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং বাড়ির গৃহকর্ত্রী সেলিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, এ ঘটনায় ডালিয়ার বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেছেন।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !