যেসব কারণে ইসরাইলকে চিকিৎসাসামগ্রী দিচ্ছে তুরস্ক!
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে ইসরাইলে চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করতে যাচ্ছে তুরস্ক। যার মধ্যে রয়েছে, ফেস মাস্ক, সার্জিক্যাল গ্লোভস ও সুরক্ষা পোশাক। এই ছোঁয়াচে ভাইরাস প্রতিরোধে সম্মুখসারিতে কাজ করা সেনাদের জন্য চীন থেকে সম্প্রতি লাখ খানেক মাস্ক পেয়েছে ইসরাইল। তুরস্কের ইনসিরলিক ঘাঁটি থেকে কার্গোভর্তি চিকিৎসাসামগ্রী ইসরাইলি বিমান এসে নিয়ে যাবে।
বিনিময়ে, ব্লুমবার্গের খবর অনুসারে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে তুরস্ককে সবুজ সংকেত দিতে যাচ্ছে ইসরাইল।
২০১০ সালের মাভি মারমারা সংকটের পর দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। তখন তুরস্কের মালিকানাধীন একটি জাহাজ বহর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছাতে গেলে ইসরাইলি কমান্ডোদের অভিযানে ১০ ত্রাণকর্মী নিহত হন। এই হামলার পর তখনকার তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান বলেন, এই রক্তাক্ত নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরাইলকে শাস্তি পেতে হবে। ২০১৩ সালের মার্চে মার্কিন মধ্যস্থতায় দেশ দুটির প্রধানমন্ত্রীরা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেন। এতে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সাবেক কমান্ডারদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া ইসরাইলি হামলায় হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আয়োজন করা হয়।
তুরস্কের এই সংহতি উদ্যোগকে ‘করোনা-কূটনীতি’ আখ্যায়িত করে ওয়ারসোভিত্তিক পররাষ্ট্র বিষয়ক পোলিস ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক ক্যারোল ওয়াসিলোস্কি বলেন, মানবিক সহায়তার মাধ্যমে তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে এটি কৌতূহলী উদ্যোগ। কিন্তু এতে গত এক দশকে দুই দেশের বিরোধ মিটবে বলে আমি মনে করছি না। ‘যখন এটি ফিলিস্তিনি সংকট হিসেবে সামনে আসে, তখন ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ খুবই সজাগ হয়ে ওঠে যে যদি ফিলিস্তিনে ভাইরাসটি ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে গাজা উপত্যকায়, তখন তা ইসরাইলের জন্য কঠিন প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।’
ক্যারোল ওয়াসিলোস্কির মতে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে টার্কিশ সহায়তায় ইসরাইলি সম্মতি কেবল ‘বাস্তবতার’ কারণেই এসেছে। বিশ্বে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সবচেয়ে জোরালো সমর্থনকারী দেশগুলোর মধ্যে তুরস্ক অন্যতম। কাজেই সেখানে তুর্কিরা সহায়তা দেবে, এটাই স্বাভাবিক। মানবিক সহায়তার মধ্য দিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে তুরস্কের প্রত্যাশাকে একেবারে নাকচ করে দিচ্ছেন না ওয়াসিলোস্কি।
তুর্কি সহায়তায় মানবিক দিক যেমন রয়েছে, তেমনি পররাষ্ট্রনীতিগত উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টাও আছে। গত ডিসেম্বরে ইসরাইলি সরকারি সম্প্রচার কর্পোরেশন (কেএএন) দাবি করেছে, তুরস্ক হয়ে ইসরাইলি সরবরাহ থেকে ইউরোপ মহাদেশে একটি গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের প্রস্তাব নিয়ে আংকারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসতে প্রস্তুত ইসরাইলিরা। তবে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চয়তার কথা জানায়নি আংকারা। ক্যারোল ওয়াসিলোস্কির মতে, এমন কোনো আলোচনায় সায় দিতে তুরস্কের সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা অনিচ্ছুক। ভোটাররা সম্ভবত তাদের গ্রহণ করবে না।
তুর্কি-ইসরাইলি সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ আংকারার জন্য বড় বিজয় হবে। বিশেষ করে যখন পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় সম্পদের বিষয়টি সামনে চলে আসে। ইসরাইলি উপকূলে লেভিয়াথান ও তামার গ্যাসক্ষেত্রে ৮০০ বিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে।
তেল-আবিবের ইন্সটিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো গাল্লিয়া লিন্ডেনস্ট্রস বলেন, যদিও এক কঠিন সময়ে ইসরাইলের প্রতি উদারতা দেখিয়েছে তুরস্ক, কিন্তু আমি মনে করি, সম্পর্ক মেরামতে এটিই যথেষ্ট হবে না। তিনি বলেন, এটা হচ্ছে এক ধরনের ইসরাইলকে সহায়তার পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানের একটি উপায়।
ইসরাইলি গণমাধ্যমে তুরস্কের এই উদারতার বিষয়টি ভালোই উঠে এসেছে। কিন্তু ইসরাইলি জনগণের চোখে তুরস্কের ভাবমর্যাদার বাড়াতে এটি একটি ছোট্ট পদক্ষেপ হতে পারে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে, সম্প্রতি তুরস্ক থেকে স্টিল আমদানি বাড়িয়েছে ইসরাইল। গত বছর থেকে এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
ইসরাইলি রাজনীতির কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইহুদিবিরোধিতা রয়েছে। মার্চের শুরুতে এক বক্তৃতায় কোভিড-১৯ মহামারীর জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছেন তুর্কি ইসলামপন্থী রাফেহ পার্টির প্রধান ফাতিহ আরবাকান। তিনি বলেন, এই ভাইরাসে ইহুদিবাদী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য হাসিল হবে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা রয়েছে। ইহুদিবাদ হচ্ছে পাঁচ হাজার বছর বয়সী ব্যাকটেরিয়া, যাতে নিরপরাধ মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.